বগুড়ার ইতিহাস

মরহুম মৌলবী মুজিবুর রহমান ভাণ্ডারী সাহেবের ইতিহাস

বগুড়া লাইভ: মরহুম মৌলবী মুজিবুর রহমান ভাণ্ডারী সাহেব ১ ডিসাম্বর ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া সদর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাহাঁর পিতা মরহুম শেখ ময়েজ উদ্দিন এবং পিতামহ মরহুম শেখ তমিজ উদ্দিন। জানা যায় তাহাঁর পূর্বপুরুষগণ প্রায় তিন শতাধিক বছর পূর্বে ভারতের পাঠনা হতে আগমন করে বগুড়া শহরে বসতি স্থাপন করেন। পিতা-মাতার চার পুত্র সন্তানের মধ্য তিনিই প্রথম।

তাহাঁরই সহোদর মরহুম হাবিবুর রহমান অবিভক্ত পাকিস্থান জাতীয় পরিষদের দুইবার বার এমএনএ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

কর্ম জীবনঃ
তিনি খুব বেশি পড়া-লেখার সুযোগ লাভ করতে পারেননি। সেইজন্য তিনি অল্প বয়সেই কর্ম জীবন শুরু করেন। মরহুম মৌলবী মুজিবুর রহমান ভাণ্ডারীর প্রথম কর্ম জীবন শুরু হয় ক্ষুদ্র বিড়ি কারবারের মধ্য দিয়ে।
প্রকাশ থাকে যে, বেকার জীবনে তিনি প্রস্তুত কাজে পারদর্শী লাভ করেছিলেন। অল্প কিছুদিনের মধ্য তিনি ক্ষুদ্র পরিসরে বিড়ি প্রস্তুত কারখানা স্থাপন করেন। তৎকালীন সময়ে এতদঞ্চলে কলকাতার নাসির, লতিফ,ঝান্ডি, মিঠেকড়া ও মোহিনী প্রভৃতি বিড়ির প্রচলন ছিল। উল্লেখ্য যে, এতদঞ্চলে বিড়ি প্রস্তুত প্রণালী তিনি প্রথম শিক্ষা দেন। তিনি বগুড়া শহরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বেকার,গরিব, দুস্থদের বাড়ি বাড়ি ঘুড়িয়া নগন্যতম সম্বলের সাহায্যে লোকদিগকে কর্মানুরাগী করার মাধ্যমে বিড়ি তৈরির কাজে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।

বগুড়ায় বিড়ি প্রস্তুত শুরু হইলে শান্ত পরিবেশের মধ্য কিছুদিনের মধ্য মরহুম মৌলবী মুজিবুর রহমান ভাণ্ডারীর কারখানায় প্রতিদিন ১৮-১৯ লক্ষ বিড়ি প্রস্তুত হয়।

বিড়ি শিল্পে সাফল্য অর্জনের পর বগুড়ায় কটন মিল স্থাপন করেন। জানা যায়, কটন মিলে প্রায় বার শত শ্রমিক কর্মরত ছিল। পঞ্চাশের দশকে বগুড়ায় শিল্পকারখানা স্থাপনে তিনি অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেন। আল্লাহ্‌ পাকের রহমত,পরিশ্রম এবং অসাধারণ মোনবলের মাধ্যমে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ১০টি শিল্প কারখানা স্থাপন করে তিনি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তাহাঁর প্রতিষ্ঠিত শিল্প কারখানা সমুহে প্রায় তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছিল। বস্তুতঃ ভাণ্ডারী পরিবারের এই সাফল্যে তিনিই সূচনা করেছিলেন।

সমাজসেবাঃ
সমাজসেবায় মরহুম মৌলবী মুজিবুর রহমান ভাণ্ডারী সাহেবের অবদান অপরিসীম। তৎকালীন সময়ে বগুড়া জেলার খুব কম সংখ্যক লোক দান খয়রাতের সংগে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই দিক থেকে বগুড়াবাসী অন্যান্য দেশের নিকট অতি পরিচিত ছিল। তাহার মহানুভবতায় বিদেশাগত হাজার হাজার ভিক্ষুক এদেশের দ্বারে-দ্বারে, দোকানে-দোকানে, মসজিদে-মসজিদে দেখা যেত। এমনকি প্রতি রমজান মাসে ২৫/২৬ হাজারের বেশি সংখ্যক ভিক্ষুকের জমায়েত হত। এতেই প্রতিয়মান হয় তিনি কি পরিমান সম্পদ দান খয়রাত করতেন।

তিনি প্রধানত চার প্রণালিতে দান খয়রাত করতেন।
প্রথমতঃ নিজ পাড়া-প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনদের মধ্য যাকাতের টাকা-কড়ি প্রদান করতেন।
দ্বিতীয়তঃ বস্ত্রাভাবীদের মধ্য তিনি বস্ত্র বিতরন করতেন।
তৃতীয়তঃ সাধারণ মানুষের মাঝে অবস্থানুসারে টাকা-কড়ি প্রদান করতেন।
চতুর্থতঃ প্রায় সমগ্র বগুড়া জেলার অধিকাংশ মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ নির্মানে সাময়িকভাবে মুক্ত হস্তে দান করতেন। আরও প্রকাশ থাকে যে, কলেজ এবং স্কুলের গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের তিনি মাসিক ৫/৪ হারে শিক্ষাবৃওি প্রদান করেন।

শিক্ষা এবং সেবামুলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাঃ তিনি নিজে শিক্ষালাভ করার সুযোগ না পেলেও বগুড়ার মেয়েদের এবং এতিম সুবিধাবঞ্চিতদের শিক্ষালাভের সুযোগ দানে “বগুড়া ইসলামিয়া ইয়াতিম ও মুসাফির খানা এবং নিজের নামে “মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ” প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জীবিত থাকার অদ্যবধি প্রতিষ্ঠান সমুহের দেখভাল এবং ব্যয়ভার বহন করতেন।

মরহুম মৌলবী মুজিবুর রহমান ভাণ্ডারী সাহেব সম্পর্কে বগুড়ার প্রসিদ্ধ লেখক কাজী মোহাম্মদ মিছের লিখেছেন-“সত্য কথা বলিতে কি, বগুড়া জেলা সংগঠন হইবার পর হইতে এরুপ লোকের আবির্ভাব হয় না। ইহাই প্রথম। লক্ষপতি-দক্ষদাতা-দানবীর। বগুড়ার মত ইতিহাসপ্রসিদ্ধ স্থানে বহুদিন হইতেই এরুপ একজন লোকের অভাব ছিল, সত্যিই আজ তাহা পূর্ণ হইতে চলিতেছে।”

মরহুম মৌলবী মুজিবুর রহমান ভাণ্ডারী সাহেব ৪ মে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরন করেন। তাকে নামাজগড় ভাণ্ডারী পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

Writter. Golam Zakaria Kanak

তথ্যসূত্রঃ
১. বগুড়ার ইতিহাসঃ শ্রী প্রভাস চন্দ্র রায়।
২. বগুড়ার ইতিকাহিনী- কাজী মোহাম্মদ মিছের।
৩. বগুড়া সেতিহাস-আক্তার উদ্দিন মানিক।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button