বিজনেসঃ কাস্টোমাররা যখন রেগে যায় তখন আপনি কী করবেন
“চাকরি না ব্যবসা?”―প্রশ্নটা ঘিরে অসংখ্য মানুষের ভালো লাগা আছে। যাদের ভালো লাগা আছে তারা সচরাচর উত্তর দেন―ব্যবসা। কারণ? কারণ, ব্যবসায় সম্পূর্ণ নিজের কর্তৃত্ব, বস বলে কেউ থাকবে না, অফিসে তাড়াতাড়ি যাওয়া নিয়ে কোনো টেনশন থাকবে না, কাজে ভুল হলে বকা খেতে হবে না আরও কত কী।
অনলাইন হোক বা ফিজিক্যাল স্টোরের ক্ষেত্রে হোক, এই বাক্যগুলি শুনে মনে হবে ব্যবসা করা যেন কত সহজ আর আনন্দের। আনন্দের হতে পারে অবশ্যই, কিন্তু সহজ কি?
কাস্টোমার ডিলিংয়ের কথাই যদি ভাবেন, এর মত কঠিন কাজ আর কী আছে দুনিয়াতে? দীর্ঘ সময় একজন কাস্টোমারকে ধৈর্য্য নিয়ে রিপ্লাই দেয়া বা কথা বলা, প্রোডাক্টের ছবি পাঠানো, তাকে বিশ্বাস করানো যে ছবিতে যেটা প্রোডাক্টটা দেখা যাচ্ছে তিনি অর্ডার করলে সেটাই পাবেন।
তার উপর যদি কাস্টোমার কখনো রেগে যান, তখন অবস্থা হয় আরও ভয়ানক। আমরা অনেকেই জানি না একজন পরিচিত বা কাছের মানুষ রেগে গেলে তাকে কীভাবে শান্ত করব। সেখানে কাস্টোমার একজন অপরিচিত মানুষ, তিনি কেনই বা বিশ্বাস করতে যাবেন আপনি যা বলছেন তা সত্যি।
এসব পরিস্থিতিতে আপনি কী করেন? আসলে কী করা উচিত আপনার? আপনিও রেগে যাবেন না শান্ত থেকে কাস্টোমারের রাগ সহ্য করবেন?
#১. শান্ত থাকুন
কাস্টোমার যখন রেগে গিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, আপনার দিকে থেকেও একই আচরণ করলে কোনো ফল পাওয়া যাবে না। বরং, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তাই, কাস্টোমার যত যা’ই বলুন, কষ্ট করে হলেও তার রাগের কোনো জবাব দেবেন না।
#২. ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না
মনে রাখবেন, কাস্টোমার আপনার ওপর রাগ করেননি, করেছেন আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বা আপনার ব্যবসা সংক্রান্ত অন্য কিছুর ওপর। ফলে, তিনি আপনাকে এসব বলছেন ভেবে মাথা গরম করবেন না।
#৩. আপনার শোনার দক্ষতা অ্যাপ্লাই করুন
কেউ রাগ দেখাচ্ছেন মানে তিনি চান আপনার ওপর এর প্রভাব পড়ুক, এবং আপনি লজ্জিত বা দুঃখিত কিছু একটা হোন। তিনি মনে করছেন আপনি ভুল, তিনি ঠিক। কাস্টোমারের এই মনে করা কতটুকু ঠিক বা ভুল তার বিচার করে জবাব দিতে যাবেন না। এসব ক্ষেত্রে চুপচাপ শুনে যাওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর আপনার দিক থেকে কোনো উল্টা প্রতিক্রিয়া না পেলে তার রাগও বেশিক্ষণ থাকবে না।
#৪. সহানুভূতি প্রকাশ করুন
কাস্টোমারকে মুখে বলুন যে আপনি বুঝতে পারছেন তার পরিস্থিতিটা, তার জায়গায় আপনি থাকলে আপনারও একই রকম খারাপ লাগত। তিনি রাগ করছেন অযথা বা এই পরিস্থিতি তিনি চাইলেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধা করা যেত এমন কোনো কথা বা আচরণ ভুলেও তার সামনে প্রকাশ করবেন না।
#৫. ‘সুন্দর ভাবে’ ক্ষমা চান
কাস্টোমার ভুল হলেও যদি তাকে সরি বলেন বা ক্ষমা চান, তাতে আপনি ছোট হয়ে যাবেন না। তাতে বরং দুটি জিনিস বোঝা যায়, ১. আপনি মানুষ হিসেবে ছোটখাটো জিনিসকে অনেক বড় করে দেখেন না, ২. আপনি প্রফেশনাল। তবে ক্ষমা চাইলে তা গা ছাড়া দিয়ে কোনো মতে না চেয়ে, ভদ্রভাবে, খুব বিনয়ী হয়ে ক্ষমা চান। যেন মনে হয় আপনি তার দিককার অস্বস্তিটা অনুভব করছেন। ওই পরিস্থিতিতে এটা করা হয়ত একটু কষ্টকর, আপনার ইচ্ছা করবে না, কিন্তু কৌশল হিসেবে এটা খুবই কার্যকরী।
#৬. একটা সমাধান খুঁজে বের করুন তার সামনেই
কাস্টোমারের সামনেই একটা সমাধান খুঁজে বের করুন। তাকে জিজ্ঞেস করুন এমন কি হতে পারে যে… এধরনের ভঙ্গি ব্যবহার করে সমাধানের দিকে আগান। তাতে কাস্টোমার আপনাকে আর বিরোধী পক্ষ ভাববে না। তবে সমাধান দেয়ার সময় আপনি তার বিরাট উপকার করলেন এমন ভঙ্গি করবেন না। বিনয়ের সাথে সাহায্য করুন তাকে একটা দিকে যেতে।
#৭. নিজের জন্য একটু সময় নিন
এ ধরনের পরিস্থিতি প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরি করে। এমন সময়গুলিতে সাধারণত প্রস্তুতি না থাকার কারণে মেজাজ হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকে। আমরা মেজাজ হারিয়েই ফেলি অনেক সময়, কাস্টোমারকে মুখের ওপর একটা জবাব দিয়ে দেই। কিন্তু তাতে আপনার ব্যবসারই ক্ষতি হবে, এবং দুর্নাম হবে যে আপনি কাস্টোমারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তারচেয়ে যখন এরকম পরিস্থিতি হচ্ছে আপনার ফিজিক্যাল স্টোর থেকে থাকলে কাস্টোমারকে অন্য কিছু বলে আড়ালে কোথাও গিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিন, ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এই কাজটা কয়েকবার করুন। কোথাও বসুন, বসে পানি খান। দরকার হলে মুখে পানির ঝাপটা দিন। অনেকটাই স্ট্রেস রিলিজ হবে।
আর আপনার ব্যবসা অনলাইন বেজড হলে আপনার যখন দরকার পজ নেয়ার সময় পাচ্ছেন। তবে অনলাইনেও অনেক ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলার ঘটনা দেখা যায় উদ্যোক্তাদের। ওই একই কাজ করুন। দরকার হলে অল্প সময় নিয়ে কোনো বন্ধু বা প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলুন, তারপর উত্তর দিন।
আর এই ঝামেলা শেষ হলে একটু হাঁটাহাটি করুন। ভালো লাগে করতে এমন কিছু করুন। যে কোনো ভাবে এই জিনিসের স্ট্রেস থেকে বের হয়ে আসুন।
সিটিআলো