দিবস

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আজ: তামাক কোম্পানির কূটকৌশল রুখে দাঁড়ানোর ডাক

আজ শনিবার, ৩১ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২৫। প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) উদ্যোগে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য:

“তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি”।

দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (NTCC) এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ নানা সামাজিক সংগঠন দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর বাণী: “নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করুন”
দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন,

“তামাকজাত পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোকসহ নানা প্রাণঘাতী রোগের উৎস এই তামাক। তরুণদের আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানিগুলো নানাবিধ চাতুরী ও বিজ্ঞাপনী কৌশল গ্রহণ করছে।”

তিনি আরও জানান, “ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে এবং তামাকপণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করেছে, যা একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।”

বিপজ্জনক পরিসংখ্যান

বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর তামাকজনিত কারণে মৃত্যু হয় ৮০ লাখ মানুষের।

শুধু বাংলাদেশেই প্রতিবছর তামাক প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়।

দেশে ৪ কোটিরও বেশি মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার।

পরিবেশ ও কৃষিতে তামাকের ভয়াবহ প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক চাষে আবাদযোগ্য জমি হ্রাস পাচ্ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক নদী ও জলাশয়ে মিশে মৎস্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩১% বননিধনের জন্য দায়ী তামাক।

তরুণদের লক্ষ্যবস্তু করছে তামাক কোম্পানি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে,

“১৩-১৫ বছর বয়সী প্রায় ৩.৭ কোটি কিশোর-কিশোরী বিশ্বজুড়ে তামাক ব্যবহার করছে।”

এছাড়া CDC-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, ২১ বছর বয়সের আগেই যারা তামাক ব্যবহার শুরু করে, তাদের মধ্যে আসক্তির হার সবচেয়ে বেশি।

প্রজ্ঞার আহ্বান: “আইনের দ্রুত সংশোধন প্রয়োজন”
তামাকবিরোধী গবেষণা সংস্থা প্রজ্ঞা জানিয়েছে,

“তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী বিলম্বিত করতে তামাক কোম্পানিগুলো সরাসরি নীতিনির্ধারণীতে প্রভাব বিস্তার করছে। তাই দ্রুত আইন চূড়ান্ত করে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত’, ‘ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং নিষিদ্ধ’ এবং ‘CSR কার্যক্রম বন্ধ’ করার সুপারিশ জানাচ্ছি।”

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন,

“তামাক আমাদের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এটি রুখতে এখনই প্রয়োজন কঠোর আইন ও কর কাঠামো।”

করণীয়: সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান
বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্যবিদদের মতে, তামাকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চিকিৎসক, গণমাধ্যম, শিক্ষক, অভিভাবক এবং তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক।
তারা বলছেন, “শুধু সরকার নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের সচেতনতাই পারে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে।”


বিশ্বে একমাত্র বৈধ পণ্য যার ব্যবহার নিশ্চিত মৃত্যুর পথ তৈরি করে—তামাক। তাই শুধু একদিন নয়, প্রতিটি দিন হতে হবে তামাকবিরোধী প্রতিরোধের দিন। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের প্রত্যেককেই হতে হবে সচেতন ও দায়িত্ববান।

আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ ধূমপান ছাড়তে চাচ্ছেন? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেল্পলাইন ১৬২৬৩-তে যোগাযোগ করুন। থাকুন সুস্থ, বাঁচান জীবন।

এই বিভাগের অন্য খবর

এছাড়াও দেখুন
Close
Back to top button