শাজাহানপুর উপজেলা

বগুড়া শাজাহানপুরে ৩য় শ্রেণীর এক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু

বগুড়া শাজাহানপুরের নির্ভৃত পল্লীতে কালুদাম তিতখুর গ্রামে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত আরএসএফ স্কুল এন্ড কলেজের আবাসিক হলরুমে আবদুল্লাহ আল নোমান (৮) নামের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি থেকে আত্মহত্যার কথা বলা হলেও এটি আত্মহত্যা না কি হত্যা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে ক্যাম্পাসে খেলাধুলা চলাকালে এই মর্মান্তিক চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে। নিহত শিশুটি বগুড়া সদর উপজেলার নামুজা পাল্লাপাড়া গ্রামের মোঃ মিলন সরকারের ছেলে।

আবাসিক হলের নোমানের সহপাঠী ছাত্ররা জানায়, ঘটনার সময় সকল ছাত্র মাঠে খেলাধুলা করছিল। খেলা শেষে তারা রুমে এসে নোমানের লাশ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

হলরুমের দায়িত্বে থাকা অ্যাডমিন অফিসার কামরুল ইসলাম জানান, তিনি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রুমে এসে বারান্দায় গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস অবস্থায় শিশুটিকে দেখে দ্রুত বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাপাতালে পাঠিয়ে দেন।

তৃতীয় শ্রেণির একটি শিশুছাত্রের গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার সামর্থ্য আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আরএসএফ স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মোঃ মোসতাক আহমেদ মাঈনুল ইসলাম বলেন, ‘‘ফাঁস তো দিয়েই ফেলেছে। সে ক্ষেত্রে অবিশ্বাসের কী আছে।’’

তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল ও অ্যাডমিন অফিসারের এ দাবি বিশ্বাস করতে পারছেনা শিক্ষার্থী ও সাধারণ কোন মানুষ। তারা বলছেন, ৩য় শ্রেণির একটি ছোট্র শিশুর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার সামর্থ্য নেই। তাছাড়া এতো ছোট একটি শিশুর জীবনাবসান ঘটানোর মন মানসিকতাও তৈরি হয় না। বিধায় এর ভেতরে অবশ্যই কোন রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে বলে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন।

অপরদিকে, বিষয়টি নিয়ে শাজাহানপুর উপজেলা মেডিকেল অফিসার ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ মোতারব হোসেন এবং উপ সহকারী মেডিকেল অফিসার মোঃ আবদুল কাদেরের মতামত জানতে চাইলে তারা বলেন, ৮ বছরের একটি শিশুর জীবনের অঙ্কুরোদগমই ঘটেনা। সুতরাং এ বয়সের একটি শিশুর আত্মহত্যা করার পথ বেছে নেয়ার মনমানসিকতা তৈরি হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।

এদিকে, স্থানীয়রা জানান, ওই প্রতিষ্ঠানটিতে ইতোপপূর্বে বেশ কয়েকবার ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অসহনীয় এসব নির্যাতন সইতে না পেরে সেসময় শিশু ছাত্ররাই আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাই এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা নিয়ে যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

আর নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানিয়েছেন, খেলাধুলা বা নামাজের সময় কোন কোন শিশু শারীরিক অসুস্থতার কারণে বা অলসতা করে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে। এসময় হলরুমের দায়িত্ব ও কর্তব্যরত ব্যক্তিরা এসে কোন শিশুর লুকিয়ে থাকা দেখতে পেলে বেধড়ক নির্যাতন করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুটির মৃত্য ঘটায় আইনি ঝামেলা এড়াতে তা ফাঁসির নাটক সাজিয়ে চালিয়ে দেয়া হতে পারে বলে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন। তারা আরও জানান, প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল, অ্যাডমিন অফিসার ও হল সুপারভাইজার সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন।

এদিকে, ঘটনাটি সম্পর্কে শাজাহানপুর থানার এসআই রুম্মান জানান, তিনি ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ দেখতে পাননি। তবে আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে সেখানে গেলে তারা জানান শিশুটির লাশ ময়না তদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। তবে ময়না তদন্ত শেষে এর কারণ জানা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button