শেরপুর উপজেলা

শেরপুর উপজেলার কেল্লাপোশী এলাকায় রোববার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ‘জামাই মেলা’

শেরপুর উপজেলার কেল্লাপোশী এলাকায় রোববার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ‘জামাই মেলা’। কিন্তু এখন আর আগের মতো নেই মেলার জৌলুস। তিন দিনব্যাপী মেলার অনুমতি থাকলেও মেলা চলে প্রায় ৫ দিন।

১৫৫৬ সাল থেকে এই মেলা জমতে শুরু করে। মেলা সম্পর্কে জানা যায়, বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের এক ঔরসজাত এবং এক পালক পুত্র ছিল। ঔরসজাত পুত্রের নাম ছিল গাজী মিয়া আর দত্তক পুত্রের নাম কালু মিয়া। গাজী মিয়া দেখতে খুবই সুদর্শন ছিলেন। তারা রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে ফকির সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মণ নগরে আসেন। সেখানে ব্রাহ্মণ রাজ মুকুট রাজার একমাত্র কন্যা চম্পাবতী গাজীকে দেখে মুগ্ধ হন। একপর্যায়ে তারা দু’জন দু’জনকে ভালোবেসে ফেলেন। পালিত ভাই কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার নিকট যান। মুকুট রাজা ফকির বেশি যুবকের এরূপ স্পর্ধা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বন্দি করেন। এতে গাজী মিয়া দারুণ আঘাত পান। তিনি মুকুট রাজার নিকট থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য কেল্লাপোশী নামক একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। পরে রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করে ভাইকে উদ্ধার এবং তার কন্যাকে বিয়ে করেন। আর তিথি অনুযায়ী ওই দিনটি ছিল জ্যেষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে কেল্লাপোশী দুর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব চলে এবং সেখানে মাজার গড়ে তোলা হয়। মেলা চলাকালে সেখানে ভক্তরা আসর বসায়। ওই দিনগুলোকে অম্লান করে রাখতে প্রতি বছর জ্যেষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার থেকে তিন দিনব্যাপী মেলা বসে। আর এই মেলা উপলক্ষে এলাকাবাসী নতুন জামাইকে ঘরে এনে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। এছাড়া নিকট আত্মীয়স্বজনের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।

মঙ্গলবার (২৯ মে) বেলা ২টায় মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি বছরের তুলনায় এবার মেলায় দোকানপাট ও আয়োজন এবং লোক সমাগম অনেক কম। মেলার ঐতিহ্য ঘোড়ার গাড়ি ‘টমটম, নানা ধরনের মিষ্টি, বড় মাছ, শিশুতোষ খেলনা, কসমেটিকস, মোটরসাইকেল খেলা, নানা ধরনের মসলা, মৌসুমী ফলের পসরা, নানা ধরনের ঘুড়ি ও কাঠের ফার্নিচারের দোকান। মেলার ঐতিহ্য মোতাবেক এলাকার আশেপাশের গ্রামের মানুষেরা নতুন জামাইকে দাওয়াত দেন এবং মেলার পুরবী হাতে দেন। মেলায় গিয়ে জামাই সাধ্যমতো বড় মাছ ও মিষ্টি কিনে শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন।

এ বছর পবিত্র মাহে রমজানের কারণে মেলায় ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি অনেক কম। প্রতি বছর মেলায় লাখ লাখ লোকের সমাগম হলেও দিন দিন মেলার পরিসর ছোট হচ্ছে। শেরপুর থানার এএসআই মিলন হোসেন জানান, মেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

 

সাইফুল বারী ডাবলু

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button