সড়ক র্দুঘটনায় ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল ৪০ জনের
বগুড়া লাইভ: প্রতিদিনই দেশের সড়ক-মহাসড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৮ জন। এদের মধ্যে গাইবান্ধায় ১৮, রংপুরে ৬, গোপালগঞ্জে ৩, সিরাজগঞ্জে ২, নাটোরে ৩, লক্ষ্মীপুরে ২, ফরিদপুরে ২ ও টাঙ্গাইল, সাভার, ফেনী এবং চুয়াডাঙ্গায় একজন রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে কয়েক শতাধিক মানুষ। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার ভোররাত পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
গাইবান্ধার রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পলাশবাড়ির মহেশপুর এলাকায় শনিবার ভোরে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে খাদে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ৯ হন ও হাসপাতালে নেয়ার পর আরও ৯ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ২৮ যাত্রী।
ঢাকা থেকে আলম এন্টারপ্রাইজ (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৬৪২২) নামে একটি যাত্রীবাহী নৈশকোচ ঢাকা-রংপুর- সৈয়দপুর-ঠাকুরগাঁও এর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। বাসটি পলাশবাড়ির মহেশপুর এলাকায় পৌঁছলে চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। দুর্ঘটনা কবলিত এলাকার বাসিন্দা আবুল মিয়া জানান, প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে তিনি রাস্তার পাশে এসে দেখেন বাসটি এলোমেলো ভাবে দ্রুত গতিতে চালানো হচ্ছে।
বাসের ভেতরে থাকা যাত্রীরা বাচার জন্য চিৎকার করছিলেন। মুহূর্তেই বাসটি গয়েশপুর ব্র্যাক অফিসের সামনে একটি বড় গাছে সজোরে ধাক্কা খায়। এ সময় গাছটি উপড়ে পড়ে ও গাছের ডাল ভেঙে বাসের বিভিন্ন অংশ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে উল্টে যায়। বিকট শব্দ শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে উল্টে পড়ে থাকা বাসের ভেতর থেকে টেনেহিঁচড়ে ৩ শিশু নারীসহ ৯ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন য়ৌথ চেষ্টা চালিয়ে বাসের নিচে চাপা পড়া ২৮ যাত্রীকে উদ্ধার করে। পরে পলাশবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ৮ জন মারা যায়।
নিহত ৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার এমদাদ আলী, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ইউনুস আলী, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মিনারুল খান, কুড়িগ্রাম রাজীবপুর উপজেলার মাসুদ রানা, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আবদুর রশিদ, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার জহিরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রুবেল মিয়া ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার আখতারুল ইসলাম। তারা পেশায় গরু ব্যবসায়ী, পোশাক শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিক।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পরপর যাত্রীদের উদ্ধার করলেও কে যাত্রী বা কে বাসের চালক তা খুজে পাওয়া যায়নি। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স এর অভাবে অন্তত ১৪ জন মুমূর্ষু যাত্রীকে পলাশবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর বাড়ান্দায় ফেলে রাখতে হয়। হাসপাতালের চিকিৎসককেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্মচারীদের।
পরে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল ঘটনাস্থলে পৌঁছে জরুরি ভাবে গাইবান্ধা থেকে অ্যাম্বুলেন্স এনে ১২ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর দেড়টায় আরো ২ জন মারা যায়। তবে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও নিহতদের লাশ সৎকার ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ সময় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
রংপুর থেকে জানান, রংপুরে বালু বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় বিআরটিসি বাসের ৬ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ৬ জন। আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার মধ্যরাতে সদর উপজেলার পাগলাপীর সলেয়াশাহ্ এলাকায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে বিআরটিসি’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলা স্পেশাল বাস (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৫১৯৩) দিনাজপুর থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসটি নীলফামারীর সৈয়দপুর এলাকায় আসলে পাংচার হয়ে যায়। শনিবার মধ্য রাতে সদর উপজেলার পাগলাপীর সলেয়াশাহ্ এলাকায় বাসটি এসে রাস্তার ধারে চাকা মেরামত কাজ করছিল বাসের হেল্পার। এ সময় পেছন থেকে বালু বোঝাই একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট ১৮-১৯০৪) বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে বাসে থাকা দুই নারীসহ ৬ জন যাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় ৬ জন। আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পেছনের কোনো সিগন্যাল লাইট জ্বলে না থাকার কারণে এ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে বলে জানান যাত্রীরা। নিহতদের মধ্যে দিনাজপুরের উপ-শহরের গামেন্টস কর্মী নিশাত (২০) ও সাজ্জাদ (১৯) এর পরিচয় পাওয়া গেছে।