জরায়ু সিস্টে ভুগছেন নারীরা: জেনে নিন কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
শিশু থেকে নারী—সচেতন না হলে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে

বর্তমানে দেশের অনেক নারীর মাঝেই দেখা যাচ্ছে জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট হওয়ার প্রবণতা। শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই নন, এমনকি কিশোরী ও অবিবাহিত তরুণীরাও এই সমস্যায় ভুগছেন। যদিও অনেক ক্ষেত্রে এটি নিরীহ ও স্বাভাবিক নিয়মে চলে যায়, তবে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে তা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিস্ট কী ও কেন হয়?
নারীদের জরায়ুর পাশে থাকে দুটি ডিম্বাশয় বা ওভারি, যা হরমোন নিঃসরণ ও ডিম্বাণু পরিপক্ব করার কাজ করে। কখনো কখনো এসব ডিম্বাশয়ে পানিভর্তি থলে বা সিস্ট তৈরি হয়। বিশেষ করে ডিম্বস্ফুটন বাধাগ্রস্ত হলে ‘ফাংশনাল সিস্ট’ হতে পারে, যা সবচেয়ে সাধারণ।
বিভিন্ন ধরনের সিস্ট:
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): অনিয়মিত ডিম্বস্ফুটনের কারণে একাধিক সিস্ট তৈরি হয়, মাসিক চক্র ব্যাহত করে এবং সন্তান ধারণে জটিলতা তৈরি করে।
- এন্ডমেট্রিওটিক সিস্ট: মাসিক চলাকালীন তীব্র ব্যথার পাশাপাশি বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
- ডারময়েড সিস্ট: একটি জটিল টিউমার, যাতে দাঁত, চুল ও টিস্যুও থাকতে পারে।
কেন হয় এই সিস্ট?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিস্ট হওয়ার প্রধান কিছু কারণ হলো—
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
- খুব অল্প বয়সে ঋতুস্রাব শুরু হওয়া
- দেরিতে বিয়ে ও সন্তান গ্রহণ
- বংশগত প্রভাব
- অনিয়মিত যৌন জীবন
সতর্ক হোন লক্ষণ দেখলেই:
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আফরোজা খানম রুনোর মতে, নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত—
- মাসিক অনিয়ম
- তলপেটে ব্যথা, ফুলে যাওয়া
- বমিভাব, প্রস্রাবে জ্বালা
- হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
- পিঠ ও উরুতে ব্যথা, বুক জ্বালা
চিকিৎসা ও করণীয়:
চিকিৎসা নির্ভর করে সিস্টের ধরন ও লক্ষণের ওপর। অবিবাহিত কিশোরীদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন হলে ওরাল পিলের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকলে ভবিষ্যতের জটিলতাও হ্রাস পায়। জটিল ক্ষেত্রে সন্তান নেওয়ার পর ওভারি অপসারণ করাও একটি বিকল্প হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
পরিবারে কেউ আগে এই রোগে ভুগলে নিয়মিত চেকআপ করানো এবং সচেতন থাকা জরুরি। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ ও কার্যকর হয়।
নারীর সুস্থতা মানেই পরিবারের শক্তি— তাই নিজের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন, সচেতন হোন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। জরায়ু ও ওভারি সংক্রান্ত সমস্যা এড়িয়ে একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন গড়ুন।