রাজনীতি
প্রধান খবর

একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে: জামায়াতের আমির

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ‘জাতীয় সমাবেশে’ দলের আমির ড. শফিকুর রহমান দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে।”

শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে সমাবেশের সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না। এই বাংলাদেশটাই আমরা দেখতে চাই।”

বক্তব্য শুরুর কয়েক মিনিট পর হঠাৎ পড়ে যান জামায়াত আমির। উপস্থিত নেতাকর্মীদের সহায়তায় তিনি উঠে দাঁড়িয়ে পুনরায় বক্তব্য দেন। এরপর আবারও পড়ে গিয়ে বসা অবস্থায় সমাপনী বক্তব্য শেষ করেন।

শফিকুর রহমান বলেন, “আবু সাঈদরা বুক পেতে না দাঁড়ালে, যদি বুকে গুলি না নিতেন, তাহলে আজকের বাংলাদেশ আমরা পেতাম না। তাদের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। অহংকারভরে কোনো দলকে যেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করি, রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বজায় রাখি।”

তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী যদি আল্লাহর ইচ্ছায় এবং জনগণের ভালোবাসায় মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে আমরা মালিক হব না, সেবক হব। কোনো এমপি বা মন্ত্রী সরকারি প্লট নেবে না, ট্যাক্সমুক্ত গাড়িতে চলবে না। সব কাজের অর্থবহ প্রতিবেদন জনগণের সামনে তুলে ধরতে বাধ্য থাকবে।”

দ্বিতীয়বার পড়ে যাওয়ার পর নেতাকর্মীদের উদ্বেগের মধ্যে নিচে বসেই বলেন, “আমাদের এই লড়াই কোনো অভিজাত শ্রেণির জন্য নয়। চা শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষকের হয়ে আমি কথা বলতে এসেছি। তারা যেন নিরাপদ, ন্যায্য রাষ্ট্র পায়—সেই বাংলাদেশ গড়তে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “যদি পুরনো সব ব্যবস্থাই বহাল থাকে, তাহলে চব্বিশের শহীদরা কেন জীবন দিলেন? নতুন ব্যবস্থা ও নতুন বাংলাদেশ গড়াই আমাদের লক্ষ্য।”

এদিন দুপুর ২টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মূল সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রেন, বাস ও পিকআপে করে জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে ভাড়া করা হয় চারটি ট্রেন।

সমাবেশস্থলের বাইরে বড় পর্দায় নেতাদের বক্তব্য দেখানোর ব্যবস্থা ছিল। সকাল থেকে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। উপস্থিত ছিলেন দলীয় নেতৃবৃন্দ, শিবিরের জুলাই আন্দোলনের নেতারা, আহত ও নিহতদের পরিবার।

এই সমাবেশ থেকে দলটি সাত দফা দাবি তুলে ধরে—
১. সব গণহত্যার বিচার
২. প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার
৩. জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন
৪. শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন
৫. সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন
৬. প্রবাসীদের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা
৭. জাতীয় নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এটি জামায়াতে ইসলামীর প্রথম জাতীয় সমাবেশ। অতীতে দলটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ও পুরানা পল্টনের সামনে সভা করলেও এবার প্রথমবারের মতো উদ্যানে সমাবেশ করল।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button