জাতীয়

সড়কপথে ঈদযাত্রা নিয়ে ভোগান্তির শঙ্কা

আসন্ন ঈদুল ফিতরের দিন যতই এগিয়ে আসছে, মানুষের ভেতর ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি ততই বেড়ে চলেছে। পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাতে ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেটে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অপরদিকে ঈদে যেতে হবে গ্রামের বাড়ি, তাই বাস-লঞ্চের টিকেট সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন রুটের বাসের ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক রকম ভোগান্তি সহ্য করেও হাজার হাজার মানুষ প্রিয়জনের কাছে ছুটে যেতে টিকেট সংগ্রহ করছেন। তবে এই ভোগান্তিও কিন্তু তাদের শেষ নয়; ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যে বাসের টিকেট কাটছেন, সেই বাসে চড়ে ঘরে ফিরতে এর চেয়েও চার গুণ ভোগান্তি সইতে হবে তাদের। কারণ রাজধানী ঢাকা থেকে সারা দেশে সড়কপথে যাওয়ার জন্য ছয়টি বড় মহাসড়কের বিভিন্ন অংশের বেহাল দশা। এসব সড়কে ছোট-বড় অনেক খানাখন্দ, গর্ত ও সংস্কারের কাজ চলার কারণে প্রায়ই সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। অথচ দেশের ৬৪ জেলায় যাওয়ার জন্য এই ছয়টি মহাসড়কের ওপরেই ভরসা লাখ লাখ মানুষের।

বেসরকারি একটি সংস্থার গবেষণা বলছে, এবার ঈদে সড়কপথে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ বাড়ি যাবেন। ছয়টি মহাসড়ক ছাড়াও দেশের অন্য যে সড়কগুলো রয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। আর বৃষ্টি এবার বাড়িয়ে দিতে পারে সড়কের যানজট।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অবস্থা

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উত্তরবঙ্গের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ২৩ জেলার মানুষ চলাচল করেন। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর থেকে উত্তরের মানুষের ঢাকায় আসার কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছিল। কিন্তু এই সড়কের চার লেনের কাজ শুরুর পর থেকে ঢাকার চন্দ্রা মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার পথে প্রায়ই আট থেকে ১০ ঘণ্টার যানজটে পড়েন সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও গাজীপুর বাইপাস হয়ে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনগুলো চন্দ্রা মোড় হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে চলে যায়। দুই দিকের যানবাহনের প্রবেশমুখ হওয়ার কারণে প্রায়ই ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় এই চন্দ্রা মোড়ে। আর চন্দ্রা মোড় থেকে টাঙ্গাইল, এলেঙ্গা পর্যন্ত চলছে চার লেনের কাজ। এরপর সেতু পার হলেই সিরাজগঞ্জ, হাটিকুমরুল, শেরপুর, মোকামতলা, গাইবান্ধার কিছু অংশসহ রংপুর পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছোট-বড় শত শত খানাকন্দ ও গর্ত। এসব কারণে ঢাকা থেকে রংপুর যেতে সময় লাগে প্রায় ১৬-১৮ ঘণ্টা । তবে স্বাভাবিকভাবে এই সড়কে ঢাকা থেকে রংপুর যেতে সময় লাগত ৮-১০ ঘণ্টা।

গতকাল রংপুর থেকে ঢাকায় আসা বাবলু মিয়া নামের এক ব্যক্তি  জানান, রাত ১১টার বাসে উঠে বিকেল ৪টায় ঢাকার টেকনিক্যাল মোড়ে এসে পৌঁছেন তিনি। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে তার সকাল ৭-৮টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছার কথা। সড়কের বেহাল দশাকেই এর জন্য দায়ী করেন তিনি।

প্রত্যেক ঈদের সময় এই সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় প্রায় চার গুণ। কারণ ঈদ উদযাপন করতে যাওয়া সাধারণ মানুষ বাড়তি গাড়ি রিজার্ভ করে নেন বাড়ি ফিরতে। এ ছাড়াও বাড়তি যাত্রীর চাপ সামলাতে গাড়ির মালিকরা এই সড়কে যোগ করেন বাড়তি গাড়িও। কিন্তু এবার ঈদের সময় গত কয়েক বছরের চেয়ে ভোগান্তি বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা।

আবহাওয়ার কারণে বাড়তে পারে সড়কের ভোগান্তি

চলতি বছরের ঈদুল ফিতর এবার পালিত হচ্ছে ভরা বর্ষার মৌসুমে। বাংলাদেশের প্রকৃতির ধারা অনুযায়ী বছরের জুন-জুলাই মাসে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটে। সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ বৃষ্টি হওয়ার ফলে সড়কের অনেক স্থানে পানি জমে যায়। ভাঙা ও খানাখন্দ-গর্তে যানবাহনের চাকা পড়ে গিয়ে নানা রকমের দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। ফলে ওই সড়কগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রাপথে যদি প্রবল বৃষ্টি সঙ্গী হয়, তবে তাদের পড়তে হতে পারে ভয়াবহ যানজটের কবলে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঈদের আগমুহূর্তে অর্থাৎ ১০ থেকে ১৬ জুন—এই সময়ে নিয়মিত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র : প্রিয়.কম

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button