সবাইকে মুগ্ধ করলেন বগুড়ার ‘তৌহিদ হৃদয়’
প্রেসিডেন্ট’স কাপের প্রথম ম্যাচে জিতেছে শান্ত একাদশ। মাহমুদউল্লাহ একাদশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছেন শান্তরা। তারুণ্য নির্ভর দলটির উদ্বোধনী ম্যাচের জয়ে বড় অবদান তৌহিদ হৃদয়ের।
তৌহিদ হৃদয়কে ’আগামী দিনের তারকা’ ভাবা হয় অনেক আগে থেকেই। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড তার দখলে। বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ে বড় অবদান ছিল তার।
লিস্ট ’এ’তে ১৯ বছর বয়সী তরুণের গড় ৪৫.৫৫। ২৩ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন ১টি, হাফ সেঞ্চুরি ৭টি। বিশ্বকাপ জেতার পর সবে প্রিমিয়ার লিগ খেলতে শুরু করেছিলেন, করোনার আগমন তখনই। হৃদয় সেই মার্চ থেকে ক্রিকেটের বাইরে।
৬৭ বল খেলে ২টি করে চার-ছয় মেরে করেছেন ৫২ রান। পরিস্থিতি বিচারে এই ইনিংসটির মাহত্ব অনেক। প্রেসিডেন্ট’স কাপে মাহমুদউল্লাহ একাদশের দেওয়া ১৯৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৭৯ রান তুলতেই দলের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান- সাইফ হাসান (১৭), সৌম্য সরকার (২১), মুশফিকুর রহিম (১), আফিফ হোসেন ধ্রুব (৪) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (২৮) বিদায়। তারপর স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে অপরাজিত ছিলেন কেবল হৃদয় ও ইরফান শুক্কুর।
শুক্কুরকে নিয়ে দলকে টেনেছেন হৃদয়। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের জুটি ছিল ১০৫ রানের। শুরুতে চেপে ধরা মাহমুদউল্লাহ একাদশ ম্যাচটা হেরেছে সেখানেই। শেষ অবদি অবশ্য হতাশা নিয়ে ফিরেছেন হৃদয়।
জয়ের জন্য যখন মাত্র ১৩ রান প্রয়োজন তখন আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরেছেন। অন্যপাশে ৭৮ বলে ৬ চারে ৫৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন শুক্কুর। ৪১.১ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য ১৯৭ রান তুলে ফেলে শান্ত একদশ। মাহমুদউল্লাহ একাদশের হয়ে ৪৬ রানে তিন উইকেট নিয়েছেন এবাদত হোসেন।
রবিবার (১১ অক্টোবর) বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের উদ্বোধনী ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হলো প্রেসিডেন্ট কাপ। তার আগে করোনা শহীদদের উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তারপর ২২ গজের লড়াইয়ে নেমে পড়েন উদ্বোধনী ম্যাচের দুই দলের ক্রিকেটাররা।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একাদশের মোকাবিলা করছে নাজমুল হোসেন শান্ত একাদশ। মাহমুদউল্লাহ একাদশের বিরুদ্ধে টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নাজমুল হোসেন শান্ত একাদশের অধিনায়ক শান্ত। নির্ধারিত ৫০ ওভারের আগেই ১৯৬ রানে অলআউট হয়ে যায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ একাদশ। ৪৭ দশমিক ৩ ওভার ১৯৬ রানে অল আউট হয় মাহমুদউল্লাহ একাদশ। শান্ত একাদশকে ১৯৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় মাহমুদউল্লাহর দল।
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ৩ ওভার শেষে মাহমুদউল্লাহ একাদশের সংগ্রহ করে বিনা উইকেটে ১৭ রান। ৭ বলে ৭ রানে লিটন দাস ও নাঈম শেখ ১১ বলে ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। এরপরেই শরৎ-এর অনাহুত অতিথি বৃষ্টির হানায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। আর সেটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় রিয়াদ একাদশের জন্য। বৃষ্টি শেষে খেলা আবারও মাঠে গড়ানোর প্রথম বলেই রান আউটের শিকার হয়ে ফেরেন নাঈম শেখ। এরপর উইকেটে আসেন মুমিনুল হক।
এদিকে হঠাৎ করে উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে রিয়াদ একাদশ। অন্যদিকে এই চাপের সুযোগ নিয়ে আরেক ওপেনার লিটন দাসকে তুলে নেন তাসকিন। বিসিবি’র আয়োজিত প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই অগ্নি গোলা ছুঁড়ছেন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ। সেই ধারা ধরে রাখলেন প্রেসিডেন্ট’স কাপেও। দুর্দান্ত বোলিংয়ে লিটনকে (১১) বোল্ড করে তুলে নিলেন দিনের প্রথম উইকেট। রিয়াদের দলের সংগ্রহ তখন ৪ দশমিক ৪ ওভারে ২১ রানে ২ উইকেট।
লিটনের ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই প্যাভিলিয়নের পথে হাটেন প্রস্তুতি ম্যাচে শতক হাঁকান মুমিনুল হক। আল আমিনের বলে বোল্ড হয়ে ৬ বলে শূন্য রানে ফেরেন টাইগার টেস্ট অধিনায়ক। দলীয় মাত্র ২১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে রিয়াদ একাদশ। আর তখনই উইকেটে আসেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েসকে নিয়ে গড়েন ৭৩ রানের দুর্দান্ত এক জুটি।
চতুর্থ উইকেটে ইমরুউল-রিয়াদের জুটি আশা দেখাচ্ছিল বড় সংগ্রহের। তবে স্বপ্নে বাগড়া দিলেন নাইম হাসান। ইমরুলের ৫০ বলে ৪০ রানের চাপের মুহূর্তের দুর্দান্ত ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে নাইমের বলে সাইফের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে। ইমরুল ফিরলেও অধিনায়ক রিয়াদ তুলে নেন তার অর্ধশতক। রিয়াদ ক্রিজে থাকলেও বাকিরা উইকেট আকড়ে ধরে রাখতে পারেনি। তাই তো দলীয় ১২৬ এবং ব্যক্তিগত মাত্র ১৪ রানে রান আউট হয়ে ফেরেন নুরুল হাসান সোহান।
এরপর সাব্বির রহমানকে সঙ্গে নিয়ে শান্ত একাদশের বোলারদের মোকাবিলা করছিলেন মাহমুদুল্লাহ। তবে আর বেশি সময় ক্রিজে থাকতে পারেননি রিয়াদ। ব্যক্তিগত ৫১ রানে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর বলে আফিফের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ। স্কোরবোর্ডে রিয়াদ একাদশের সে সময় সংগ্রহ ৩৫ দশমিক ১ ওভারে ১৫৯ রান। রিয়াদ ফেরার তিন বলের মাথায় সেট হয়েও মুগ্ধর কট অ্যান্ড বোল্ডে ফেরেন সাব্বির রহমান। তার আগে নামের পাশে যোগ করতে পারেন মাত্র ২১ রান।
এরপর তাসকিন আহমেদের বলে শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব (৬)। শেষ দিকে আবু হায়দার রনি ১৪ এবং রাকিবুল ইসলামের ১৫ রানে ভর করে ১৯৬ রান তোলে মাহমুদউল্লাহ একাদশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারের আগেই অবশ্য গুটিয়ে যায় তাদের ব্যাটিং ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ৪৭.৩ ওভারে থামে মাহমুদুল্লাহ একাদশের ব্যাটিং ইনিংস। বল হাতে এদিন দুর্দান্ত ছিলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। নিজের কোটার ১০ ওভারে মাত্র ৩৭ রানের বিনিময়ে নেন ২টি উইকেট। আরেক পেসার আল আমিন হোসেনও ১০ ওভারে নেন ২টি উইকেট তবে তিনি রান দেন ৪০। এছাড়াও ২টি উইকেট নিয়েছেন তরুণ পেসার মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। তিনি ৯ ওভারে দিয়েছেন ৪৪ রান। আর একটি করে উইকেট নিয়েছেন স্পিনার নাইম হাসান এবং সৌম্য সরকার।
স্কোরবোর্ড:
টস: নাজমুল হাসান শান্ত টসে জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
মাহমুদউল্লাহ একাদশ: ১৯৬/১০, ৪৭.৩ ওভার, (মাহমুদুল্লাহ ৫১, ইমরুল ৪০, সাব্বির ২১), (তাসকিন ২/৩৭; আল-আমিন ২/৪০; মুগ্ধ্ব ২/৪৪)
শান্ত একাদশ: ১৯৭/৬, ৪১.১ ওভার, (শুক্কুর ৫৬*; হৃদয় ৫২), (এবাদত ৩/৪৬; মাহমুদউল্লাহ ১/২৭)
ফলাফল: শান্ত একাদশ ৪ উইকেটে জয়ী।
রিয়াদ একাদশ: নাঈম শেখ, লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, নুরুল হোসেন সোহান, রাকিবুল হাসান, ইবাদত হোসেন, রুবেল হোসেন এবং আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
শান্ত একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মুশফিকুর রহিম, তাওহিদ হৃদয়, ইরফান শুক্কুর, তাসকিন আহমেদ, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, নাইম হাসান এবং রিশাদ আহমেদ।