বগুড়ায় ৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টিসিবির পন্য ছাড়াই ফিরে গেলেন তারা

বাড়িতে অসুস্থ স্বামী আব্দুল আজিজকে বাসায় রেখে সকাল আটটার দিকে বগুড়া শহরের জেলখানা মোড়ে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছিলেন ডলি বেগম। দুপুর দেড়টার দিকেও তিনি কোনো পণ্য পাননি। আড়াইটার দিকে ডিলারের নির্ধারিত পণ্য শেষ হয়ে যায়। খালি হাতে ফেরেন ডলি বেগম। জানালেন, সরকার দিতে না পারলে বলে দিবে। রোজা থেকে এভাবে রাস্তার উপর দাঁড় করিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বগুড়া শহরের জেলখানা মোড় থেকে অন্তত আড়াইশ মানুষ পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন। অনেকেই আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
অন্য কোনো স্থানে টিসিবির পণ্য না পাওয়ায় শহরের চারমাথা থেকে সকালে এসেও তেল-চিনি ছাড়াই বাড়িতে ফেরেন রোকসানা খাতুন।
সকাল আটটার দিকে এসেও পণ্য পাননি কলোনী এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা খাতুন। সেউজগাড়ি থেকে সকালে পণ্য কিনতে এসে খালি হাতে ফেরেন রোজিনা বেগম। তারা বলেন, অভাব না থাকলে কেউ এভাবে লাইনে দাঁড়ায় না। এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিতে আসলে তাদের পাওয়ার নিশ্চয়তাও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গতকাল থেকে বগুড়া শহরে প্রতিদিন পাঁচটি ডিলারের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রয় হচ্ছে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন পণ্য বিক্রির কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসক।
দিনে প্রতি ডিলার ৪০০ জনকে পণ্য দিতে পারবেন। সেই হিসাবে বগুড়ায় প্রতিদিনে ২ হাজার মানুষ পাবেন টিসিবির পণ্য। এখানে প্রতি লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, ডাল ও ছোলা ৬০ টাকা কেজি, প্রতি কেজি চিনির দাম ৭০ টাকা।
প্রচলিত বাজার থেকে এখানে কম দামে পণ্য পাওয়ার নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। টিসিবি পন্য বিতরণ পয়েন্টে থাকা একাধিক ব্যক্তিরা জানান, সকালে হাজার দুয়েক মানুষ এখানে জমায়েত হয়। কিন্তু এত মানুষের মাঝে কোনো শৃঙ্খলা অবস্থা ছিল না। পরে সকাল ১০ টার দিকে টিসিবির ট্রাক পন্য নিয়ে চলে আসলে মুহুর্তের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। পন্য নেয়া নিয়ে এক পর্যায়ে উপস্থিত মানুষদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পন্য বিতরণে সহযোগীতা করে।
আজ শহরের জেলখানা মোড়ে সকাল থেকে প্রায় দেড় হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে জানান জাহিন ট্রেডার্সের তদারকি কর্মকর্তা আব্দুল কাফি।
তিনি বলেন, বর্তমানে টিসিবির পণ্যের অনেক চাহিদা। মানুষ সকাল থেকে বসে থাকেন ডাল-তেল-চিনি কেনার জন্য। আজও প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার মানুষ এসেছেন পণ্য কিনতে। কিন্তু আমাদের কাছে তো ৪০০ জনকে দেওয়ার মতো পণ্য আছে। এর বেশি মানুষ আসলে তাদের দেওয়া সম্ভব হবে না।
পণ্য কিনতে আসা লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না উল্লেখ করে কাফি বলেন, আজ মানুষের চাপ পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিতে হয়েছে।
বগুড়ায় টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলতে বলে জানান জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা।