প্রধান খবরবগুড়া জেলা

বগুড়ায় কলেজের অধ্যক্ষ অন্য স্কুলের সহকারী শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ায় তথ্য গোপন করে এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদে চাকরি করছেন সারিয়াকান্দি উপজেলার জোড়গাছা মডেল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জুলফিকার আলী রায়হান।

অভিযোগ আছে, প্রায় চার বছর ধরে চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের নগর শাহ মোজাম্মেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন।


জুলফিকার আলী রায়হান বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গড়েরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ২০১৩ সালে সারিয়াকান্দির জোড়গাছা মডেল মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১৫ সাল থেকে কলেজটির অধ্যক্ষের পদ ধরে রেখেছেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালে এমপিওভুক্ত নগর শাহ মোজাম্মেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন।


শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এমপিও নীতিমালার ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রাপ্তির জন্য শিক্ষক/কর্মচারীরা একই সঙ্গে একাধিক স্থানে চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারেন না।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জোড়াগাছা মহিলা কলেজ ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। প্রতিষ্ঠাকালীন কলেজটির অধ্যক্ষ ছিলেন আশরাফুল ইসলাম। ২০১৩ সালে যোগদান করেন জুলফিকার আলী। পরবর্তীতে সভাপতির সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ২০১৫ সালে আশরাফুল ইসলামকে বরখাস্ত করে কমিটি। এরপর নিয়োগ কমিটির নিয়ম অনুসারে ওই বছরের ১ নভেম্বরে জুলফিকার আলী রায়হান অধ্যক্ষ হন। কিন্তু প্রভাষক থেকে সরাসরি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়া বিধিবর্হিভুত হওয়ায় আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে ২০১৭ সালের ২১ মার্চে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেছিলেন জুলফিকার আলী। ওই রিটে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও আশরাফুল ইসলামসহ ১০ জনকে বিবাদী করা হয়।


রিট অনুসারে কলেজে অধ্যক্ষের পদটি ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। সেই মোতাবেক ২০২২ সালের ৬ জুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান জুয়েল হোসেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আশরাফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে জুলফিকার আলী রায়হানকে অধ্যক্ষ করে বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড।


অবশ্য এর আগেই ২০২১ সালে জুলফিকার আলী শাজাহানপুর উপজেলার নগর শাহ মোজাম্মেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগ পেয়ে ওই বছরেই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং এখন পর্যন্ত সেখানেই চাকরি করে আসছেন। বর্তমানে আশরাফুল ইসলামও অন্য একটি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।


অনুসন্ধানে দেখা যায়, জুলফিকার আলী রায়হান চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে সারিয়াকান্দি ও শাজাহানপুর উপজেলার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পদ ধরে রেখেছেন। তিনি শাজাহানপুরের নগর শাহ মোজাম্মেল উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নেন। তবে অনিয়মিত জোড়গাছা মহিলা কলেজটিতে।


নগর শাহ মোজাম্মেল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধান শিক্ষক মো.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জুলফিকার স্যার আমাদের বিদ্যালয়ে সম্ভবত ২০২১ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। উনি অন্য কোনো কলেজে আছে কিনা এটা আমার সঠিক জানা নাই। এখানে উনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন ও নিয়মিত পাঠদান করান।

জোড়গাছা মডেল মহিলা কলেজে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কলেজে অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে নেমপ্লেট দেয়া আছে। সেখানে জুলফিকার আলী রায়হানের নাম উল্লেখ করা। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জুয়েল হোসেনের মাধ্যমে সব কাজ সম্পাদন করেন জুলফিকার আলী।


কলেজে শিক্ষক হিসেবে আছেন ১৬ জন। আর কর্মচারীর পদে চাকরি করছেন ১৪ জন। গত শিক্ষাবর্ষে কলেজে ছাত্রী ভর্তি হয় ৬৭ জন। এ বছরে ভর্তি হয়েছে ১৭ জন ছাত্রী। কিন্তু এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা কোনো বেতন পান না। শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ফান্ড থেকে যা অর্থ আসে তা দিয়েই খরচ মেটানো হয়।


জুয়েল হোসেন বলেন, আমি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। আমি নিজে কিছু করি না। কলেজের যাবতীয় খরচাদির বিষয় জুলফিকার আলী দেখেন। উনি আমাকে টাকা দিয়ে নির্দেশনা দেন। সেই অনুযায়ী কাজ করি।


দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন জুলফিকার আলী রায়হান নিজেও। তিনি বলেন, জোড়াগাছা মহিলা কলেজ এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় এখান থেকে কোনো বেতন পাই না। উল্টো এই কলেজ চালাতে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। বলা যায় একেবারে সর্বশান্ত হয়ে গেছি।


অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়ার কারণ হিসেবে জুলফিকার বলেন, এখন পর্যন্ত জায়গা-জমি বিক্রি করে প্রচুর টাকা কলেজের পিছনে টাকা খরচ করেছি। আশায় আছি এই কলেজটি এমপিও ভুক্ত হবে। একারনে আপাতত বিদ্যালয়ে চাকরি করে সংসার চালাচ্ছি। কলেজ এমপিও ভুক্ত হলেই বিদ্যালয়ের চাকরিটা ছেড়ে দিব।


তবে এমন ঘটনার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সরোওয়ার ইউসুফ জামাল। বললেন, আমি তো জানি না এ বিষয়ে আপনার কাছে থেকে শুনলাম।আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী বলেন, জুলফিকার আলী যেহেতু কলেজ বেতন পাননা একারনে বিদ্যালয়ে চাকরী করছেন। কলেজ এমপিও ভুক্ত হলে হয়তো বিদ্যালয়ের চাকরী ছেরে দিয়ে কলেজে যোগদান করবে। কারন কলেজে অধ্যক্ষের পদ একটি সম্মানজনক পদ। এ বিষয়ে কেউ যদি অভিযোগ দেয়, তখন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button