প্রধান খবরবগুড়া জেলা

বগুড়ায় ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ, সংবাদ সংগ্রহে বাঁধা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভুল চি‌কিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল কর্তৃপ‌ক্ষের বিরুদ্ধে রোগীর স্বজন এবং ক‌য়েকজন সংবাদকর্মী‌কে হেনস্থা করার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় রোগীর স্বজনসহ সংবাদকর্মী‌দের হাসপাতাল কর্তৃপ‌ক্ষের ঘ‌রে আট‌কে রাখা হয়।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বি‌কে‌লে বগুড়া শহরের নবাববাড়ি সড়কের ডায়া‌বে‌টিক হাসপাতা‌লে এ ঘটনা ঘ‌টে। এদিন সকালে মেরিনা বেগম নাম ওই নারী মারা যান। প‌রে খবর পে‌য়ে পুুলিশ এবং আরো সংবাদ কর্মী ঘটনাস্থ‌লে উপ‌স্থিত গে‌লে প‌রি‌স্থি‌তি স্বাভা‌বিক হয়।

রোগীর স্বজনের দাবি, ডায়াবেটিক হাসপাতালের লোকজন মেরিনা বেগমের রক্তের গ্রুপ ভুল রিডিং করেছে। ফলে রোগীর দেহে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত প্রবেশ করানোর কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

মৃত ওই নারীর নাম মেরিনা বেগম (৫১)। তিনি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের রুস্তমপুর এলাকার সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী।

রোগীর স্বজনের কাছে জানা যায়, ডায়াবেটিস ও জ্বরজ‌নিত অসুস্থতা কারণে মেরিনা বেগমকে গত ১৩ ডিসেম্বর বগুড়া ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প‌রে চি‌কিৎসার জন‌্য সেখা‌নে রোগীর রক্ত পরীক্ষা ক‌রা হয়। হাসপাতাল থে‌কে রোগীর স্বজন‌দের বলা হয় রোগীর র‌ক্তের গ্রুপ এবি প‌জি‌টিভ। কিন্তু রোগীর স্বজনদের দাবি র‌ক্তের গ্রুপ ও প‌জি‌টিভ।

ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে এবি প‌জি‌টিভ বলার পর রোগীর লোকজন ওই গ্রু‌পের রক্ত সংগ্রহ ক‌রে রোগী‌কে দেই। এরপর রোগীর ব্লাড প্রেসার বে‌ড়ে যায় এবং তার প্রস্রাবের সা‌থে রক্ত আস‌তে থা‌কে। তার শারিরীক অবস্থ‌া খারাপ হ‌লে শহীদ জিয়াউর রহমান মে‌ডি‌কেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতা‌লে রেফার্ড ক‌রা হয় ডায়া‌বে‌টিক হাসপাতাল থে‌কে।‌ সেখা‌নে গি‌য়ে রোগীর আবার র‌ক্তের গ্রুপ পরীক্ষা কর‌লে শ‌জি‌মেক হাসপাতা‌লের চি‌কিৎসকরা জানান র‌ক্তের গ্রু‌প ম‌্যা‌চিং‌য়ে সমস‌্যা হ‌চ্ছে। ও প‌জি‌টিভ এবং এবি প‌জি‌টিভ দু‌টো গ্রুপই আস‌তে‌ছে। নতুন করে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার কথা জানান শজিমেকের চিকিৎসক। কিন্তু এর মধ্যে রোগী আরো অসুস্থ হ‌য়ে আজ সকা‌লে মারা যান।

রোগীর ভাতিজা ইউনুস আলী বলেন, বিষয়‌টি জানা‌তে আজ বি‌কে‌লে ডায়া‌বে‌টিক হাসপাতা‌লে এলে আমার সা‌থে দুর্ব‌্যবহার করা হয়। হেনস্থা করা হয়। এবং শ‌জি‌মেক হাসপাতাল থে‌কে‌ দেয়া কাগজপত্র আমার কাছ‌ থে‌কে তারা নি‌য়ে ছি‌ড়ে ফে‌লে।

এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ইউনুস আলী।

এসব বিষয় জানতে গিয়েই হাসপাতালের লোকজনের হাতে কয়েকজন সাংবাদিক হেনস্থা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হেনস্থার বিষয়ে ফয়সাল হোসাইন সনি নামে এক সাংবাদিক বলেন, রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের হামলা করে, আমার অফিসিয়াল পরিচয় পত্র, ব্যাবহত মোবাইল ফোন ও নগদ ৩২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা আমার প‌্যা‌ন্টের প‌কেট ছি‌ঁড়ে‌ দি‌য়ে‌ছে। ঘটনার পর মোবাইল ফোন ফিরে পেলেও পরিচয় পত্র ও টাকা ফিরে পাইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানাচ্ছি।

আরেক সংবাদকর্মী ফের‌দৌস প্রামা‌নিক ব‌লেন, তি‌নি ঘটনা জানার পর হাসপাতা‌লে গি‌য়ে মোবাইল দি‌য়ে ভি‌ডিও কর‌তে গে‌লে হাসপাতা‌লের লোকজন তার কলার ধ‌রে টানা হেঁচড়া ক‌রে। প‌রে তা‌কে গলা ধাক্কা দেয়।

ভু‌ল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর বিষয়‌টি অস্বীকার ক‌রে ডায়া‌বে‌টিক হাসপাতা‌লের প‌রিচালক ডা. মোস্তফা কামাল ব‌লেন, রোগীর স্বজনরা রোগীর বিষ‌য়ে সচেতন ছি‌লেন না। আমরাই এক প্রকার জোর ক‌রেই রোগ‌ী‌কে শ‌জি‌মেক হাসপাতা‌লে পা‌ঠি‌য়ে‌ছি।

সাংবা‌দিক‌দের অবরু‌দ্ধ বিষ‌য়ে তি‌নি ব‌লেন, সাংবা‌দিক‌দের কেউ অবরুদ্ধ ক‌রে‌নি। আমিই অবরুদ্ধ হ‌য়ে‌ছিলাম সাংবা‌দিক এবং রোগীর স্বজন‌দের দ্বারা। ভুল চি‌কিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় সাংবা‌দিক‌দের হেনস্থা সংক্রান্ত বিষ‌য়ে এক‌টি তদন্ত ক‌মি‌টি গঠ‌নের কথা ব‌লেন তি‌নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতা‌লের উপপ‌রিচলক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ ব‌লেন, বিষয়টি নি‌য়ে আমরা ক্লিয়ার না। আমাদের এখা‌নে ব্লাড গ্রুপিংয়ে রি‌ডিং ত্রু‌টিপূর্ণ ছি‌লো। এজন‌্য আমরা আবারও ফ্রেশ ব্লাড নি‌য়ে টেস্ট কর‌তে চে‌য়ে‌ছিলাম কিন্তু এর ম‌ধ্যেই রোগী মারা যায়। এখন ময়নাতদন্ত করলে রোগীর মৃত্যুর কারণ জানা সম্ভব।

ভিন্ন গ্রুপের রক্তের কারণে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঝুঁকি থাকে কিনা এমন প্রশ্নে ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এমন হলে তো মৃত্যু ঝুঁকি তো অবশ্যই থাকে। তবে এর সাথে রোগী শারীরিক আরও অনেক বিষয় জড়িত।

সার্বিক ঘটনায় বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সেরাজুল ইসলাম বলেন, একজন মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। সংবাদকর্মীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button