জাতীয়প্রধান খবর

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক খুবই দৃঢ় এবং ঘনিষ্ঠ: ড. ইউনূস

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ককে ‘খুবই দৃঢ়’ এবং ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দুই প্রতিবেশির সম্পর্কে কিছু মেঘ জমে ছায়া তৈরি করেছে। এই ‘কালো মেঘ’ মুছে ফেলতে ভারতের সহায়তা কামনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

আজ সোমবার ৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

এসময় নয়াদিল্লি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এবং দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারে ‘সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা’য় আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ঢাকায় সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সম্পর্ক বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই। আমরা এটাকে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হিসেবে দেখি। পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে আলোচনায় বিক্রম মিশ্রি বলেন, আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকেই আবার শুরু করতে চাই।

প্রায় ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে সংখ্যালঘু ইস্যু, অপতথ্য প্রচার, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

আলোচনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন, তার প্রসঙ্গও উঠে আসে। বিগত ১৫ বছরের নির্মম ও দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসনের বর্ণনা করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের লোকজন উদ্বিগ্ন কারণ তিনি সেখান (ভারত) থেকে অনেক বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।

বিক্রম মিশ্রি জানান, তিনি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রায় প্রতি ঘণ্টায় বাংলাদেশের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও জনতা কীভাবে এক হয়ে হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলের অবসান ঘটিয়েছে তার একটি বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ হলো তরুণদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে সেসবের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরেন তিনি। বিক্রম মিশ্রি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসকল বিদেশি নেতা তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামনের সারিতে আছেন।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমের ন্যারেটিভ এবং ভারত সরকারের ধারণা ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আপনার সাফল্য কামনা করি। বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রয়েছে এটা ভুল ধারণা উল্লেখ করে বিক্রম মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়, বরং সকলের জন্য।

বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বন্যা এবং পানি ব্যবস্থাপনায় ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ভারতকে তার উদ্যোগে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আমাদের সবার জন্য একটি সমৃদ্ধ নতুন ভবিষ্যত গড়তে চাই।

বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত সার্কের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছে, যদিও কিছু বাধা রয়েছে। সংখ্যালঘু ইস্যু সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, আমরা একটি পরিবার। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত গত মাসে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে এবং আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়াবে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button