নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

“শ্রমিকের উপরই চলে বুলেট- আর কতো?”

❀ এখন মে মাস নয়,
যখন র‍্যালি করে মানবাধিকারের রক্ষাকর্তা হবার সময় হয়।
এই দন্দ্ব ছিল সেই সেকালে, আছে অনন্তব্যাপী
প্রশ্ন আমার, কেন কাঙালই হবে বারবার, একমাত্র অপরাধী?

Time and tide wait for none- চিরসত্য এই প্রবাদ কে স্যালুট জানিয়ে সময় তো চলমান, নদীর স্রোতের মতোই তার বহমানতা৷ তার বিরাম নেই, ক্লান্তি নেই। ঘড়ির কাঁটার টিকটক শব্দে চিরগতিশীলতায় লালিত হয়ে প্রতিবছরই তো ফেরে পহেলা মে। আর তার সাথে ফেরে কালো পর্দার মোচড় ডিঙিয়ে সবার মুখে একই বাক্য, মর্মে অধিকার আদায়ের আলেখ্য। সময়ের এই মহাকাব্যের পংক্তি লেখার হয়তো ইতি নেই৷ তাই বছরঘুরে দিনকালের পাতায় জমা হয় ক্রন্দন, ক্ষতবিক্ষত করে দেয় নৃশংস বুলেট। উত্তরের প্রতিউত্তর আসে বুলির বিচিত্র অনুভূতিতে, দুচারটা প্রবন্ধ আর কয়েকজনের অপ্রয়োজনীয় আন্দোলনের মধ্যে৷ দিনশেষে নদীর যাত্রা তো মহাসমুদ্রের পানেই, শত বাধা পেরিয়ে সেই অতল স্থির মহাসমুদ্র। ভূমিকা তো পানিচক্রের এক উপাদান হিসেবে। চক্র! সে তো অসীম..

অধিকার আদায়ের এই লড়াইয়ের শেষটা কোথায়- তার ঠিকানা হয়তো এখনো অনাবিষ্কৃত কোনো প্রাচীন গুহার প্রবেশদ্বার। কারণ, কয়েক মাস না পেরুতেই গার্মেন্টস গুলোর সামনে ঘটে আলোড়ন, মালিকের বিরুদ্ধে এক অসম জাগরণ। প্রশাসনের চোখটা কতোটুকু নিখুঁত, সে নিয়ে প্রশ্ন না তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে তাদের চোখে বাঁধা কোনো সম্ভাব্য মোহের পর্দার প্রভাবেই হয়তো দৃশ্যমান হয় শুধু কারখানার বিলাসবহুল কাচ ভাংচুর কিংবা জ্বালাও পোড়াও। কিন্তু তার পেছনের মহাকালপাতা গল্প কেও শোনে না, কারণ পর্দার ওপারে যে শুধুই স্বার্থ আর আধিপত্যের লড়াই।

মে দিবসের মাত্র ২ সপ্তাহ আগে এমন ঘটনা প্রগতিশীল চিন্তার সাম্যবাদী মানুষের কাছে হতে পারতো এক হৃদয় বিস্ফোরক বাস্তবতা। কিন্তু কোথায় তারা! আমরা যখনই দেখি মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ, সেখান থেকে বিশৃঙ্খলা, প্রশাসনের ভূমিকাটা এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে। কিন্তু সবসময়ই কেন দোষী হয় খেটে খাওয়া ঐসব মানুষ? বছরের পর বছর যখন নিশ্চুপ হয়ে সহ্য করে গেল এইসব শ্রমিকের দল, তাদের ন্যায্য দাবির মুখে লাথি দিল ঐসব মালিক, তখন কোথায় থাকে মানবাধিকার কমিশন? কোথায় থাকে এতো সব সাম্যবাদী প্রতিষ্ঠান?
আজ একই ধরনের দাবি যদি করা হতো গেজেটভুক্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে, হয়তো প্রেক্ষাপট টা অন্যরকম হতেও পারতো, কারণ এখানে অন্যায় কিছু ছিল কি? কিন্তু বাস্তবতার পরিহাস! আজ শ্রমিকের দাবির মূল্য নেই। এসব বিষয় তদন্তনাধীন, তাই বেশি কিছু না বলাই উত্তম।

বাংলাদেশের সংবিধান বলে, পুলিশ তখনই আন্দোলনকারীর উপর গুলি চালাতে পারবে, যখন বিষয়টি অত্যাবশ্যক হয়ে পরে- নিজের জীবন রক্ষার্থে এবং চরম ক্ষতি রোধে। যদি বলা হয়, এখানে চরমতম কোনো ক্ষতির আশংকায় গুলি চালালো হয়েছে, তাহলে কিছুদিন আগে যে একদল লোক ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় স্টেশন পুড়িয়ে দিল, কই তখন তো গুলি চালানো আমরা দেখিনি। কারণটা কি এই যে, তাদের রাজনৈতিক শক্তিশালী সংগঠন আছে? আর শ্রমিকদের কোনো শক্তিশালী সংগঠন না থাকায় তাদের গল্প গুলো হয়তো অগচরেই থেকে যায়। কেউ আর তা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। সবশেষে আমরা তো জাতিসংঘের শর্তপালনকারী এক সাম্যবাদী সদস্য।

শিক্ষার প্রকৃতার্থ কবে আমরা শিখব কে জানে? তবে এই বিচিত্র পৃথিবীর এসব সত্য যে মহাসমুদ্রের মতোই ধ্রুবক, তার ভবিষ্যৎ তো লেখা বাষ্পের অনিশ্চয়তায়।

জয় হোক মানুষের।

মোঃ তাহমিদুল ইসলাম

নব্যদীপ্তিশুদ্ধচিন্তায়_তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button