আবহাওয়াপ্রধান খবরসারাদেশ

ডুবে যাবে সেন্টমার্টিন

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। এতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে আবহাওয়া অধিদফতর এ তথ্য জানান।

এদিকে আবহাওয়াবিদদের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় মোখা সরাসরি আঘাত হানবে সেন্টমার্টিন ও মিয়ানমার উপকূলে। নীল জলরাশির দ্বীপটিতে ভয়ঙ্করভাবে তাণ্ডব চালাবে মোখা।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক এবং আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষদের জীবন হুমকির সম্মুখীন। যারা সেন্টমার্টিন দ্বীপ ত্যাগ করতে পারেননি (ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও) সেসব মানুষকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে উদ্ধার করা প্রয়োজন।

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি ছোট প্রবাল দ্বীপ। মাত্র আট বর্গকিলোমিটারের দ্বীপ এটি। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় নয় কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমার উপকূল হতে আট কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। স্থানীয়রা একে ‘নারিকেল জিনজিরা’ নামে চেনেন। এ দ্বীপের তিন দিকের ভিত শিলা যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ সমতল ও সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা থেকে ৩ দশমিক ৬ মিটার ওপরে। মূল ভূখণ্ড ও দ্বীপের মধ্যবর্তী নয় দশমিক ৬৬ কিলোমিটার প্রশস্ত প্রণালি দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের উন্মুক্ত সাগরের তুলনায় অনেক অগভীর। এখানে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর। মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যেগুলো স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া (ছেঁড়া দ্বীপ) নামে অভিহিত করা হয়। যার অর্থ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক বিজ্ঞানী ড. আব্দুল মান্নান বলেন, মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পানির নিচে চলে যাবে, এটা নিশ্চিত। তবে সেটা স্থায়ীভাবে নয়। পাঁচ থেকে সাত ফুট জলোচ্ছ্বাস হলে তো সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভেসে থাকার কথা নয়। শুধু জলোচ্ছ্বাস নয়, আজ থেকে আগামীকাল পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে ভরা জোয়ার আছে। সব ঘূর্ণিঝড় অমাবস্যা অথবা পূর্ণিমাতে আসে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে জোয়ারের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি হয়। সেন্টমার্টিনে আজ ভরা জোয়ার থাকবে এবং আগামীকাল কিছুটা কমবে। এবার সেন্টমার্টিনের জোয়ার কিন্তু পিক টাইমই ফলো করছে। মানে মোখা উপকূলে আসার সাথে সাথেই জলোচ্ছ্বাস শুরু হবে।

‘এই পিক টাইমে জোয়ারের ওপরের অংশেও জলোচ্ছ্বাস হয়। তাই জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস একসাথে হলে উচ্চতা বেশি হয়। অর্থাৎ সেন্টমার্টিনে আজ ৩.১ মিটার জোয়ার হবে অর্থাৎ ১০ ফুটের মতো। এর বাইরে জলোচ্ছ্বাস হবে আরো পাঁচ থেকে সাত ফুট উচ্চতার। সুতরাং জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস মিলিয়ে ২০ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর সেন্টমার্টিনে এ উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে পুরো দ্বীপটি পানির নিচে তলিয়ে যাবে।’

সাবেক এ আবহাওয়াবিদ আরো বলেন, তবে, ঘূর্ণিঝড় সেন্টমার্টিনের ওপর দিয়ে গেলেও দ্বীপটিতে কিছু সুবিধা আছে। কারণ, আমরা এখন পর্যন্ত যেভাবে দেখছি তাতে ঘূর্ণিঝড়ের বাম পাশে পড়ে যায় সেন্টমার্টিন। এছাড়া, সেন্টমার্টিনে তলিয়ে গেলেও কিন্তু পানি বের হয়ে যাবে। কারণ, চারপাশে খোলা বিচ। মানে একপাশে দিয়ে আসলেও আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যাবে। এটা আবার স্থলভাগে হয় না।

‘তবে, মিয়ানমার উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা অনেক বেশি হবে। কারণ, মিয়ানমার ঘূর্ণিঝড় মোখার ডান পাশে হওয়াতে এর ওপর প্রভাবটা বেশি হবে। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়গুলো ডান পাশে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। সেক্ষেত্রে মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশে কিছুটা কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button