ধার্মিক ব্যক্তির আচরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় কেমন হবে?

ধার্মিকতা কেবল উপাসনালয় বা ব্যক্তিগত সাধনায় সীমাবদ্ধ নয়—এটি আচরণের একটি ধারাবাহিক রূপ। আর বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দৃশ্যমান আচরণের জায়গা হলো সোশ্যাল মিডিয়া। তাই অনলাইনে একজন ধার্মিক মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। দায়িত্ব, শালীনতা ও বিবেকবোধের সঙ্গে অনলাইনে উপস্থিত হওয়াই প্রকৃত ধার্মিকতার পরিচয়।
১) উস্কানি এড়ানোর পরিপক্বতা
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল-বোঝাবুঝি বা উত্তেজনামূলক মন্তব্য প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু ধার্মিক ব্যক্তি জানেন, প্রতিটি কথায় প্রতিক্রিয়া দেওয়া প্রয়োজন নয়। উত্তেজনার বদলে নীরবতা অনেক সময় বেশি শক্তিশালী বার্তা দেয়। রাগ বা অপমানের জবাব রাগ দিয়ে দেওয়া তাদের স্বভাব নয়।
২) বিধি–নিষেধের প্রতি দায়বদ্ধতা
যা বাস্তব জীবনে অনুচিত, অনলাইনেও তা অনুচিত—এই নীতি তারা দৃঢ়ভাবে মানেন। গীবত, অপমান, অপসংবাদ বা অশ্লীল কন্টেন্টে লাইক-শেয়ার করাকেও তারা দায়িত্বহীনতা হিসেবে দেখেন। ডিজিটাল জগতে প্রতিটি কর্মের নৈতিক মূল্য রয়েছে—এ বিষয়টি তারা ভোলেন না।
৩) দেখনদারি থেকে দূরে থাকা
ধর্মীয় বক্তব্য বা সৎকর্ম পোস্ট করে নিজের ভাবমূর্তি গড়ার প্রবণতা থেকে তারা দূরে থাকেন। আসল উদ্দেশ্য আমল প্রচার নয়, বরং চরিত্র শুদ্ধ রাখা। তাই সোশ্যাল মিডিয়াকে তারা ধার্মিকতার প্রদর্শনী বানান না।
৪) অপ্রয়োজনীয় তর্ক এড়িয়ে চলা
ধর্ম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তর্ক অনেক সময় যুক্তির চেয়ে ইগোর লড়াইয়ে পরিণত হয়। ধার্মিক ব্যক্তি এসব ঝামেলা এড়ান। তবে ভুল তথ্য ছড়ালে সংক্ষিপ্ত, শান্ত ও প্রমাণভিত্তিকভাবে সংশোধন করেন—বিতর্কে জড়িয়ে নয়।
৫) সম্মানজনক ভাষা ব্যবহার
ধার্মিকতার মূল শিক্ষা হলো সম্মান ও মানবিকতা। তাই ভাষা কখনোই আক্রমণাত্মক বা অবমাননাকর হয় না। সমালোচনা করলেও তা শালীনতার সঙ্গে করেন। অন্যের বিশ্বাস বা মতামতকে ছোট করা তাদের অভ্যাস নয়।
৬) ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দেওয়া
তারা জানেন—একটি শান্তিপূর্ণ বার্তা বা অনুপ্রেরণাদায়ক কথা অনেকের মনে আলোর সঞ্চার করতে পারে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা দয়া, সহনশীলতা ও ইতিবাচকতার বার্তা তুলে ধরেন।
৭) নিজের সীমা বোঝা
সোশ্যাল মিডিয়া জীবন নয়—এ উপলব্ধি তাদের আচরণে স্পষ্ট থাকে। অনলাইন-অফলাইনে ভারসাম্য বজায় রেখে তারা সময় ও মনোযোগের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করেন। নজর কাড়ার প্রতিযোগিতা বা অনর্থক ঝগড়ায় তারা সময় নষ্ট করেন না।
ধার্মিকতা মূলত আচরণের মধ্যেই প্রকাশ পায়, আর সোশ্যাল মিডিয়া সেই আচরণের অন্যতম পরীক্ষা। তাই একজন ধার্মিক ব্যক্তি অনলাইনে সংযম, দায়িত্ববোধ ও শালীনতা বজায় রাখেন। তাদের প্রতিটি ব্যবহারে পরিষ্কার হয়—শুধু কথায় নয়, আচরণেই তাদের পরিচয়।



