দুপচাঁচিয়া উপজেলা

বগুড়ার তালোড়ায় নিজ গ্রামে সাবেক মন্ত্রী এবিএম শাহজাহানের দাফন সম্পন্ন

এমদাদুল হোসেন (বগুড়া লাইভ) : রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ৫ দফা জানাযা শেষে হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চির নিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম শাহজাহান।

বুধবার (৯ই মে) বাদ যোহর তালোড়া আলতাফ আলী হাইস্কুল মাঠে ৪র্থ জানাযা শেষে ও নিজ গ্রামে আর এক দফা জানাযা শেষে নিজ গ্রাম বেল ঘড়িয়ায় পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়।

মরহুমের নামাযে জানাযায় স্মৃতিচারণ করে বক্তারা বলেন, দেশের এ ক্লান্তিকালে এবিএম শাহজাহানের মতো বর্ষিয়ান নেতা হারানো খুবই বেদনাদায়ক। তার আকস্মিক মৃত্যুতে শুধু তালোড়া,বা বগুড়ার ক্ষতিই হয়নি বরং উত্তরবঙ্গ তথা পুরো বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে।এ নেতাকে হারিয়ে দেশ ও জাতির অপূরণীয় যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবার নয়। এ বি এম শাহজাহান শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন উদার মনের মানুষ। তিনি যখন সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী ছিলেন তখন এলাকার উন্নয়ন ছাড়া কিছুই বুঝেননি। দল মতের ঊর্ধ্বে থেকে তিনি উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। দলের নেতা-কর্মীদেরকে সু-সংগঠিত করে রেখেছেন। এমন নেতা খুঁজে পাওয়া খুবই দুঃসাধ্যের বিষয়।’

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দেশ আর দেশের মানুষকে অনেক দিয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রচুর কাজও করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সহযোদ্ধা সাংবাদিক সারওয়ার খান জানান, এবিএম শাহজাহান ১৯৪৭ সালে বগুড়ার তালোড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই অত্যন্ত মেধাবী শাহ্জাহান রাজনীতি সচেতন ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনকারী এবিএম শাহজাহান যুদ্ধকালীন মুজিববাহিনীর বৃহত্তর বগুড়ার কমা-ার ছিলেন। তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোটের মনোনয়নে বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে আবারও সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি জনতা ব্যাংকের পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯০ সালের গোড়ায় তিনি পাট প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। একই বছরের ডিসেম্বরে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কিছুদিন পর তিনি দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব নেন। এবিএম শাহজাহান ২০০৩ সালে ঢাকায় এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। সে সময় তিনি দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে ২০০৪ সালে তিনি বগুড়ায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ এবং একই সঙ্গে সক্রিয় রাজনীতি থেকেও অবসর গ্রহণের ঘোষণা দেন। এর পর থেকে রণাঙ্গণের বীর এই যোদ্ধাকে আর রাজনীতির ময়দানে দেখা যায়নি। সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনকালে তিনি বগুড়ার সান্তাহার কলেজ এবং তালোড়া শাহ্ এয়তেবাড়িয়া কলেজ সরকারিকরণ করেন। এছাড়া তালোড়ায় তিনি একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জও প্রতিষ্ঠা করেন।
বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তিনি অনুসরণীয়।

তালোড়া হাইস্কুল মাঠে ৪র্থ জানাযার সময় তার বড় ছেলে হাফিজুল আদিত বলেন;”উনার(এ.বি.এম শাহজাহান)পরিচয় আছে।উনি এমপি ছিলেন,মন্ত্রী ছিলেন, মহাসচিব ছিলেন,উনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।উনার এত পরিচয় থাকা সত্তেও,উনার সবচেয়ে বড় পরিচয় উনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।উনি পরিবারে যতেষ্ট সময় দিতে পারে নি।সারাজীবন জনগণের কথা ভেবে, জনগনকে ভালবাসে, জনগনের জন্য কাজ করে গেছেন”।বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে উনি উনার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান।
রণাঙ্গণের এই বীর যোদ্ধা এবিএম শাহজাহানের মৃত্যুতে বগুড়া লাইভ পরিবার ও গভীর ভাবে শোকাহত

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button