সারাদেশ

দেশে ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ মানসিক নির্যাতনের শিকার

দেশে পুরুষ নির্যাতন বেড়েছে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ ম্যান’স রাইটস ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন।

সংগঠনটির দাবি, শারীরিক নির্যাতনের তুলনায় মানসিক নির্যাতনের বেশি শিকার হচ্ছেন পুরুষরা। লোকলজ্জাসহ নানা কারণে এসব ঘটনা অধিকাংশই চাপা পড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভুক্তভোগী পুরুষ বাধ্য হয়ে নির্যাতনের কথা শিকার করেছেন। সেসব অভিযোগের ভিত্তিতে জরিপ চালিয়েছে বাংলাদেশ ম্যান’স রাইটস ফাউন্ডেশন।

তাদের দাবি, সারা দেশে ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া সারা দেশে গত এক বছরে ৭৯২ জন পুরুষ শারীরিক ও মানসিক উভয় নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুরুষদের নির্যাতন দমনে দেশে কোনও আইন নেই বলে এই নির্যাতন বেড়ে চলেছে দাবি করে বাংলাদেশ ম্যান’স রাইটস ফাউন্ডেশন। নির্যাতনের বিষয়ে তাদের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ প্রতিনিয়ত আসছে। তবে লোকলজ্জা, সম্মান হানি, সন্তান-পরিজন ও সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার কথা চিন্তা করে অনেকে মুখ খুলছে না।

ফাউন্ডেশনটি বলছে, ২০২২ সালে সারা দেশে ৭৯২টি, ২০২১ সালে সারা দেশে ৪৫০টি, ২০২০ সালে সারা দেশে ৩৩০টি, ২০১৯ সালে সারা দেশে ২৪০টি পুরুষ নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে তাদের কাছে।

তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক গুণ বেশি বলে দাবি করছে সংস্থাটি।

ফাউন্ডেশনটির চেয়ারম্যান শেখ খায়রুল আলম দেশের একটি দৈনিককে বলেন, ‘আমরা নারী-পুরুষ সমতা চাই। দেশে আইন আছে, কিন্তু একচেটিয়া। এই আইনে পুরুষদের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা হয়েছে। যেমন নারী নির্যাতন আইন। আমরা চাই নারী কিংবা পুরুষ যে নির্যাতিত হোক-না কেন তার যেন বিচার হয়। তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার হোক। এ জন্য নিরপেক্ষ আইন হওয়া দরকার। তবে নারী নির্যাতন আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন আইন নেই। ফলে নারী নির্যাতন আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। এতে অনেক পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, মিথ্যা মামলার মধ্য দিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কিন্তু লোকলজ্জা ও সম্মান হানির ভয়ে অনেকে তা বলতে পারছে না, নীরবে কাঁদছে।’

তিনি বলেন, ‘এরপরও আমাদের সংগঠনের কাছে অনেকে নির্যাতনের নানা অভিযোগ নিয়ে আসছে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে জরিপ করে দেখেছি, আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেক পুরুষ এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে পুরুষ নির্যাতন রোধে কোনও আইন নেই। ফলে এর থেকে উত্তরণের কোনও সুযোগ নেই। এ কারণে পুরুষ নির্যাতন দমন আইনের দাবি করে আসছি।’

নারীদের পক্ষে থাকা একটি আইনের ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারায় আছে, এক জনের স্ত্রী আরেক ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমে আসক্ত হলে, ওই নারী দায়মুক্ত আর পুরুষের পাঁচ বছরের জেল-জরিমানা হবে। অথচ এখানে দুজনই সমান অপরাধী, কিন্তু শাস্তি পাচ্ছে পুরুষ। এটা কেন? এ কারণে আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে চাই, ধারাটি সংশোধন হোক।’

শেখ খায়রুল আলম আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন হচ্ছে, সেটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু নারী নির্যাতন বাড়ছে গাণিতিক হারে। আর পুরুষ নির্যাতন বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। বিয়েতে মোটা অঙ্কের দেনমোহর দেওয়ার কারণে পুরুষ নির্যাতন বেশি হচ্ছে। বর্তমানে একজন সামান্য মুদি দোকানি বিয়ে করতে গেলে ৪-৫ লাখ টাকা দেনমোহর দিতে হয়। আর বিয়ের পর দেনমোহরের টাকাসহ নানা ইস্যু নিয়ে নারীরা পুরুষদের ওপর মানসিক নির্যাতন শুরু করে। অনেক সময় শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবে এমন ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কাছে বলেও কোনও সমাধান হচ্ছে না, উল্টো হাসি-ঠাট্টার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এই অভিযোগ যদি একজন নারী করতো তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। এ ছাড়াও পরকীয়া, স্যাটেলাইট চ্যানেলের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে পুরুষ নির্যাতন বাড়ছে।’

এই বিষয়ে মহিলা পরিষদের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসিনা পারভীন বলেন, ‘বর্তমানে আইন নারীদের পক্ষে। এর কারণ হলো- আগে ৯৯ শতাংশ পুরুষ খারাপ ছিল। নারী নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটতো। আইনের কারণে সেটা আগের তুলনায় কমেছে। আর পুরুষ নির্যাতনের বিষয়টা সেই তুলনায় অনেক কম বলা চলে। তবে কিছু কিছু অসাধু নারী এই আইনের অপব্যবহার করছে। তারা কাবিনের টাকা পাওয়ার জন্য মামলা করে থাকে। তবে এই সংখ্যা অতি নগণ্য।’ 

সমতার আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকে সমতা বা সমান অধিকারের কথা বলে আসছি। এই আইনের কথা আমরা অনেক আগে থেকে দাবি করে আসছি। কারণ নারী ও পুরুষের সমান অধিকার পাওয়া উচিত। পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন এই দাবি করে থাকলে আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই।’

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘নারী-পুরুষ উভয়কে সমান অধিকার দেওয়া উচিত। বর্তমান আইন ব্যবস্থার ফলে অনেক নারী মিথ্যা মামলা দিয়ে পুরুষদের হয়রানি করতে পারেন। সব নারী খারাপ নয়, তাদের মধ্যে ভালো-খারাপ রয়েছে। প্রকৃত নারী নির্যাতনের বিষয়গুলোকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে অনেক নারী বিয়েতে বেশি টাকা কাবিন করিয়ে থাকে। পরে সেই টাকা আদায়ের জন্য মামলা দিয়ে হয়রানি করে টাকা আদায় করে। অনেক সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা দেওয়া হয়। এ কারণে অনেক সময় মিথ্যা মামলার আড়ালে সঠিক বা প্রকৃত মামলাগুলো হারিয়ে যায়। তাই পুরুষের বেলায়ও আইন করা দরকার। যাতে করে পুরুষরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, হয়রানির শিকার না হয়। ফলে আইন পরিবর্তন নয়, আইন মোডিফাই করা দরকার।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button