জেনে রাখুন: শীতে স্বাস্থ্যকর খাবার

শীতে এলেই বাড়ে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। তবে বাড়িতে বসে যদি শরীরের যত্ন নেওয়া, খাবারের বিষয়ে সচেতন হওয়া যায় তাহলে আর কোনো সমস্যায় ভুগতে হয় না। খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই শীতে খাবার খাওয়ার প্রতি সচেতন হোন।
তবে এই সময় আপনার শরীর ও মন চাঙ্গা রাখতে পারে কিছু খাবার। এগুলো প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন। এই খাবারগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
কোন কোন খাবারগুলো বেশি খাবেন
ব্রকলি: ব্রকলির গুণের কথা এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। ভিটামিন মিনারেলের পাওয়ার হাউজ বলা হয় ব্রকলিকে। ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি,কে,এ এবং ভিটামিন বি-৯ রয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় মিনারেলস যেমন,পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। নিয়মিত ব্রকলি খেলে আপনি সর্বদা সুস্থ থাকবেন এবং যে কোনো ভিটামিনের ঘাটতিতে ভোগার ঝুঁকি থাকবে না।
কমলা: শীতের সময়ে পাওয়া সাইট্রাস ফলগুলো বেশি মিষ্টি এবং রসালো। তাই কমলা খাওয়ার উপযুক্ত সময় শীতকাল। কমলাতে যে ভিটামিন সি রয়েছে তা আপনাকে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে। শীতকালে যেহেতু ফ্লু এর পরিমাণ বেশি থাকে সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কমলা।
আদা: আমাদের তরকারি রান্না থেকে শুরু করে চা পর্যন্ত, আদা একটি বহুমুখী উপাদান যা একাধিক উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। ঠান্ডা ও ফ্লু এর অন্যতম প্রতিকার থাকে আদায়। আদাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা গলা ব্যথা প্রশমিত করতে পারে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। শীতকালে প্রায়শ সর্দি, কাশি লেগেই থাকে সেক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে কাজ করে আদা। শীতকালে আপনার ডায়েটেও আদা যোগ করা উচিত।
বিটরুট: শীতকালে হাতের নাগালেই পাওয়া যায় বিটরুট। এর উজ্জ্বল লাল রঙ ও মিষ্টি স্বাদের জন্য বিটরুট পরিচিত। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে যাদুকরী ভূমিকা পালন করে বিটরুট। একইভাবে, যারা নিয়মিত পরিশ্রম করেন তাদের জন্যও নাইট্রেট খাওয়া ভাল, কারণ এটি মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং আপনাকে আরও শক্তিশালী বোধ করতে পারে।
শুকনো ফল: খেজুর, অ্যাপ্রিকট এবং অন্যান্য শুকনো ফল আপনার শরীরের যন্ত্রসমূহকে গরম ও স্বাভাবিক রাখবে।
মাছ ও শিম: শীতে বেশি করে মাছ খান। আমিষের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন দুই বেলা মাছ খান। খাবারে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ রাখুন। এ ছাড়া মাছের সঙ্গে শিম যুক্ত করে খেতে পারেন। মাছের ঝোলে শিম মানিয়ে যায়। ভর্তা হিসেবেও অনন্য। শিম শুধু রসনাবিলাসই করে না, তার অন্য গুণও আছে। পথ্যবিদ শামছুন্নাহার নাহিদের তথ্যানুযায়ী, শিম প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন আর মিনারেলে সমৃদ্ধ। যাঁরা সরাসরি প্রোটিন খান না, অর্থাৎ মাছ-মাংস খাওয়া হয় না, তাঁদের জন্য শিমের বিচি শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে। যাঁদের আমিষ খাওয়ায় সীমাবদ্ধতা আছে, তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। আর এই শীতে নিয়মিত শিম খেলে ত্বকও ভালো থাকবে।
মাশরুম: মাশরুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শীতে ঠান্ডা ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে মাশরুম খুব উপকারী। তাই শীতের খাবার হিসেবে আপনার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই মাশরুম রাখুন!
মধু: জ্বর ও ঠান্ডা প্রতিরোধে মধু সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। শীতের খাবার হিসেবে মধুর কোনো জুড়ি নেই। মধুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে। ঘুমানোর আগে বা সকালের নাশতার সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। ভালো হয় এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলেও।
ঘি ও মাখন: ঘি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ঘিয়ে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকার কারণে শীতকালে এটি দেহের তাপমাত্রা বাড়ায়। মাখনেও ক্যালরি থাকে, যা দেহের তাপমাত্রাকে ঠিক রাখে।
বাদাম: কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল, ভিটামিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা আমাদের ত্বক ভালো রাখে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচায়। এছাড়াও বাদাম হৃদরোগ প্রতিরোধ করে, দেহের তাপমাত্রা বাড়ায় এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ডার্ক চকোলেট: চকোলেট খেতে কে না ভালোবাসে! এটি ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচায়, দেহের তাপমাত্রা বাড়ায়, মানসিক অবসাদ দূর করে।
গ্রিন টি: গ্রিন টির মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। শীতের দিনে দুই থেকে তিন কাপ গ্রিন টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
শীতের সময় আমরা বেশি অলস ও নিদ্রাহীনতা অনুভব করি। ফলে, কাজের সময় শরীরে কষ্ট অনুভব হয়। তাই শীতকালে সময়মতো সঠিক নিদ্রার প্রয়োজন। তবেই সতেজ এবং চাপমুক্ত থাকা যায়।
শীতে এমন অনেক খাবার আছে যা খেলে বাড়তে পারে কফ। আসুন জেনে নেই শীতে কোন খাবারগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে।
১. শীতের এ সময় মিষ্টি খাবার যেমন- কেক, সিরিয়াল, বাজারজাত জুস, কোমল পানীয়, উচ্চমাত্রার চিনি দিয়ে তৈরি খাবার বেশি খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
২. ইটালিয়ান পাস্তা যদিও খেতে সুস্বাদু কিন্তু শীতের সময় এ খাবার খাওয়া ঠিক নয়। ম্যাকারনি, পাস্তার মতো খাবারগুলো অতিরিক্ত কফ তৈরি করে।
৩. শীতের সময় সব ধরনের ভাজা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এ ধরনের খাবারে উচ্চ মাত্রার ফ্যাট থাকে।
৪. শীতে অসুস্থতা এড়াতে হিস্টামিনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এ ধরনের খাবারের মধ্যে ডিম, মাশরুম, টমেটো, শুকনো ফল, দই উল্লেখযোগ্য। এসব খাবার শীতের দিনে অতিরিক্ত কফ তৈরি করে।
৫. বুকে কফ জমলে, গলা ব্যথা , সর্দি-কাশি হলে শীতের সময় চিকিৎসকরা দুগ্ধ জাতীয় খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এসব খাবার খেলে বুকে কফ জমার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়।
৬. শীতের এ সময় কফি, এনার্জি পানীয় কিংবা অন্য যেকোনো ধরনের পানীয় বেশি খেলে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পায়। এতে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং অতিরিক্ত কফ জমা হয়।