দেশে ভাইরাস জ্বরের দাপট, কারণ কী?

সারা দেশে সব বয়সী মানুষের মধ্যে এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক—সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন এই মৌসুমি ফ্লুতে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআর,বি-র যৌথ সমীক্ষা অনুযায়ী, গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা শনাক্ত বেড়েছে ২.৭৫ গুণ। চলতি জুলাইয়ে দেশের ১৯টি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে আসা ২ হাজার ৪৫৫ জন রোগীর মধ্যে প্রায় ৫৯ দশমিক ২ শতাংশের শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ২০০৭ সালের পর থেকে এটিই এক মাসে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে বয়স্ক এবং পূর্ববর্তী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এজন্য মাস্ক ব্যবহার, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শ্বাসযন্ত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মৌসুমি ফ্লু হয়, যা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণরা গুরুতরভাবে আক্রান্ত হতে পারেন।
ঢাকার বেসরকারি চাকরিজীবী মো. হাবিবের স্ত্রী ও দুই সন্তান প্রায় দশ দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। তার ছেলে আরহান প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে পরিবারের আরও দুই সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাবিব জানান, তার ছেলে আরহানের ক্লাসের আরও কয়েকজনও একই উপসর্গে ভুগছে।
শুধু হাবিবের পরিবার নয়, রাজধানীসহ সারাদেশেই এখন হাজারো মানুষ জ্বর, কাশি ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এ সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ৭৫৮ জন। গত বছর একই সময়ে মৃত্যু হয়েছিল ৭৪ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯ হাজার ৫৫১ জন।
আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বি-র তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত ১৯টি হাসপাতালে ১ হাজার ৪৫৩ জনের শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ৫ শতাংশ।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, “এ বছর সংক্রমণের হার অনেক বেশি। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলা জরুরি।” আইসিডিডিআর,বি-র সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর তানভীর আহমেদ শুভ জানান, সাধারণত সেপ্টেম্বরের পর সংক্রমণ কমতে শুরু করে, তবে এ বছর পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভয়াবহ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, “এখন আমরা একাধিক ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে আছি। তবে এর মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জাই সবচেয়ে বেশি।” তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন, জ্বর বা কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের অন্তত পাঁচ দিন বাসায় রাখার জন্য।
তিনি আরও বলেন, “ফ্লুতে সাধারণত ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী বা জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।” তথ্যসূত্র: ডেইলি স্টার