যে কারণে এবার ঈদে সড়কপথে বাড়বে চাপ,বাড়বে ভোগান্তি
আসন্ন ঈদেও ঝামেলাহীন ঘরে ফেরা হচ্ছে না। তার অন্যতম কারণ রেল ও সড়ক পথের বেহাল দশা। বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙে গেছে। বন্যার তোড়ে কোথাও কোথাও রেল লাইনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেগুলো দিয়ে কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে রেল চলাচল করছে বর্তমানে।
ঈদের আগে ওইসব পথ সম্পূর্ণ মেরামত করার কোন সম্ভাবনাও নেই। তার কারণ বন্যা পুরোপুরি না চলে গেলে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে পারবে না কর্তৃপক্ষ।
তাই এবার ঈদযাত্রা স্বাভাবিক গতি হারাবে রেলপথে। বাড়বে ভোগান্তি। তবে চাপ পড়বে সড়ক পথে। এমনটাই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা।
গাইবান্ধার বদিয়াখালী রেলপথ ধসে গেছে এবারের বন্যায়। লালমনিরহাটের ট্রেন চলাচল এখনও বিচ্ছিন্ন। অন্যপথের রেললাইন ব্যবহার করে দিনাজপুর হয়ে রংপুর, একতা, লালমনির হাট, এক্সপ্রেস চলাচল করছে। বন্যায় সড়কধসের কারণে সান্তাহাট থেকে বগুড়া হয়ে বোনারপাড়া পর্যন্ত ট্রেন আসা-যাওয়া করছে।
সরাসরি গাইবান্ধা কাউনিয়া হয়ে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামের ট্রেন চলাচল করলেও সময় লাগছে ৬ ঘণ্টার স্থলে ১০ ঘণ্টা। এ কারণে এবার ঈদে উত্তরাঞ্চলের ঘরমুখী মানুয়ের চাপ বাড়বে সড়কপথে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিম-পূর্ব অঞ্চলের অবস্থা একই হওয়ার কারণে সিলেট, চট্টগ্রামে রেলের চেয়ে সড়কে চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সড়ক বিভাগ জানায়, নানা কারণে ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটার সড়ক এমনিতেই বেহাল দশা।তারপর ভারী বর্ষা ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এসব সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে এই জোড়াতালির সড়ক ঘরমুখী মানুষকে কতটা স্বস্তি দিতে পারবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
বন্যায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও জামালপুরে অনেক আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়ক বানের পানিতে ভেসে গেছে। কিছু সড়ক এখনও পানির নিচে। পার্বত্য জেলা বান্দরবানে জাতীয় মহাসড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের তথ্যমতে, বন্যায় দেশের ১৮টি জেলার ৪৫০ কিলোমিটার সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সপ্তাহ দু’য়েক আগে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঈদের এক সপ্তাহ আগেই ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করে প্রস্তত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
সওজ সূত্র বলছে, নতুন নির্মাণ করা সড়কের বয়সসীমা গড়ে ২০ বছর। নতুন সড়কে পাঁচ বছর সেভাবে হাত দেয়ারই কথা নয়। পুরনো সড়ক পুনঃনির্মাণ হলে ১০ বছর টিকে থাকার কথা। আর বড় ধরনের মেরামতের পর সড়ক তিন থেকে পাঁচ বছর টিকে থাকে।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সওজের অধীনে থাকা সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, মেরামত প্রশস্তকরণে ৫৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ সময় ৫ হাজার ১৭৯ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত মজবুত করা হয়েছে। ১৪ হাজার ৯১৯ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন মেরামত করা হয়েছে।
এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পর তা চালু হয়েছে দুই বছর আগে। তবে এখনই ওই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান উঁচু-নিচু হয়ে গেছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যশোর অংশ ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। একই অবস্থা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া পর্যন্ত অংশ।
সওজ এর কর্মকর্তা জানান, তিন কারণে সড়ক আশানুরূপ টিকছে না। ১. অতিরিক্ত ভারবাহী যানবাহনের চলাচল। ২. নির্মাণ ও মেরামত কাজে দীর্ঘসূত্রতা ও ৩. নিম্নমানের নির্মাণ ও মেরামত।
সওজ এর পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইংয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম দৈনিক জাগরণকে বলেন, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী না হলে ঈদের আগে সড়ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আশা করছি কোনও দুর্ভোগ হবে না। সড়ক নির্মাণ বা মেরামতের পর দ্রুত ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সড়কের বড় শত্রু অতিরিক্ত ভারবাহী যানবাহন। এ ছাড়া যানবাহন চলাচলের যে হিসাব ধরে সড়ক নির্মাণ বা মেরামত করা হয় তা দ্রুতই ছাড়িয়ে যায়। এ জন্য নির্মাণ ও মেরামতের পর সড়ক বেশি ভাঙে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান দৈনিক জাগরণকে বলেন, রেলপথের যে সব স্থান বন্যার কারণে ধসে গেছে, সেসব স্থান সচল করার জন্য কাজ চলছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে গাইবান্ধার বাদিয়াখালীসহ সব রেলপথ সচল করা হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ঈদের আগেই সব এলাকার মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দে বাড়ি ফিরতে পারে সে জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে কোনও কারণে রেল পথ স্বাভাবিক না হওয়া তাহলে সড়কপথে বেড়ে চাপ। আর তখনই নেমে আসবে ঘরেফেরা মানুষদের মহাদুর্ভোগ।