
বুধবার রাত ৮টা ৩৮ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে শ্বশুর বুলবুল আহম্মেদ প্রামাণিকের ফোনে কল করেন উম্মে হাবিবা। ফোনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “হ্যালো, আব্বু। বাড়িত আসেন তো।” উত্তরে বুলবুল জিজ্ঞাসা করেন, “ক্যা (কেন)?” এরপরই শোনা যায় চিৎকার ও কান্নার শব্দ। তখনই দোকান ফেলে দ্রুত বাড়ির দিকে ছুটে যান তিনি।
প্রেমে প্রত্যাখ্যান, কিশোরীর বাড়িতে হামলা: ছুরিকাঘাতে নিহত গৃহবধূ ও দাদী শাশুড়ি
বগুড়ার ইসলামপুর হরিগাড়ি পশ্চিমপাড়ায় প্রেমে প্রত্যাখ্যানের জেরে এক তরুণের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন গৃহবধূ উম্মে হাবিবা (২০) ও তার দাদী শাশুড়ি লাইলী বেওয়া (৬৫)। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন এক স্কুলপড়ুয়া কিশোরী।
ঘটনার বিবরণ
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, অভিযুক্ত সৈকত আহমেদ (১৮), স্থানীয় কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, দীর্ঘদিন ধরে ওই কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় বুধবার রাতে কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে তাকে জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে ছুরি নিয়ে হামলা চালান তিনি।
হামলায় কিশোরী গুরুতর আহত হন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত হন উম্মে হাবিবা ও তার শাশুড়ি লাইলী বেওয়া।
ঘটনার সময় নিহতদের পরিবারের অন্য সদস্যরা পৌরটোপা বটতলায় নিজেদের মুদি দোকানে ছিলেন।
চোখের সামনে নারকীয় দৃশ্য
বুলবুল আহম্মেদ বাড়িতে পৌঁছে দেখেন, মা ও বউমার রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। অন্যদিকে ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছে তার মেয়ে। তখনই তিনি দেখতে পান রক্তমাখা ছুরি হাতে পালিয়ে যাচ্ছে সৈকত। তার সঙ্গে আরেকজন যুবকও ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
আহত কিশোরীর অবস্থা আশঙ্কাজনক
শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানান, কিশোরীর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখনও তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়।
প্রশাসনের বক্তব্য ও পদক্ষেপ
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, “অভিযুক্ত সৈকত একজন মাদকাসক্ত ও বখাটে। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে এমন তথ্যই পেয়েছি। ঘটনার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
নিহতদের দাফন সম্পন্ন
বৃহস্পতিবার নিহত উম্মে হাবিবা ও লাইলী বেওয়ার জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
সমাজে প্রশ্ন: প্রত্যাখ্যান কি মৃত্যুর কারণ হতে পারে?
এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং সমাজে প্রেম, প্রত্যাখ্যান, তরুণদের মানসিক অবস্থা এবং নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে।