বাবা মা’র স্বপ্ন এবং নিজ ইচ্ছার প্রকাশ-প্রাধান্য কোনটির?
বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্বের সামনে দাঁড়িয়ে সন্তানের নিজের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ খুব বড় অন্যায় বোধহয়। অন্তত আমাদের এ সমাজ তো তাই শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে।
একজন ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়,বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও?স্বভাবতই উত্তর আসবে ডাক্তার,কিংবা ইঞ্জিনিয়ার।কারণ তার পরিবার তাকে স্কুলে ভর্তির ও আগে থেকে শিখিয়ে পড়িয়ে রেখেছে-
এরপর ধীরে ধীরে যখন তার মধ্যে পরিপক্কতা আসে,ব্যক্তিত্ব গ্রো করতে থাকে,তখন সে চায় নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে।পরিবারের ঠিক করে দেওয়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তখন হয়তো তাকে আকর্ষিত করেনা আর।সে স্বপ্ন দেখতে থাকে নিজ চিন্তাধারায়।
ঠিক এই পরিবর্তন টা আমাদের সমাজ মেনে নিতে পারেনা।প্রচলিত নিয়মানুযায়ী,মেডিকেল অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং এর বাইরে কারো ভবিষ্যতের লক্ষ্য থাকা যেখানে বিরাট কোন পাপের সমতুল্য,নিজের ইচ্ছার প্রকাশ সেখানে বড়দের মুখে মুখে তর্ক অথবা ছোট মুখে বড় কথা।
অধিকাংশ অভিভাবকরাই বুঝতে চান না,এটি নিজস্ব ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ।নিজ ইচ্ছা নিজ রুচি নিজ পছন্দের সমর্থনে মতামত রাখার স্বাধীনতাকে এখনো সমাজে বেয়াদবি বলে মানা হয়।
সন্তানের উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে তার স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করা তাকে ধীরে ধীরে অসুস্থ মানসিকতায় নিয়ে যায়।আত্মনির্ভরশীলতা কমতে থাকে,নিজ মতামত প্রকাশে সে আর উৎসাহ পায় না।পরিবার আর সমাজকে খুশি করতে,তাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের স্বপ্ন হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়।
তাকে যখন বোঝানো হয় প্রচলিত নিয়মের বাইরে সে যেতে পারবেনা,এটিই তার ভবিষ্যৎ,সে তখন মানুষ হওয়ার পরিকল্পনাতে এগোয়না।তাকে বোঝানো হয় বড় হওয়া মানে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে মাস শেষে ভাল একটা স্যালারি এবং শুধুমাত্র এ পেশাগুলোর একটা হলেই সে সমাজে মুখ দেখাতে সক্ষম নতুবা সে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের একজন।
আর সবচেয়ে রূঢ় দিকটি হল,তার মস্তিষ্কে গেঁথে দেওয়া হয়-অনন্য কোন লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগোনো মেধাহীন দের সাজে।নিজেকে মেধাবী প্রমাণ করতে তাকে একজন ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেখাতে হবে।
সাধারণের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে অসাধারণ হওয়ার চেয়ে,অন্যের দেখানো লক্ষ্যে পিছু পিছু ছোটার চেয়ে নিজের স্বপ্নের পিছে ছোটা অনেক বেশি সার্থক।ব্যর্থতা বা সফলতার চেয়ে নিজের মানসিক প্রশান্তি সেখানে বেশি গুরুত্ব রাখে।
প্রতিটি বাবা মার উচিত সন্তানকে তার লক্ষ্য হিসেবে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার নিয়ম বেঁধে দেওয়া।প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সন্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাতে হস্তক্ষেপ কেবলই মানসিক চাপ সৃষ্টি করে,উদ্দীপ্ত আচরণে বাধা দেয়।
মেধাবী হওয়ার প্রমাণ রাখতে সন্তানকে প্রচলিত নিয়মের পিছু ছোটানো ইতিবাচক দিকের চেয়ে নেতিবাচকে দিককেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে যায়।সাধারণ চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে অনন্য উদাহরণ গুলো অধরাই থেকে যাবে।