জাতীয়

বগুড়ার কৃষি যন্ত্রাংশ বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি

বগুড়ায় তৈরি কৃষি যন্ত্রাংশ বদলে দিতে পারে এ অঞ্চলের অর্থনীতি।

অর্থনীতির গতি বাড়িয়ে বগুড়া জেলাকে আবারও নতুন করে দিতে পারে নতুন শিল্পের পরিচয়। সৃষ্টি হতে পারে আরও বেকারদের কর্মসংস্থান। কিন্তু ভিনদেশি পণ্যের প্রবেশ, সঠিক তদারকি না হওয়া, সরকারি সহযোগিতা না থাকা, সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়ার কারণে বগুড়ার কৃষিশিল্প মালিকদের মধ্যে অনীহার সৃষ্টি হয়েছে।

বগুড়ার বিসিকসহ জেলাজুড়ে আনাচেকানাচে গড়ে ওঠা সম্ভাবনাময় শিল্পটি সঠিক তদারক করা হলে কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেনের পাশাপাশি সৃষ্টি হবে লক্ষাধিক বেকারের কর্মসংস্থান। জানা যায়, বগুড়ায় উৎপাদিত হাজার হাজার কৃষিপণ্য ব্যবহূত হচ্ছে কৃষিকাজে। এর সঙ্গে কিছু ওয়ার্কশপে কৃষিকাজে ব্যবহার করা ছাড়াও বাসাবাড়ি, বাস-মিনিবাস, ছোট-বড় ইন্ডাস্ট্রি ও বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কলকারখানায় ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশও তৈরি হচ্ছে। প্

রতিদিন তৈরি হচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনের সেচপাম্প, লায়নার, পিস্টন, হস্তচালিত টিউবওয়েল, পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, লেদ মেশিন, গাড়ির ব্রেক ড্রাম, করাতকল, ফ্লাওয়ার মিল, টেক্সটাইল মিল, অয়েল মিল, এমনকি ধান কাটা মেশিনসহ অন্যান্য মেশিনের যন্ত্রাংশ। এসব যন্ত্রাংশের ওপর দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। বগুড়ায় তৈরি এই যন্ত্রাংশগুলো জেলার কৃষিকাজের চাহিদা মিটিয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিকাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এই শিল্পের বড় সমস্যা ভিনদেশি পণ্য আর কাঁচা মালামালের বাজারের অস্থিরতা। বিদেশি পণ্য ঠেকানো গেলে ও অস্থিরতার স্থায়ী সমাধান হলে জেলার এই শিল্পের চাকা আর্থিকভাবে দ্বিগুণ ঘুরত।

বগুড়া শহরের রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের বসাক ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের প্রোপ্রাইটর বিশ্বজিৎ বসাক বলেন, তিনি লায়নার, পিস্টনসহ শ্যালো মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি ও পাইকারি বিক্রি করেন। তিনি মাসে যা আয় করেন তা দিয়ে তার পরিবারের ভরণপোষণ চলছে। তার মতো এমন আরও অনেকেই আছেন, যারা এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

বগুড়া বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুর রহমান মিল্টন বলেন, আশির দশকে ব্যক্তি উদ্যোগে বগুড়াতেই প্রথম ফাউন্ড্রি শিল্পের কারখানা গড়ে ওঠে। বগুড়ায় ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬২টি। এর সঙ্গে আরও কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর ফাউন্ড্রি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ওয়ার্কশপ রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজারের মতো।

ফাউন্ড্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বগুড়া বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মালেক আকন্দ বলেন, গার্মেন্টের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে এই ফাউন্ড্রি শিল্প। একই সঙ্গে এই শিল্প দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বর্তমানে সারা দেশে কৃষি যন্ত্রাংশের ৮০ ভাগের জোগানদাতা বগুড়ার ফাউন্ড্রি ও মেটাল শিল্পের মালিকরা। শ্যালো ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, যানবাহনের ছোট পার্টস, কলকারখানার প্রয়োজনীয় পার্টসসহ কৃষির সব যন্ত্রাংশ বগুড়ায় তৈরি হয়।

বগুড়ায় তৈরি কৃষি যন্ত্রাংশের সারা দেশে সুনাম রয়েছে। চাহিদাও অনেক। বগুড়ায় উৎপাদিত এসব পণ্য কৃষিকাজে ব্যবহারের ফলে কৃষির সমস্যা কমিয়ে ফলন বেড়েছে। খরচ কমেছে। আধুনিক স্তরে কৃষির প্রবেশগম্যতা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। বগুড়ার শিল্পমালিকদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়। এর পরও কিছু সমস্যা থেকেই যায়। যেসব সমস্যা রয়েছে তা পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button