বগুড়ার ইতিহাস

বগুড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী সাতানি পরিবারের ইতিহাস

আসাদাদুন্নেছা চৌধুরানী পৈত্রিক সুত্রে জমিদারী লাভ করেন। তিনি অকালে হিসেবে পরলোক গমন করিলে,ভতদীয় ভ্রাতা আসাদুজ্জামান চৌধুরী মরহুম গোলাম সুলতানের বিধবা স্ত্রীকে নিকাহ করিয়া ভ্রাতার অংশের সম্পত্তি লাভ করেন। সৈয়দানী আসাদাদুন্নেছা চৌধুরানীর সাতআনা অংশ তাহাঁর একমাত্র কন্যা সালেমা সয়াদাতন্নেছা প্রাপ্ত হন।

সালেমা সয়াদাতন্নেছা-এর ঢাকা জেলার তৎকালীন মানিকগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত মাচান গ্রাম নিবাসী মুন্সী আব্দুল হাফিজ সাহেবের সহিত বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। বিবাহসুত্রে তিনি স্ত্রীর সাতআনা অংশের মালিকপ্রাপ্ত হন এবং সাতানী নামে আখ্যাত হন। বিবাহ পরবর্তী সময়ে তিনি বগুড়ায় বসবাস করিতেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে একমাত্র পুত্র মরহুম খান বাহাদুর মৌলবি হাফিজার রহমান চৌধুরী জন্ম লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে মরহুম খান বাহাদুর মৌলবি হাফিজার রহমান চৌধুরী ওরফে সাতানী মিয়া সাহেব “সাতানী এস্টেটের মালিকানাপ্রাপ্ত হন।

তাহাঁর ন্যায় সর্বজন প্রিয় ও জনসাধারনের জন্য মঙ্গলজনক কার্যের উৎসাহদাতা দানবীর জমিদার তৎকালে বিরল ছিল বলিলে অত্যুক্তি হবে না। অন্নদাতা হিসেবে তিনি তৎকালে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তিনি বগুড়ায় জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান “ইয়ং মেনস মুসলিম এসোসিয়েশন” প্রতিষ্ঠা করেন। অতিথি সৎকারের জন্য তাহাঁর বাড়িতে একটি অতিথিশালা বিদ্যমান ছিল। তিনি বগুড়া জেলাবোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বেঙ্গল কাউন্সিলের সদস্যপদে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

মরহুম খান বাহাদুর মৌলবী হাফিজার রহমান চৌধুরী ওরফে সাতানি মিয়া

মরহুম খানবাহাদুর হাফিজুর রহমান চৌধুরী-এর জীবন চরিত্র:

মরহুম খানবাহাদুর হাফিজুর রহমান চৌধুরী জুলাই ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলার সাতানি জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মুন্সী আব্দুল হাফিজ ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত মাচান গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি বিবাহ সুত্রে বগুড়ায়
স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মাতা মরহুমা সালেমা সয়াদাতন নেছা সাতানি জমিদার কন্যা ছিলেন। তিনি উত্তরাধিকার সুত্রে জমিদারির
মালিকানাপ্রাপ্ত হন। মরহুম খানবাহাদুর হাফিজুর রহমান চৌধুরী তাহার পিতা- মাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন। তিনি জমিদার হিসেবে সর্বসাধারণের নিকট “সাতানি মিয়াঁ” নামে সুপরিচিত ছিলেন।

বগুড়া জিলা স্কুলে ভর্তির মাধ্যমে তিনি তাহার শিক্ষা জীবন শুরু করেন। তিনি ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বোর্ডের অধীনে বগুড়া জিলা স্কুল হতে এন্ট্রাস পাশ করেন। মরহুম মৌলবী খানবাহাদুর হাফিজুর রহমান চৌধুরীর ন্যায় সর্বজন প্রিয় ও জনসাধারনের জন্য মঙ্গলজনক কার্যের উৎসাহ দাতা দানবীর জমিদার তৎকালে বিরল ছিল বলিলে অত্যুক্তি হবে না। অন্নদাতা হিসেবে তৎকালে বগুড়া তিনি ছিলেন অদ্বিতীয় অতিথিসেবার জন্য তিনি তাহার বাসভবনে অতিথিশালা স্থাপন করেছিলেন। বগুড়া সদর
পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রথমবারের মত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি (১৯০৩-১৯০৬), (১৯০৬-১৯০৯), (১৯০৯-১৯১২) পর্যন্ত বগুড়া সদর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি (১৯১২-১৯১৫) খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মত বগুড়া সদর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি কিছুকাল বগুড়া জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মরহুম মৌলবী খানবাহাদুর হাফিজুর রহমান চৌধুরী ২৬ জুন ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বগুড়ায় “ইয়ং ম্যানস মুসলিম এসোসিয়েশন” নামে একটি জনকল্যানকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মরহুম মৌলবী খানবাহাদুর হাফিজুর রহমান চৌধুরীর ১৯৪৩-৪৪খ্রিস্টাব্দে দুর্ভিক্ষের সময় প্রায় ১১০০ বেওয়ারিশ ও দুস্থমানুষের দাফনকার্য সমাধা করে। এই সংগঠন বগুড়া জেলাবোর্ড, বগুড়া পৌরসভার সদস্যগনের মাসিক চাঁদার ভিত্তিতে পরিচালিত হত।মরহুম মৌলবী খানবাহাদুর হাফিজুর রহমান চৌধুরী চার পুত্র এবং ছয় কন্যা সন্তান রেখে ১৭ এপ্রিল ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন।

তাহার প্রথম পুত্র মরহুম মৌলবী আহমাদুর রহমান চৌধুরী বহু জনহিতকর কার্যের সহিত সংশ্লিষ্ট থেকে এবং বগুড়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা এবং পাকিস্তান আন্দোলন কারীদের মধ্য অন্যতম ছিলেন। দ্বিতীয় পুত্র মরহুম আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান চৌধুরী বেলজিয়ামের পাকিস্তানী রাষ্ট্রদুত এবং তৃতীয় পুত্র মরহুম আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান চৌধুরী পূর্ব পাক কাউন্সিলের ব্যবস্থাপক সভার একজন সদস্য ও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।

লেখকঃ গোলাম জাকারিয়া কনক।

তথ্যসুত্র:
কাজী মোহাম্মাদ মিছের- বগুড়া ইতিকাহিনী।
শ্রীযুক্ত প্রভাস চন্দ্র সেন-বগুড়ার ইতিহাস।
ছবি সংগ্রহেঃ মাহফুজ-উর-রহমান।

বগুড়ার ইতি কাহিনী ফেসবুক পেজ

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button