সারিয়াকান্দি উপজেলা

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা ও বাঙালী নদীর চরাঞ্চল বাদামের বাম্পার ফলন

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা ও বাঙালী নদীর চরাঞ্চল থেকে বাদাম উত্তোলন শুরু হয়েছে। বিনা মুলধনে নদীর পতিত জমিতে বাদাম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে চাষিরা। জেলার ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলার চাষিরা জমি থেকে বাদাম তুলে বাড়ির উঠানে শুকিয়ে নিচ্ছে। সামনে ঈদ আসছে তাই বাদাম নিয়ে কাটামাড়াই এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা।

হাটে বাজারে বাদাম বিক্রির অর্থ দিয়ে অনেক পরিবাই নতুন জামা কেনাকাটা করবে। বাদামের ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে উপজেলার হাট- বাজারগুলোতে এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে। যেন ঈদ আনন্দ লুকিয়ে আছে বাদাম খোসায়।

বৃক্ষ বিহীনচরের মধ্যে উত্তপ্ত বালু আর টানা রোদের কারণে সবজি ফলাতে পারে না চাষিরা। তাই দুই নদীর হাজার হাজার বিঘা জমি পতিত থাকে। এই পতিত জমিতে স্থানীয় নদী ভাঙ্গন মানুষগুলো বাদাম চাষ করে থাকে প্রতি বছর। এই বাদম চাষিদের বড় অংশই ভূমিহীন। ভূমিহীন এই চাষিরা সারা বছর যমুনা ও বাঙালি নদীর উভয় পাশে জেগে ওঠা নদীর বালু চরে বাদাম চাষ করে থাকে। এবছর সারিয়াকান্দিতে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।

গতবারের তুলনায় এবার বাদামের দাম বেশি হওয়ায় লাভও এবার বেশি হবে। কাটা মাড়াইয়ের পর উপজেলা বিভিন্ন হাটে-বাজারে প্রতি মণ বাদাম ১ হাজার ৮শ’ হতে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর চরের বাদাম ব্যাবসায়ী জামাল আকন্দ, হজরত প্রামানিক ও আমিনুল ইসলাম জানান, তারা প্রতি মণ বাদাম চরের জমি থেকে ১ হাজার ৪শ থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা দওে ক্রয় করে থাকে। চর থেকে বাদাম ক্রয় করা, ঘোড়ার গাড়ী ভাড়া, নৌকা ভাড়া, শ্রমিক খরচ ও পরিবহন ভাড়া দিতে হয়।

এ কারণে চরের বাদাম প্রতি মণ সর্ব্বোচ দেড় হাজার টাকা মণে ক্রয় করে থাকে। আর হাট থেকে ১৭ থেকে ১৮ শত মণে ক্রয় করে থাকে। ব্যবসায়িরা জানান, অল্প পরিশ্রমে চাষীরা চরের পতিত জমিতে বাদামের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এই বাদাম বিক্রির টাকা দিয়ে যমুনা নদীর ভূমিহীন চরের বাসিন্দারা ঈদ আনন্দ করবে।

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর চরাঞ্চলের জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। ধুনট উপজেলার যমুনার বৈশাখি, রাধানগর, নিউ সারিয়াকান্দি, বতুয়ার ভিটা ও পুকুরিয়া চরাঞ্চলে প্রায় তিন হাজার হেক্টর পতিত জমিতে বাদাম চাষ করে এখন উত্তেলন শুরু হয়েছে।

ঈদের আগেই এই বাদাম রোদে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করবেন। বগুড়ার ধুনট উপজেলার চিকাসি এলাকার ইবনে সউদ জানান, যমুনা নদীর জেগে ওঠা চরে এবছরও বাদাম চাষ করেছে। যাদের জমি নেই তারা চরের পতিত জমিতে সারা বছর বিভিন্ন ফসল চাষ বাস করে থাকে। এবছর বালু পরা চরে বাদাম চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছে। ঈদের আগে এই বাদাম বিক্রি করে ভ’মিহীন চাষিরা ঈদের আনন্দ করবে। এবছর প্রতিবিঘা বাদাম বিক্রি করে খরচ বাদে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করতে পারবে। বগুড়ার ধুনট উপজেলার শহরে বাড়ি ঘাটের বাদাম চাষিরা জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে যমুনা নদীর ভাঙনে ১৪টি গ্রামের বসভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়। ফলে পথে বসে হাজার হাজার সমৃদ্ধ কৃষক। ২০ বছর পর যমুনা বুকে জাগতে শুরু করে নতুন নতুন চর।

যমুনা ও বাঙালির নদীর উভয় পাশে বেশ চর জাগে। এই চরের বালু মাটিতে চাষিরা বাদাম চাষ করে আর্থিকভাবে প্রতিবছর লাভবান হয়ে থাকে। এই বাদাম চাষিদের বেশিরভাগের চাষের কোন জমি নেই। অনেকেরই জমি ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। তারাই সারা বছর পতিত জমিতে চাষবাস করে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button