মহাস্থানগড়ে মিলল ১৪০০ বছর আগের পাল শাসনামলের নিদর্শন
বগুড়ার মহাস্থানগড় খননে বেরিয়ে এসেছে ১৪০০ বছর আগের প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন। পাল শাসনামলের এই স্থাপত্য নিদর্শন উন্মোচনের পর তা দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।
ইতিপূর্বে পাশাপাশি তিনটি বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান পাওয়ার পর মহাস্থানগড়ের বৈরাগীর ভিটায় খনন করে এসব মন্দিরের সম্প্রসারিত স্থাপত্য নিদর্শন পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে সন্ধান মিলেছে বেশকিছু প্রত্নবস্তুর। সেখান থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী নিশ্চিত করেছে মহাস্থানগড় প্রাচীন যুগেও ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিতে ছিল সমৃদ্ধ। প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান মহাস্থানগড়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের খননকালে এসব নিদর্শনের সন্ধান মেলে। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে খনন ও সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে মহাস্থানগড়ে। চলবে চলতি মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত।
মহাস্থানগড় ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে খনন করা হয়েছে। খননের বিভিন্ন পর্যায়ে এখানে বেরিয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রত্ননিদর্শন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে খননকাজ পরিচালনা করে আসছে। পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খননকাজ পরিচালনা করছে।
আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন এই দুর্গনগরীর মাঝামাঝি এলাকা লইয়েরকুড়ি বা ফ্রান্স মাঠ নামে পরিচিত ভিটার উত্তর-পশ্চিম কোণে এবং মহাস্থান জাদুঘর থেকে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত বৈরাগীর ভিটা। এই ভিটায় নিজস্ব অর্থায়নে তৃতীয় দফায় শুরু হয়েছে খনন ও সংস্কারকাজ। বৈরাগীর ভিটায় গত তিন অর্থবছরে খননের পর প্রায় এক হাজার ৪০০ বছর আগে নির্মিত তিনটি বৌদ্ধ মন্দিরের নিদর্শন মেলে। এবার সেখানে মন্দিরগুলোর পূর্ণ অবয়ব নিশ্চিত করতে খননের পাশাপাশি চলছে সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ।
খননকাজ চলাকালে মহাস্থানগড় পরিদর্শনে আসা দেশীয় পর্যটকরা ভিড় করছেন খনন এলাকায়। তারা মাটির নিচে সুপ্ত এই নগরীর ইতিহাস ও প্রাচীনত্ব উন্মোচনের দৃশ্য দেখে যেমন বিমোহিত হচ্ছেন, তেমনি মহাস্থানগড়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধনেরও দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা।
মহাস্থানগড় জাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান এসএম হাসানাত বিন ইসলাম বলেন, এবার খননকালে সেখানে স্থাপত্য শৈলীর পাশাপাশি বেশকিছু প্রত্নবস্তুরও সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় উজ্জ্বল চকচকে কালো মৃৎপাত্র, বিভিন্ন যুগের মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, তৈলপাত্র, পোড়া মাটির বাটি ও পোড়া মাটির গুটিকা।
খনন দলের সদস্য ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের শাহজাদপুর রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাস্টডিয়ান মোহাম্মদ যায়েদ বলেন, মহাস্থানগড়ের প্রাচীনত্ব বিশ্ব স্বীকৃত। সেই স্বীকৃতির নিদর্শনই প্রতি বছরের খননকাজে উন্মোচিত হচ্ছে। সেখানে যেসব প্রত্নবস্তুর নমুনা মিলেছে তা প্রমাণ করে খ্রিষ্টের জন্মের আগেও এই জনপদ ছিল সমৃদ্ধ। বৈরাগীর ভিটায় ইতিপূর্বে খননে যে তিনটি বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান মিলেছে সেসব সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেই হিসেবে এই স্থাপত্য নিদর্শনগুলো প্রায় এক হাজার ৪০০ বছরের প্রাচীন। এই প্রাচীন নির্দশনগুলোকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করতে হলে তার সম্প্রসারিত অংশও বের করা প্রয়োজন। সে কারণে এবার বৈরাগীর ভিটায় খনন ও সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। সংস্কারকাজ শেষ হলেই বৈরাগীর ভিটা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।
লিমন বাসার