সমাজ ও একজন কর্মজীবী মা

সচারাচর আমাদের আশেপাশে একটি কথা খুব বেশি শোনা যায়। সেটি হলো,
মা চাকরি করলে কি আর সন্তানেরা সময় পায়?
বাড়ির বউ বাহিরে গেলে কি আর সংসার সামলানো যায়?
একজন মেয়ে ঘরের বাহিরে কাজ করবে কি করবে না সেটি তার নিজস্ব সাচ্ছন্দ্য ও মতামতের ব্যাপার। আমি বলছি না প্রতিটি মেয়েকে কর্মক্ষেত্রে যেতেই হবে। আমি বলছি, যে মেয়েটি তার ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু করতে চায়, একটা নিজস্ব পরিচয়, সত্তা চায় তাকে কেবল সংসার সামলানো কিংবা সন্তানকে সময় দেয়ার দোহাই দিয়ে আটকানো উচিত না।
কারন প্রতিটি মেয়ে কিংবা মা তার সংসার ও সন্তানের জন্য সমান ডেডিকেটেড। কর্মজীবী মাও এর ব্যতিক্রম নয়।
আমাদের সমাজ একটা অদ্ভুতয় জায়গা। এই সমাজে সারাজীবন সংসার নিয়ে বাচা মেয়ে বা মা টিকে কখনো না কখনো শুনতে হয় ” সারাদিন তো ঘরে শুয়ে বসেই কাটাও। আরামের জীবন। ” আবার বাহিরেও কাজ করলে শোনেন “সংসার ভাসিয়ে দিলো। ঘর সামলাতে পারবে না।”
কিন্তু বাস্তবতায় দুটোই ভুল। কারন প্রতিটি মাই তার সংসার আর সন্তানের জন্য নিজের সর্বোচ্চটা করেন।
আমি আরমানি তরফদার মানি যে, মা বাহিরে কাজ করেন তিনি তার পুরোটা সময় ঘরে দিতে পারেন না কিন্তু আমরা যদি একটু অন্যভাবে ভাবি তাহলে বলতে হয় এই মানুষটি সারাদিন যেমন বাহিরে খাটছেন তেমনি বাড়িতেও কষ্ট করছেন।
সকালে বের হবার আগে বাড়ির কাজ সারছেন আবার বাড়ি ফিরেও আমাদের জন্যই করে যাচ্ছেন। বাড়ির মানুষগুলোর জন্য রান্না, ঘর গোছানো কাপড় পরিষ্কার থেকে আমাদের কাজে সাহায্য আমাদের ছোট বড় সকল দিকে খেয়াল রাখা এই কাজ গুলো কোন মা করেন না?কর্মজীবী বলে ঘরের কোন কাজটি তিনি বাদ রাখেন?
নিজের আরামের কথা না ভেবে তিনি আমাদের জন্য কষ্ট করে যান। আমাদের যখনই তাকে প্রয়োজন তখনই তাকে আমাদের পাশে পাওয়া যায়! আমাদের সব আবদার কিংবা প্রয়োজন মেটাবার চেষ্টা করেন। হয়তো কখনো কখনো তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সব আবদার বা প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন না আর আমরা সেটিকেই বড় করে দেখি বাহ্।
কেন আমরা ভাবি না যে এতো দিক সামলেও তিনি পরিবারের জন্য করে যাচ্ছেন।
কেন তার সময় না দেয়াটুকুকে সরিয়ে তার দেয়া সময়, শ্রম এবং মমতাকে আমরা শ্রদ্ধা করতে পারি না?
আমি সবার কথা বলছি না, তবে এই কথা গুলো শুনে অনেকে বলবেন, ” তাহলে কি দরকার এতো কষ্ট করার? ঘরে থেকে স্বামীর পয়সার কাটিয়ে দিলেই হয়!”
অনেকে হয়তো বলবেন, “এটা তো একটা মেয়ের কর্তব্য। তাই তাকে করতেই হবে।”
উত্তরে বলবো, একটা মেয়ে তার স্বামীর টাকা এবং পরিচয়েই বাঁঁচবে নাকি নিজে কিছু করবে সেটি তার ইচ্ছা ও মানসিকতা। তিনি যখন সব দিক সামলিয়ে নিজের একটা পরিচয়ের জন্য কষ্ট করে যেতে পারছেন তখন কখনোই তাকে সংসার বা সন্তানের জন্য থামিয়ে দেয়া উচিত নয়। বরং তার কষ্ট আর চেষ্টা কে বাহোবা দেয়া উচিত।
আর পরেরটির উত্তর – সংসার ও সন্তান যেমন একজন মায়ের দায়িত্ব তেমনি একজন বাবার ও। প্রতিটি মেয়ে তার পার্টনারের কাছ থেকে তার সকল কাজে সাহায্য পেলে সংসার আর সন্তান দুটোই খুব ভালো মত সমলানো সম্ভব। তাই কেবল মেয়ের কর্তব্যটুকু না দেখে ছেলের কর্তব্যগুলো পালন করা প্রয়োজন।
একজন কর্মজীবী মায়ের সন্তান হিসেবে বলছি, আমার মা সংসার সামলাতে ব্যর্থ নন, আমাদের সময় দিতে কখনো কার্পন্য করেন না। এদিকে ফাকিও দেন না নিজের কর্মক্ষেত্রে। আর এজন্য তাকে অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে আমার বাবা এবং বাবার সকল কাজে সাহায্য করার মানসিকতা। তাই তার সময় না দিতে পারাগুলো কে ঝাপ্সা করে ফুটিয়ে তুলতে চাই তার সকল কষ্টগুলোকে!
কারন কর্মজীবী নারীরাও নিজের পরিবারকে সমান ভালোবাসেন, যত্ন করেন।
পরিশেষে বলতে চাই, একটি পরিবার আর সন্তানের জন্য মা-বাবা দুজনকেই খুব দরকার। তাই কেবল মাকে সে ভার চাপিয়ে না দিয়ে দুজনে ভাগাভাগি করলেই একটা শিশু সুন্দর পরিবার পাবে। হোক না তার মা গৃহিনী কিংবা কর্মজীবী।
আরমানি তরফদার
নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য