বগুড়ার ইতিহাস

বগুড়ার মরহুম খাঁন বাহাদুর কোরবান উল্লাহ এর জীবনী


মরহুম খাঁন বাহাদুর কোরবান উল্লাহ সাহেব ২০ ফেব্রুয়ারি ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জেলার সদর উপজেলাধীন কাটনার পাড়া মহল্লায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।


তাহাঁর পিতা মরহুম কুদরত উল্লাহ তালুকদার (এখানে উল্লেখ্য যে, বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া থানায় কাঠাইলে তাহাঁদের তালুক ছিল) এবং মাতা মরহুমা তমিজুন্নেছা খাতুন গৃহিনী ছিলেন। তাহাঁর তিনজন মাতার গর্ভে জন্মগ্রহণকারী ৫ জন পুত্র এবং ৫ জন কন্যা সন্তানের মধ্য তাহাঁর অবস্থান দ্বিতীয়। তিনি মহাস্থান সন্নিকট তেলিহারা গ্রামের প্রসিদ্ধ খাঁ পরিবারের কন্যা হাসনে বানুর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।


শিক্ষাজীবনঃমরহুম খাঁন বাহাদুর কোরবান উল্লাহ সাহেব ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সহিত এন্ট্রান্স পাশ করেন। এন্ট্রান্স পাশ করার পর উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সহিত এফ.এ পাশ করেন। তিনি ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন।


কর্মজীবনঃস্নাতক ডিগ্রী লাভ করিবার পর তিনি বগুড়ায় ফিরে আসেন এবং বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলায় সাব-রেজিষ্টার হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। সরকারি চাকুরির সুবাদে তিনি বগুড়া সদর, রংপুর, দিনাজপুর এবং পরবর্তী ময়মনসিংহে বদলী হন। তিনি, তাহাঁর সততা, কর্মদক্ষতার কারনে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পদোন্নতি সরুপ ডি.এস.আর এবং ডি.আর পদ লাভ করেন এবং কলকাতায় বদলী হন। তিনি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিট্রেশন (আইজিআর) পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তৎকালীন সময়ে তিনি একমাত্র বাঙলী মুসলমান হিসেবে এই খ্যাতি (আইজিআর) অর্জন করেন। উক্ত চাকুরীতে দক্ষতার সাথে কর্মসম্পাদনের জন্য খাঁন সাহেব এবং পরবর্তী সময়ে খাঁন বাহাদুর উপাধিতে ভুষিত হন। তিনি ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিট্রেশন (আইজিআর) পদ হতে অবসর গ্রহণ ।
সমাজসেবাঃমরহুম খাঁন বাহাদুর কোরবান উল্লাহ সাহেবের কর্মময় জীবনে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে জড়িত ছিলেন। সরকারি চাকুরীর সুবাদে তিনি যেখানেই অবস্থান করতেন সেখানেই তিনি ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারে ভুমিকা রেখেছেন। তৎকালীন সময়ে বগুড়া ইংরেজি শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল। তিনি পিছিয়ে থাকা জনগোষ্টীর জন্য ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। সেই লক্ষ্যে ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে করোনেশন ইন্সটিটিউশন স্কুল প্রতিষ্ঠায় তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠায় সিংহভাগ জমি দান করেন। তাছাড়া বগুড়া আজিজুল হক কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি কলেজ প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন সময়ে ২০০০/-টাকা অনুদান হিসেবে কলেজ ফান্ডে প্রদান করেন। তিনি কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা পরিষদ এবং কলেজ পরিচালনা পরিষদ-এর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। (এখানে উল্লেখ্য যে বগুড়া নবাব পরিবারের সুযোগ্য সন্তান, অবিভক্ত পাকিস্থানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ আলী সাহেব কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা পরিষদ এবং কলেজ পরিচালনা পরিষদ-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।)


মরহুম খাঁন বাহাদুর কোরবান উল্লাহ সাহেব ১২ ডিসেম্বর ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া শহরের কাটনার পাড়াস্থ নিজ বাসভবনে পরলোক গমন করেন। তাহাকে নামাজগড় কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
মরহুম খাঁন বাহাদুর কোরবান উল্লাহ সাহেবের একমাত্র কন্যা মরহুমা জামিলা খাতুন তিনি রত্নাগর্ভা ছিলেন। স্বামী মরহুম ইব্রাহীম উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি (মরহুম এ.এফ.এম এহসানুল কবির, সাবেক সংস্থাপন সচিব) এবং রত্নাগর্ভা মরহুমা হাসিনা খাতুন এর মাতা ছিলেন। মরহুমা হাসিনা খাতুন তিনিও রত্নাগর্ভা ছিলেন। তিনি (মহান মুক্তিযুদ্ধের ৬নং সেক্টর কমান্ডার, সাবেক বিমানবাহিনীর প্রধান, এয়ার ভাইস মার্শাল খাদেমুল বাশার, বীরউত্তম )-এর মাতা ছিলেন।


জৈষ্ঠ্য পুত্র মরহুম কামরুল হুদা (তৎকালীন সেনাবাহিনীর কমিশন প্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করেন। বৃটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট অফিসার হিসাবে ২য় বিশ্বযুদ্ধের বার্মা ফ্রন্ট-এ যুদ্ধ করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত ভাগের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে অবসর গ্রহন করেন। তিনি বগুড়ার একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ছিলেন। সমাজ সেবার জন্য তিনি বাংলার “গভর্নর” পদক লাভ করেন। তিনি ৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে, ৭১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।


কনিষ্ঠ পুত্র মরহুম নাজমুল হুদা (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আরবি সাহিত্যে সন্মান ডিগ্রী লাভ করেন। বিভিন্ন ভাষা সাহিত্যে তাঁর পান্ডিত্য ছিল। তিনি তাহাঁর পিতার ন্যায় সাব-রেজিষ্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বগুড়া, রংপুর, পাবনা, দিনাজপুর এবং সর্বশেষ ময়মনসিংহ হতে ডিএসআর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে, ৮৯ বছর বয়সে বগুড়া কাটনার নিজ বাস গৃহে বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।)


মরহুম খাঁন বাহাদুর কোরবান উল্লাহ সাহেবের পৌত্রগনও স্ব-স্ব অবস্থানে খ্যাতিমান ছিলেন। মরহুম এ.এফ.এম এহসানুল কবির (বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সংস্থাপন সচিব) এমদাদুল কবির (বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী), মরহুম বদরুল হুদা (উর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তা) ছিলেন এবং জনাব মোঃ শামসুল হুদা বিশিষ্ট টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব (প্রধান উপদেষ্টা, এটিএন বাংলা টেলিভিশন)।


তথ্য সংগ্রহেঃ মোঃ গোলাম জাকারিয়া কনকএডমিন বগুড়ার ইতিকাহিনী।


কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ জনাব শামসুল হুদা সাহেব।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button