মৃতদেহ সংকটে দেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা

চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়াশোনায় ব্যবহারিক কাজে প্রতি বছর কয়েকশ মৃতদেহ প্রয়োজন হয়, যা পাওয়া দিন দিন দুষ্কর হয়ে পড়ছে। অন্য দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়াশোনায় কৃত্তিম মানবদেহ ব্যবহার হয়, নীতিমালায় না থাকায় আমাদের দেশে সে সুযোগও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে একই মৃতদেহ বার বার ব্যবহার করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়াশোনায় মানবদেহ ব্যবচ্ছেদ অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষার্থীরা বেওয়ারিশ লাশ অথবা দেহদান করা মানুষের মৃতদেহ নিয়ে ব্যবহারিক কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্চমূল্যে যা সংগ্রহ করতে হয়।
বেসরকারি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে প্রথমবর্ষের ১২০ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে তিনটি মৃতদেহ। মানবদেহ কাটাছেঁড়ায় প্রথমে সংকোচ হলেও পড়ে সব সয়ে যায়, বলছিলেন এক শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, প্রথমে একটু ভয় কাজ করে। কিন্তু যখন মনে হয়, এটা থেকে শিখে আমরা মানুষের ভালো করতে পারব, একজন মুমূর্ষু রোগীকে সুস্থ করতে পারব; তখন মনের মধ্যে সাহস কাজ করে, তা থেকে অনুপ্রেরণা জাগে।
অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, মৃতদেহ দেখলে ভয়ভীতি তো কাজ করে। এভাবে কাছ থেকে মৃতদেহ দেখা হয়নি। এখানে এসে কাজ করতে হয়, ভয় প্রথমে লাগলেও পরে অভ্যাস হয়ে গেছে।
দেশে সরকারি বেসরকারি মিলে মোট মেডিকল কলেজের সংখ্যা ১০৯টি। শিক্ষার্থী আছে ১০ হাজার ৬০০ জন। সে হিসাবে পড়াশোনার জন্য প্রতিবছর কয়েকশ মৃতদেহ প্রয়োজন হয়। যা সংগ্রহ করতে বিপাকে পড়তে হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ রশিদ বলেন, মৃতদেহ খুবই দুষ্প্রাপ্য এখন। একটা মরদেহ সংগ্রহ করতে অনেক টাকা লাগে। সেজন্য আমরা আগের বছরের ব্যবচ্ছেদ করা মরদেহগুলো সংরক্ষণ করে আমরা পড়াই। ডিসেকশন (ব্যবচ্ছেদ) করতে পারলে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এখন মরদেহ সংগ্রহ করা অনেক কষ্টকর।
চাহিদা অনুযায়ী মৃতদেহ পাওয়া দিন দির কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। সে জন্য অন্যান্য দেশের মতো কৃত্তিম মানবদেহে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টির পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
ডা. এম এ রশিদ আরও বলেন, কৃত্তিম মরদেহ যদি সংগ্রহ করা যায়, এই সমস্যায় পড়েতে হয় না। পাশাপাশি মানবাধিকারের একটা ব্যাপার আছে, তা থেকেও আমরা রক্ষা পেতে পারি। যদি কৃত্তিম মরদেহ সংগ্রহ করা যায়, যা দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যাবে তাহলে সব শিক্ষার্থীর জন্য ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।
চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়াশোনা প্রয়োজনীয় উপকরণ সহজে পাওয়ার জন্য নীতিমালা যুগপোযোগী করার ওপর তাগিদ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।