বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসঃ সেবার মানে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত
- বছরে রাজস্ব আয় বেড়ে ১৫ কোটি টাকা
জন ভোগান্তি নিরসন করে সেবার মান বাড়িয়ে বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এতে বেড়েছে রাজস্ব আয়। থাকছে না বিড়ম্বনা। সাশ্রয় হচ্ছে সময়। কার কাছে কতটা ভাল সেবা পেলেন তার মান নির্ণয় করে দিচ্ছেন গ্রাহকরাই। গ্রাহকদের দেয়া সেবার মানের মাত্রা অনুযায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। আবার কোন অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গত এক বছরে বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় পনের কোটি টাকা। গত দু’ বছর ধরে রাজস্ব আয় বাড়ছে। একই সময়ে ৩৭ হাজারেরও বেশি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ২শ’ জন গ্রাহক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। সাধারণ পাসপোর্টের জন্য সরকারী রাজস্ব ৩ হাজার ৪শ’ ৫০ টাকা। যা ২১ কর্ম দিবসের মধ্যে গ্রাহক হাতে পান। জরুরী পাসপোর্টের জন্য রাজস্ব ফি ৬ হাজার ৯শ’ ৫০ টাকা। যা সাত কর্মদিবসের মধ্যে ইস্যু করা হয়।
বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দু’বছর আগে ছিল দালালদের দৌরাত্ম্য। বাড়তি খরচ হতো। ভোগান্তির সঙ্গে বিড়ম্বনাও ছিল। দু’বছর আগের এই দৃশ্যপট একেবারে পাল্টে গিয়েছে। বর্তমান সহকারী পরিচালক শাহজাহান কবির যোগদান করার পরই পাসপোর্ট অফিসকে দালালমুক্ত করেন। হেল্প ডেস্ক চালু করেন। হেল্প ডেস্কে গ্রাহক আগমনের সঙ্গেই সময় লিখা হয়। সেবা নেয়ার পর প্রস্থানের সময় লিপিবদ্ধ করা হয়। কত কম সময়ে গ্রাহক সেবা পেলেন তার রিপোর্ট চলে যায় সহকারী পরিচালকের কাছে। প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নিচ তলায় কলিং বেলের সুইচ রাখা হয়েছে। বেল দেয়ার সঙ্গেই দোতলা থেকে কর্মকর্তা নিচে নেমে তাদের জন্য দ্রুত সেবা দেন। পাসপোর্ট অফিসে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা ও অভিযোগ বাক্স রাখা হয়েছে। সহকারী পরিচালক থেকে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক করা আছে।
অভিযোগ বাক্স নিয়মিত খুলে সকল অভিযোগ বিচেনায় নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সাধারণ গণশুনানির দিন ধার্য করা আছে সপ্তাহের সোম ও বুধবার। এই সময়ে পাসপোর্টের যে সকল ফর্ম পূরণের ত্রুটি পাওয়া যায় তার নিরসন করা হয়। যেমন অনেকে নির্ধারিত সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় ফি জমা না দিয়ে শাখা ব্যাংকে টাকা জমা করেন। কারও জাতীয় পরিচয়পত্রে গরমিল পাওয়া যায়। কারও টিপছাপের (ফিংগার প্রিন্ট) ত্রুটি ধরা পড়ে। এ ছাড়াও ফরম পূরণের অসামঞ্জস্যগুলো ঠিকঠাক করা হয়। গত এক বছরে এ ধরনের ১ হাজার ৯শ’ ৫৮ জনের ত্রুটি ধরা পড়ে। যার মধ্যে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭শ’রও বেশি ত্রুটি নিরসন করে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে।
পাসপোর্ট অফিসে এই প্রথম অনুপ্রেরণামূলক স্টল রাখা হয়েছে। যেখানে আছে কাগজ, কলম, গাম, চকোলেট, চিপস। প্রতিটির সঙ্গে মূল্য লিখা আছে। স্টলে কোন বিক্রেতা নেই। গ্রাহক নিজেই প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে মূল্য পরিশোধ করে। এই স্টল রাখার কারণ: গ্রাহকের কাছে অনেক সময় কলম কাগজ থাকে না। দূরের গ্রাহক অভুক্ত হয়ে পড়েন। তার জন্য এই সুযোগ রাখা হয়েছে। তার পাশেই আছে মানবতার চর্চা স্টল। সেখানে কেউ ইচ্ছা করলে পুরনো কাপড় জমা দিতে পারেন। যা দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
খোঁজখবর করে জানা গেল, বগুড়া ছাড়া দেশের আর কোন পাসপোর্ট অফিসে এ ধরনের ব্যবস্থা নেই। এই বিষয়ে সহকারী পরিচালক শাহজাহান কবির বলেন, যতটা সম্ভব সাধ্যের মধ্যেই এই কাজগুলো করছেন। যাতে সাধারণের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসের ভুল ধারণা পাল্টে যায়। তিনি সেবার মান আরও বাড়াতে সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। লক্ষ্য করছেন, অনেকে ফরম পূরণে নানা ধরনের ভুল করেন। এজন্য কিছু তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাসপোর্ট অফিসে রেখে দিলে তারা গ্রাহকের ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে দেবে। প্রতিটি ফরম পূরনের জন্য সেই তরুণদের ন্যূনতম একটা সম্মানীর ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা ভেবে দেখতে বলা হয়েছে।
বগুড়া পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে কথা হয় সদরের ছিলিমপুরের আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। এমন সেবা পেয়ে তার ভুল ভেঙ্গে গিয়েছে। দুপচাঁচিয়ার আনিসুর রহমান বললেন, শুনেছিলেন দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। এখন পাসপোর্ট অফিসার নিজেই কাজ করে দিলেন। নগরীর জলেশ্বরিতলার হোসনে আরা বেগম পাসপোর্ট সরবরাহ নিতে এসেছিলেন। বললেন, ফরম পূরণ করে জমা দেয়ার পর দ্রুত ছবি তুলে ফিংগার প্রিন্ট নেয়া হয়েছে। কালক্ষেপণ হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তিনি পাসপোর্ট পেলেন। সহকারী পরিচালক শাহজাহান কবির বলেন, গ্রাহক সেবায় কোন সমস্যার উদ্ভব হলে যতটা সম্ভব নিজেই তা সমাধান করে দেন। বড় সমস্যাগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়। তারপরও ফলোআপে রাখেন যাতে গ্রাহক দ্রুত সেবা পান।
সূত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ