অন্যরকম বিজয়

বিজয় শব্দটা মনে হলেই মাথায় আসে শুধু একটা তারিখ- ১৬ই ডিসেম্বর। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে এইদিনে পাকিস্তানি অপশক্তির হাত থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনে বাংলার গর্বিত সন্তানেরা। আর সেই আত্মত্যাগের স্বাদ জাতি গ্রহন করতে থাকবে যুগের পর যুগ। তাদের সেই অসীম সাহসীকতা-প্রানদানের নির্ভিক সক্ষমতাই প্রমান করে দেয় বাঙ্গালী এক অকুতোভয় বীর জাতি। তাদের আত্মত্যাগ? সে তো ভুলবার বিষয় না। আর তাইত স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে বিজয় আর বিজয়ের পর থেকে বছরের পর বছর জাতি তাদের স্মরন করে আসছে শ্রদ্ধা আর সম্মানের সাথে।
স্বাধীন সুলতানি যুগের পর থেকে বছরের পর বছর ধরে একের পর এক অপশক্তির হাতে পড়েছে নিরীহ বাঙ্গালীরা। সুলতানগন বিদেশি শাষক হলেও তারা এদেশের মানুষকে শোষণ করেনি এমনকি তারা সম্পদ নিয়ে নিজ দেশেও ফেরেননি। সপ্তাদশ-অষ্টাদশ শতকে আমাদের স্বাধীনতা হরণের নীল নকশা তৈরি হয়। এর ফলেই দেশে স্থাপিত হয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। ১০০ বছরের শাষণামনের পর ক্ষমতা চলে যায় ব্রিটিশ সরকারের কাছে। তাদের ৯০ বছরের শোষনমূখী শাষণের পর ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেয় ব্রিটিশরা। কিন্তু বাঙ্গালির স্বাধীনতা আবার বন্দী হয় পাকিস্তানি শোষকদের হাতে। তারাও সেই ইংরেজ আমলের মতোই শোষনমূখী শাষন চালায়।
পাকিস্তানি শোষকদের হাত থেকে মুক্তির জন্য শুরু হয় স্বাধীনতার চুড়ান্ত সংগ্রাম। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী থেকেই শুরু হয় স্বাধীনতার সংগ্রাম। শেরে বাংলা এ,কে, ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী, শহীদ সারওয়ার্দী সহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরালস চেস্টায় ‘৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ‘৫৬ সালের নির্বাচনে বিজয়, ‘৬৬ এর ৬ দফা, ‘৬৯ এর গন অভ্যুত্থান, ‘৭০ এর নির্বাচন এবং সবশেষে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে উপনীত হয় স্বাধীনতার যুদ্ধে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর লাখো শহীদের প্রান আমাদের এনে দেয় কাঙ্ক্ষিত বিজয়৷ হারাই আমরা জাতির দামাল ছেলেদের। দেশের সূর্য সন্তানদের কথা মনে করিয়ে দেয় কিছু বিশেষ দিবস। সম্মান আর কৃতজ্ঞতায় তাদের কাছে নত হয় লাখ লাখ বাঙ্গালি।
এখন কথা হলো, শুধু কি বিশেষ দিনগুলোতে তাদের সম্মান জানালেই বিজয়ের মর্যাদা প্রকাশ পাবে? তাদের আত্মত্যাগ এর দাম কি এতই অল্প? না!!তাদের রক্তের মর্যাদা দেওয়া এত সহজ না। শুধু জাকজমকের সাথে দিনগুলো পালন করলেই চলবে না, তাদের চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে তরুন প্রজন্মকে। ফেসবুকে দুটো স্টাটাস আর টেলিভিশন এর ঘটা করে নিউজ প্রচার করেই কেবল বিজয়ের মর্যাদা লালিত হয় না। প্রকৃত স্বাধীনতা – প্রকৃত বিজয় এর অর্থ দারিদ্রতা থেকে মুক্তি, ক্ষুধা থেকে মুক্তি, অশিক্ষা থেকে মুক্তি। আমরা বিজয় অর্জন করেছি বটে কিন্তু এর প্রকৃত রূপ এখনো অপ্রকাশিত। বিজয়ের ৫০ বছর পরেও দেশের হাজার হাজার মানুষ ফুটপাতে রাত্রি যাপন করে। দিনের একবেলা খাবার জোটেনা তাদের। এক কাপড়ে বছরের পর বছর পাড় করতে হয় তাদের। শিক্ষা তো তাদের জন্য দুঃস্বপ্ন। এই তীব্র শীতেও তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সভ্য শ্রেনীর মানুষ যখন বিশ্ব ভ্রমণ করতে ব্যস্ত, সেসময় তারা খুঁজে বেড়াচ্ছে এক বেলার খাবার কিংবা পুরনো শীতবস্ত্র। মাঝে মাঝে স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠন এদের সাহায্যে এগিয়ে আসলেও, তাদের তহবিল সীমিত হওয়ার ফলে অধিকাংশ মানুষ ই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। আসলে সবার উচিত এসব মানুষের কল্যানার্থে এগিয়ে আসা। তবেই এদের পূনর্বাসন করা সম্ভব। আর এদেরকে পিছিয়ে রেখে জাতীর প্রকৃত বিজয় থাকে না।’জ্ঞানসাধকের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র।’শহীদের রক্তের মর্যাদা রাখার জন্য তাই জ্ঞান অর্জন করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সব মানুষের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছাতে হবে। রাস্তার এসব মানুষের কাছেও। তাদের জন্য শিক্ষার আলো না জ্বালিয়ে আমরা কখনোই এগিয়ে যেতে পারব না।
বিজয়ের ৫০ বছরে পদার্পণ করলেও আমরা এখনো অনেক দিক থেকে পিছিয়ে। বিশেষত এই সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু করাটা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আনন্দের বিষয় এই যে,অনেক মানুষ এখন এদের নিয়ে কাজ করে আসছে। এভাবে সবাই যদি আমাদের দেশের মানুষের কল্যানে এগিয়ে আসে তবেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। সম্ভব স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষার। এ যেন এক অন্যরকম বিজয়।
আবিদ হামজা
নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য