শাজাহানপুর উপজেলা
বগুড়ার শাজাহানপুরের কামারপাড়া সবজি চারার রাজধানী
সবজি চারার রাজধানী খ্যাত বগুড়ার শাহনগরে শতাধিক নার্সারি মালিক সবজির চারা উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছেন। প্রায় ২০ জেলার অর্ধ লক্ষাধিক কৃষক বগুড়া থেকে সবজির চারা নিয়ে চাষাবাদ করে থাকেন।
বগুড়ার শাজাহানপুরের কামারপাড়া গ্রামের হালিম নার্সারির স্বত্বাধিকারী আব্দুল আলীম এর নেশা ছিল তার পারিবারিক জমিতে সবজির চারা উৎপাদন করা। ওই সময় তাদের বাড়ির পাশে নিজস্ব জমিতে চাষাবাদের জন্য প্রথমে ১ শতাংশ জমিতে সবজির চারা উৎপাদন দিয়ে শুরু করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি অন্যের জমি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন করতে থাকেন। এভাবে পথ চলতে চলতে বর্তমানে তিনি প্রায় ২ বিঘা জমিতে চারা উৎপাদন করে একজন সফল সবজির চারা নার্সারি মালিক হয়ে তার সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন।
এ পরিমাণ জমিতে সবজির চারা উৎপাদন করে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মৌসুমে তার দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়। এ ছাড়াও তিনি অন্যান্য ফসলও চাষাবাদ করে থাকেন।
আব্দুল আলিম ছাড়াও সবজির চারা উৎপাদন করে সফলতা পেয়েছেন শাহ নগরের খোরশেদ আলম নজরুল ইসলাম, ফারুক আহম্মেদ, মমিনুল ইসলামসহ শতাধিক সবজি নার্সারি মালিক। এসব নার্সারিতে মরিচ, ফুলকপি, বাধা কপি, টমেটো, বেগুন, পেপে, শালগম, পিয়াজ, বিভিন্ন শাক-সবজির চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। বগুড়ার শাজাহানপুরের খোট্রাপাড়া ইউনিয়নের শাহ নগর, বড় পাথার, দরিকুল্লা, চুপিনগর, বোহাইল, চোপি নগর, কামার পাড়া, মোস্তাইলসহ প্রায় ১২টি গ্রামের ৪ শ’ বিঘার বেশি জমিতে সবজির চারা উৎপাদন হয়ে থাকে।
বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, নাটোর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, জামালপুরসহ ২০টির অধিক জেলার কৃষকরা এসব সবজির চারা নিতে আসেন। এসব নার্সারিতে প্রতি মৌসুমে দেশের প্রায় ২০টি জেলা থেকে সবজির চারা নিতে বগুড়ার শাহনগরে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক কৃষকের আগমন ঘটে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় এখানে সবজির চারা নিতে এসে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় কৃষকদের। বিশেষ করে দূর দূরান্ত থেকে আসা কৃষকদের থাকা খাওয়ার সমস্যা প্রকটভাবে হয়। আর এ সমস্যা দূর করতে সমিতির সদস্যরা একটি নিয়ম করেছেন। তা হলো, যে নার্সারি থেকে কৃষকরা সবজির চারা নিতে এসে সমস্যার সম্মুখীন হবেন সেই নার্সারি মালিক ওই কৃষকের থাকা বা খাবার ব্যবস্থা করে থাকেন। এ ছাড়াও চারা নিয়ে যাওয়ার জন্য যমুনা নদীর ঘাট পর্যন্ত এবং মহাসড়ক পর্যন্ত সবজির চারা নিতে আসা কৃষকদের পরিবহনে সহযোগিতা করে থাকেন নার্সারি মালিকরা।
কাজীপুর উপজেলার নাটুয়ার পাড়া চরের কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার শাহনগর থেকে সবজির চারা নিয়ে আমরা খুবই উপকৃত হয়ে থাকি। কারণ চরের পানি সরে যেতে সময় বেশি লাগার কারণে চরের কৃষকরা চারা তৈরির সময় পায় না। তাই তারা তৈরিকৃত চারা নিয়ে এসেই জমিতে আবাদ করতে পারে।
শাহ নগর নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন বলেন, সবজির চারা উৎপাদনে শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে উঠেছে এ অঞ্চল। অনেক কৃষককে এখন আর চারা উৎপাদনে সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয় না। তারা শুধু জমি প্রস্তুত করেই সবজির চারা লাগাতে পারেন। এতে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তারা সবজি উৎপাদন করে থাকেন। আগে বীজ পেতে খুব সমস্যা হতো। এখন সে সমস্যা নেই বললেই চলে। কারণ দেশি,বিদেশি অনেক বীজ কোম্পানির প্রতিনিধিরা এখানে এসে আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে তারা বীজ সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া কৃষি বিভাগও সব সময় আমাদেরকে সহযোগিতা করে থাকে।