শিক্ষা

স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্ন ছোঁয়ার অসাধারণ বাস্তব গল্প

বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মোঃ জাকির হোসাইন এর ছাত্রজীবনের আলোকপাত।

আমার ভর্তি হবার কথা ছিল বুয়েটে। ভর্তি হবার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আর যা যা লাগে সবই গোছানো শেষ, শুধু জমা দেওয়া বাকি।এমন সময় হাতে পেলাম বাবার চিঠি। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট শুনে বাবা অনেক আবেগ নিয়েই লিখেছিলেন,তার শখ যে তার ছেলে ডাক্তার হবে। যদিও আমার বড় বোন ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে-৩২ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন তারপরও চিঠি পড়ে আমার কেবল একটা কথাই মনে হল,বাবার এমন শখ পূরণের সুযোগ আমি জীবনে দ্বিতীয়বার পাবো না। ভর্তি হয়ে গেলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে। আজও যখন পেছন ফিরে তাকাই,মনে হয় সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল না।

সবসময়ই অন্যের জন্য কিছু করতে পারার তাগিদ অনুভব করতাম ভেতর থেকে। সেটি হতে পারে ডাক্তার হিসেবে রোগীর জন্য,শিক্ষক হিসেবে ছাত্রের জন্য কিংবা মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য। রংপুর মেডিকেলে আমি আমার কর্মজীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি। সেখানকার ছাত্রছাত্রী ও রোগীদের সাথে সবসময়ই তাদের কাছের মানুষ হিসেবে মিশে যেতে চাইতাম। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই রংপুর শহরে কয়েকজন ডাক্তার ও বিত্তবান সমাজসেবকের সাথে মিলে অসহায় বৃদ্ধদের আশ্র‍য়ের জন্য গড়ে তুলেছি একটি ‘ওল্ড হোম’। যা বর্তমানে ২০ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করছে। সভাপতি হিসেবে এখনো আমি ওল্ড হোমটি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করছি। এছাড়াও আরও অনেকের সহায়তায় প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি ‘অটিস্টিক স্কুল’ গড়ে তুলেছি। যেটার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি ৪ বছর। যদিও এ স্কুলের পিছনে প্রতিমাসেই বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয় কিন্তু অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হল আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমাজসেবী মানুষের আন্তরিকতায় স্কুলটির কার্যক্রম আমরা যথাযথভাবে চালিয়ে যেতে পারছি। স্কুলটির কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে এখনো আমি কাজ করে যাচ্ছি।

তবে আমি বলব আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন রংপুরে একটি ‘ Hypertension Centre’ গড়ে তুলতে পারা যেখান থেকে একেবারে নামমাত্র মূল্যে সেবা পাচ্ছে হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্তচাপে ভোগা ২২ হাজারের বেশি রোগী। তারা এখানে সরাসরি বিভিন্ন ডাক্তারের সেবা নিতে পারছে,তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারছে। আমি নিজেও প্রতি সপ্তাহে একদিন সেখানে রোগী দেখতে যাই।

মেডিকেলে পড়ালেখা করাটা কখনোই আমার কাছে এতটা সহজ মনে হয়নি। তবে আমি বলব শিক্ষকের সঠিক দিকনির্দেশনা ও ভালো বন্ধুর সংস্পর্শ পেলে মেডিকেলে পড়ালেখা অনেকটাই আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে। মেডিকেলের প্রথম থেকেই আমার বন্ধু সার্জারির প্রফেসর ডাঃ তপন কুমার সাহা ও মেডিসিনের প্রফেসর ডাঃ মোঃ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন সময়ে আমাকে যেভাবে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে সত্যিই তা অনস্বীকার্য। আবার আমি বিশ্বাস করি, একজন ছাত্র হল একজন শিক্ষকের সন্তান। একজন সন্তানের মাঝে যেমনিভাবে তার বাবা-মা কিভাবে তাকে গড়ে তুলেছে এর এর ছাপ পাওয়া যায়,তেমনিভাবে একজন শিক্ষকের প্রতিচ্ছবিই দেখতে পাওয়া যায় তার ছাত্রের মাঝে। আমার এখনো মনে পড়ে,প্রফেসর জি.এম.চৌধুরী স্যারের কথা। স্যারের চলাফেরা, জ্ঞানের পরিধি, মেধা,মনন,বাচনভঙ্গি আমাকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে আমি ছাত্রাবস্থাতেই মেডিসিনে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। এখনো যখন পেছন ফিরে তাকাই,মনে হয় মেডিকেলে আসার সিদ্ধান্তটি ছিল আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত। কারণ পরিবার,সমাজ ও দেশের মানুষের সেবা করার এত বিস্তৃত সুযোগ হয়তো অন্য কোন পেশাতেই পেতাম না।

#ডা. মোঃ জাকির হোসাইন এর ফেসবুুক থেকে সংগৃহিত

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button