ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কনিষ্ঠ বিপ্লবী ছিলেন প্রফুল্ল চাকী
১১০ বছর আগে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা দেওয়ার চেয়ে আত্মহত্যা করাটাই শ্রেয় মনে করেছিলেন অনূর্ধ্ব কুড়ির প্রফুল্ল চাকী ৷ ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কনিষ্ঠ বিপ্লবী ছিলেন ক্ষুদিরাম বসুর সঙ্গী এই প্রফুল্ল চাকী৷
যদিও তাঁর আত্মহত্যা ঘটনা নিয়ে মতভেদ রয়েছে৷ অনেক ঐতিহাসিক অনুমান করেন প্রফুল্ল সেদিন আত্মহত্যা করেননি৷ ওইদিন তাঁকে পুলিশ নির্মম অত্যাচার করে খুন করে তা আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছিল৷ কেননা প্রফুল্লের শরীরে যে ভাবে গুলি লেগেছিল তাতে নাকি আত্মহত্যার লক্ষণ ছিল না বলে পরবর্তী কালে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল৷
১৮৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন প্রফুল্ল চাকী৷ ছোটবেলায় তাঁকে বগুড়ার ‘নামুজা জ্ঞানদা প্রসাদ মধ্য বিদ্যালয়ে’ ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে তিনি বগুড়ার মাইনর স্কুলে ভর্তি হন। ১৯০২ সালে রংপুর জেলা স্কুলে শ্রেণিতে ভর্তি হন। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় পূর্ব বঙ্গ সরকারের কারলিসল সার্কুলারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া তাঁকে স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়। এরপর তিনি রংপুরের কৈলাস রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে পড়ার সময় জীতেন্দ্রনারায়ণ রায়, অবিনাশ চক্রবর্তী, ঈশান চন্দ্র চক্রবর্তী সহ অন্যান্য বিপ্লবীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয় এবং তিনি বিপ্লবী ভাবাদর্শে রীতিমতো জড়িয়ে পড়েন৷
১৯০৬ সালে কলকাতার বিপ্লবী নেতা বারীন ঘোষ প্রফুল্ল চাকীকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। তখন প্রফুল্ল যুগান্তর দলে যোগ দেন। তাঁর প্রথম দায়িত্ব পড়েছিল পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলারকে হত্যা করার। কিন্তু এই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এর পর প্রফুল্ল চাকীকে ক্ষুদিরাম বসুর সঙ্গে কলকাতা প্রেসিডেন্সি ও পরে বিহারের মুজাফফরপুরের অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়৷
পরিকল্পনা মতো ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন এবং ঠিক হয় ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল তাঁকে হত্যা করার। সেই মতো ইউরোপিয়ান ক্লাবের প্রবেশদ্বারে তাঁরা কিংসফোর্ডের ঘোড়ার গাড়ির জন্য ওত পেতে থাকেন। একটি গাড়ি আসতে দেখে তাঁরা বোমা নিক্ষেপ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ঐ গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না, বরং দুইজন ব্রিটিশ মহিলা মারা যান তারা ছিলেন ভারতপ্রেমিক ব্যারিস্টার কেনেডির স্ত্রী ও কন্যা।
ওই ঘটনার পর তাঁরা দুজনে ঐ এলাকা ত্যাগ করেন। প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম আলাদা পথে পালাবার সিদ্ধান্ত নেন। প্রফুল্ল ছদ্মবেশে ট্রেনে করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২ মে ট্রেনে নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক পুলিশ সমস্তিপুর রেল স্টেশনের কাছে প্রফুল্লকে দেখে সন্দেহ করেন। তিনি পুলিশকে খবর দেওয়ায় মোকামা স্টেশনে পুলিশের সামনে পড়ে যান প্রফুল্ল৷ ওই অবস্থায় অবশ্য তিনি বোঝেন পালাবার পথ নেই। সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ার চেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়াই উচিত মনে করেন৷ ফলে তিনি তখন নিজের কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। যদিও তা আত্মহত্যা না হত্যা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
অন্যদিকে ক্ষুদিরাম পরবর্তীকালে ধরা পড়েন এবং তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তবে ব্রিটিশ পুলিশ ইনস্পেকটর নন্দলালকে ৯ নভেম্বর ১৯০৮ সালে হত্যা করে প্রফুল্ল চাকীকে ধরিয়ে দেওয়ার বদলা নিয়েছিলেন অপর দুই বাঙ্গালি সশস্ত্র বিপ্লবী৷