দুপচাঁচিয়া উপজেলা
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম শাহজাহান আর নেই
এমদাদুল, দুপচাঁচিয়া ,বগুড়া: বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম শাহজাহান আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ঢাকার উত্তরায় বেসরকারি একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল পৌণে ৯টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ও নাতি রেখে গেছেন। আগামীকাল বুধবার তালোড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে নিজ গ্রাম বেলঘড়িয়া পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। তাঁর মৃত্যুতে বগুড়া মুক্তিযোদ্ধারা শোকাহত হয়ে পড়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সহযোদ্ধা সাংবাদিক সারওয়ার খান জানান, এবিএম শাহজাহান ১৯৪৭ সালে বগুড়ার তালোড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই অত্যন্ত মেধাবী শাহ্জাহান রাজনীতি সচেতন ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনকারী এবিএম শাহজাহান যুদ্ধকালীন মুজিববাহিনীর বৃহত্তর বগুড়ার কমা-ার ছিলেন। তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোটের মনোনয়নে বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে আবারও সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি জনতা ব্যাংকের পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯০ সালের গোড়ায় তিনি পাট প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। একই বছরের ডিসেম্বরে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কিছুদিন পর তিনি দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব নেন। এবিএম শাহজাহান ২০০৩ সালে ঢাকায় এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। সে সময় তিনি দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে ২০০৪ সালে তিনি বগুড়ায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ এবং একই সঙ্গে সক্রিয় রাজনীতি থেকেও অবসর গ্রহণের ঘোষণা দেন। এর পর থেকে রণাঙ্গণের বীর এই যোদ্ধাকে আর রাজনীতির ময়দানে দেখা যায়নি। সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনকালে তিনি বগুড়ার সান্তাহার কলেজ এবং তালোড়া শাহ্্ এয়তেবাড়িয়া কলেজ সরকারিকরণ করেন। এছাড়া তালোড়ায় তিনি একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জও প্রতিষ্ঠা করেন।
বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব এবিএম শাহ্্জাহানের স্ত্রী হাফিজা খাতুন সরকারের যুগ্ম সচিব ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি অবসরে যান। বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সবেক জেলা কমা-ার রুহুল আমিন বাবলু জানান, এবিএম শাহজাহানের মৃত্যুতে জেলার ৩ হাজার মুক্তিযোদ্ধা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি বলেন, ‘এবিএম শাহ্্জাহান যেমন মেধাবী ছিলেন তেমনি সাহসীও ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন গুণী ব্যক্তিকে হারালেন।’
এবিএম শাহ্জাহানের ভাতিজি সাজিয়া আফরিন সোমা অনলাইন দৈনিক ‘পুণ্ড্রকথাডটকমডটবিডি’র অন্যতম উদ্যোক্তা। সোমা জানান, তাঁর চাচা এবিএম শাহ্জাহান দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। কয়েক বছর আগে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। এরপর থেকেই শারীরিক নানা অসুস্থতার কারণে তাকে ঘন ঘন হাসপাতালে নিতে হতো। সর্বশেষ গত রোববার তাঁকে ঢাকার উত্তরায় লুবনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবণতি হলে সোমবার তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তিনি তাঁর চাচার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। রণাঙ্গণের বীর যোদ্ধা এবিএম শাহজাহানের মৃত্যুতে বগুড়া লাইভ পরিবার গভীর শোক প্রকাশ করছে।