বগুড়ার ইতিহাস

বগুড়ার বনজঙ্গলেও একসময় বাঘ ছিল



এক সময় বগুড়াসহ উত্তরজনপদের বনজঙ্গলেও বাঘের বসবাস ছিল। রাত হলে বাঘের ভয় ছিল। গভীর জঙ্গলে একা একা কেউ যেতে পরতো না। মানুষের সাথে বাঘের শক্রতাও ছিল। আস্তে আস্তে মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে কমতে থাকে জঙ্গলের পরিমাণ। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সেই জঙ্গল কমতে কমতে নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। হারিয়ে যায় বন্যপ্রাণী। বাঘের অস্তিত্ব আরো আগেই বিলীন হয়ে যায় এই জনপদ থেকে।
বছর দশেক আগেও এই এলাকায় যতটুকু জঙ্গল ছিল তাতে অন্তত শিয়াল, বেজি, বুনো বিড়াল দেখা যেত। এখন এসব প্রাণীর দেখাও মেলে না। মেলে না জঙ্গলেরও অস্তিত্ব। এসব প্রাণী পরিবেশর ভারসাম্য রক্ষার জন্য অতীব জরুরি ছিল। এসব প্রাণীর দেখা মেলে না বলেই আজ পরিবেশ বিভিন্নভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, মানুষ বনজঙ্গল ধ্বংস করে নিজেদের বিপদ নিজেরাই সৃষ্টি করেছে।
বিশেষ করে একসময় বগুড়া জেলার শেরপুর, মহাস্থান এবং সারিয়াকান্দিতে গভীর বনজঙ্গল ছিল। জানা যায়, সে সময় নাকেশ্বরী, গো-বাঘা, কালমুখা বাঘা, পান্তাপাড়া বাঘ, সেলা বাঘ, চিতা বাঘ, কেঁদোবাঘ, বিভিন্ন প্রজাতির বাঘ বসবাস করতো (শ্রী কালী কমল সার্ব্বভৌমি, ১৮৬১)। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত জেলায় অনেক প্রজাতির বাঘের আবাস থাকলেও পরবর্তীতে মানুষের আবাসস্থল, বন জঙ্গল কেটে কৃষি চাষাবাদ এবং শিল্পায়নজনিত কারণে বনজঙ্গলগুলো উজার হতে থাকে। বর্তমানে জেলায় আর কোনো বাঘ পাওয়া যায় না।
প্রভাসচন্দ্র সেন রচিত ‘বগুড়ার ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, শেরপুরের পশ্চিমে বাগড়া গ্রামে পূর্বে বাঘের মস্ত বড় আড্ডাসহ আবাসস্থল ছিল। এ ছাড়া মহাস্থানের ‘গড় অঞ্চলে’ প্রচুর বাঘের উৎপাত ছিল। জানা যায়, ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে এক দল শিকারী কালেক্টর সাহেবের নিকট ২৫৭টি বাঘ ও চিতা বাঘের মাথা আনলে শিকারী দল ৭০০ রুপি পুরস্কার লাভ করে (প্রভাস চন্দ্র সেন, ১৯২৯/২০০০এবং জেলা গেজেটিয়ার ১৯৮৯)। মূলত ওই সময় থেকেই বাঘের এবং বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায়।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button