প্রধান খবরবগুড়া জেলাস্বাস্থ্য

মোহাম্মদ আলীতে নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন, কবে আসবে জানা নেই কর্তৃপক্ষের

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বগুড়া শহরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বিনামূল্যে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে ভ্যাকসিন ক্রয় করতে হচ্ছে।

জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনের স্টক ফুরিয়ে যাওয়ায় এমন সংকট তৈরি হয় বলে জানিয়েছে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কবে নাগাদ সরবরাহ পাওয়া যাবে তা বলতে পারছেন না তারা।

বগুড়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের পূর্ব পাশে মাল্টিপারপাস ভবনে জলাতঙ্কসহ বিভিন্ন রোগের টিকা দেয়া হয়। কিন্তু মাল্টিপারপাস ভবন থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকার সরবরাহ নেই। তবে কুকুর-বিড়াল আক্রমণের শিকার ব্যক্তিরা এলে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের ক্রয় করা টিকা নির্ধারিত নিয়মে তাদের দেয়া হচ্ছে। যেহেতু জলাতঙ্কের টিকার একটি ভায়োল থেকে চারজনকে দেয়া সম্ভব। এ কারণে নার্সরা সেবাগ্রহীতাদের পরামর্শ দেন দল বেঁধে টিকা ক্রয় করার।

আজ বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বেলা ১২ টার দিকে হাসপাতালের মাল্টিপারপাস ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিবগঞ্জের কিচক এলাকার বাসিন্দা আবু রায়হান। তিনি টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের খোঁজ করছিলেন। এভাবে কয়েকজন একত্রিত হয়ে টিকা কিনলে খরচ কমবে।

আবু রায়হান বলেন, শহরে থাকার কারণে এই হাসপাতালে টিকা নিতে আসি। আজকে শেষ ডোজ। চারজন মিলে একসাথে কিনলে মাথাপিছু ১২০ টাকা করে খরচ হয়।

গত ১৩ আগস্ট খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে একাধিক মানুষের ভিড়। সবাই চারজন করে দল বেঁধে জলাতঙ্কের টিকা ক্রয় করছেন। অথচ জলাতঙ্কের টিকা সরকারিভাবে বিনামূল্যে সরবরাহ করার কথা।

ওই সময় সায়েদ আলী নামে এক কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। কুকুরের কামড় দেয়ার কারণে টিকা নিতে এসেছেন। অন্যদের মতো তিনি আরও তিনজনের সঙ্গে মিলে টিকা ক্রয় করেন। গাবতলী উপজেলার দূর্গাহাটা গ্রাম থেকে আসা সায়েদ আলী বলেন, আমরা তো জানি বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা দেয়া হয়। কিন্তু এখানে এসে দেখছি দোকান থেকে কিনতে হবে।

মরিয়ম নামে এক নারী এসেছেন সদরের মাটিডালী থেকে। তিনি জানান, বিড়ালের কামড় লেগেছে। টিকা নিতে এসে দেখি টাকা দিয়ে কেনা লাগবে। এত টাকা কোথায় পাবো? পরে সবাইকে দেখি ১২০ টাকা করে দিয়ে টিকা কিনছেন।

বৃহস্পতিবার হাসপাতালের নার্সদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ১৮০ জন করে জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসেন। অনেক সময় সেবা নেয়ার সংখ্যা ২০০ জন পেরিয়ে যায়। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর স্বাস্থ্যভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় বগুড়ায় জলাতঙ্কের টিকার সরবরাহ ফুরিয়ে যায়। এরপর স্বাস্থ্যভবনের কার্যক্রম এখনও ঠিকমতো চালু হয়নি। সম্ভবত এ কারণে টিকার সরবরাহ নেই জানান নার্সরা।

জলাতঙ্কের টিকা দেয়ার কক্ষে কর্মরত ব্রাদারস ফরিদুল হাসান সুজন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকার সংকট চলছে। এখন প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসে এখানে। সবাইকে বোঝানো সম্ভব হয় না।অনেকে ভুল বুঝে। টিকা আসামাত্রই এই সমস্যা দূর হবে।

তবে স্বাস্থ্যভবনে অগ্নিকাণ্ডের সাথে টিকার সরবরাহের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্বাবধায়ক কাজী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বেশকিছু দিন ধরে জলাতঙ্কের টিকা নেই হাসপাতালে। আমাদের চাহিদাপত্র পাঠানো আছে। খুব শীঘ্রই সরবরাহ পাবো আমরা। তবে কবে আসবে এটা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি।

ডা. মিজানুর রহমান আরও বলেন, এই সময়টায় কুকুর-বিড়ালের আক্রমণের রোগি বৃদ্ধি পায়। আর দেশে কুকুরের সংখ্যাও বেড়েছে প্রচুর।এ জন্য টিকার চাহিদা বেড়েছে। এর সাথে স্বাস্থ্যভবনে অগ্নিকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ ভ্যাকসিন উৎপাদন করে ফ্যাক্টরিতে। সেখান থেকেই সরবরাহ হবে।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ছাড়া বগুড়ার অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জলাতঙ্কের টিকার সংকটের খবর পাওয়া যায়নি। শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি চালানে ২০০ থেকে ২৫০ ভায়োল করে টিকার সরবরাহ পাওয়া যায়। ১৫ আগস্ট পর্যন্ত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তত ৬০ জন জলাতঙ্কের টিকা নিয়েছেন।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button