উন্নয়নের ছোঁয়াহীন দেশের বৃহত্তম জংশনগুলোর মধ্যে অন্যতম সান্তাহার রেলওয়ে জংশন
সান্তাহার রেলওয়ে জংশনে কোটি টাকা আয় হলেও যাত্রী সেবার মান বাড়েনি
সান্তাহার রেলওয়ে জংশনটি দেশের বৃহত্তম জংশনগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে খুলনা-পার্বতীপুর ব্রডগেজ রেল চালু হলে এখানে একটি স্টেশন স্থাপিত হয়। এর পর ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে বোনারপাড়া-সান্তাহার মিটারগেজ লাইন চালু হলে সান্তাহার জংশনে পরিণত হয়। তখন এর নাম ছিল সুলতানপুর। তাই সান্তাহার রেল জংশনের সরকারী কোড এসটিইউ লেখা হয়। ১৯৪৭ সাল থেকে সুলতানপুর সান্তাহার নামে খ্যাত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, সান্তাহার রেলওয়ে জংশন সংলগ্ন সাঁতাহার নামক স্থানের নাম থেকে সান্তাহার নামকরণ হয়েছে। ইংরেজীতে সাঁতাহার লিখতে এন ব্যবহার করতে হয় যার উচ্চারণ সান্তাহারের মতই। এখানে একটি বৃহত্তম রেলওয়ে লোকোসেড ছিল যা এখন আর নেই। সান্তাহারের রেল ইয়ার্ডটি বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলইয়ার্ড যার কার্যকারিতা তেমন আর নেই।
বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চল রেলের একটি বৃহত্তম জংশন স্টেশন সান্তাহর। ত্রিমুখী রেলের সংযোগ স্থল এ জংশন স্টেশনের ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৭ টাকা আয় হলেও স্টেশনটির উন্নয়ন বা যাত্রী সেবার মান বাড়েনি। এটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন হলেও এখানে আধুনিকতার ছোঁয়া আজও স্পর্শ করেনি। এখনও ব্রিটিশ আমলে নির্মিত প্রায় ২শ’ বছরের পুরনো অবকাঠামো জরাজীর্ণ অবস্থায় বিরাজ করছে। ব্রিটিশ আমলে নির্মাণাধীন চুনসুরকি দিয়ে তৈরি এই ভবনগুলো যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে।
সান্তাহার রেলওয়ে জিআরপি থানা ভবন, রেলওয়ে নিরাপত্তা ভবন, স্টেশনমাস্টার ভবন, পার্শ্বেল গুদাম, রেলওয়ে পোস্ট অফিস ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে, যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও একটু বৃষ্টি হলে ভবনগুলোর ছাদ চুয়ে পানি পড়তে থাকে, ফলে মূল্যবান কাগজপত্রসহ আসবাব পত্রগুলো ভিজে একাকার হয়ে যায়। এই জংশন স্টেশনটির বিভিন্ন অব্যবস্থা অনিয়ম নোংরা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশে যাত্রী সাধারণকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বিশেষ করে যাত্রীদের ব্যবহৃত পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়াও চার নম্বর প্লাটফরমে একটি পানির ট্যাপ রয়েছে তাতে সবসময় পানি পাওয়া যায় না। উত্তরাঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এ জংশন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকে।
প্লাটফরমগুলোতে পুরো টিনসেড না থাকায় যাত্রী সাধারণকে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ট্রেনে ওঠানামা করতে হয়। টিনসেডগুলো ঝাঁজরা হওয়ার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়তে থাকে। ফলে যাত্রীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই স্টেশনটির উপর দিয়ে প্রতিদিন আন্তঃনগর এক্সপেস, ব্রডগেজ, মিটারগেজ এবং ব্রডগেজ লোকাল ও সাধারণ মেইলসহ সর্বমোট ৩০ টি ট্রেন চলাচল করে।
স্থানীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় লোকাল ও মেইল ট্রেন ছেড়ে দেয়ার পরেও শুধু আন্তঃনগর ট্রেন থেকে ২০১৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সান্তাহার রেলস্টেশন থেকে আয় হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৭ টাকা। অথচ যাত্রী সাধারণের চলাচলের কোন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পায়নি। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্বহীনতার কারণে সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগারে বসার ব্যবস্থা নেই। এছাড়া ৫টি প্লাটফর্ম মিলে মাত্র ১১টি সিমেন্টের চেয়ারের মাধ্যমে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে যা যাত্রীদের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। যার ফলে যাত্রীদের কাক্সিক্ষত ট্রেনের জন্য পাটফরমে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। যাত্রীদের জন্য ছোট ছোট ২টি পুরুষ ও মহিলা বিশ্রামাগার থাকলেও মহিলা ২টি বেঞ্চ। ময়লা আবর্জনা ও টয়লেটের গন্ধে বিশ্রামাগারের নাকে রুমাল চেপেও বসে থাকা যায় না। পুরুষ বিশ্রামাগারটি নিরাপত্তাদের অফিস রুম বানানো হয়েছে। অপরদিকে ২টি পুরুষ ও মহিলা বিশ্রামাগার রয়েছে সেখানে প্রথম শ্রেণীর যাত্রী ছাড়া অন্যকোন যাত্রী প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়াও এক সময় স্টেশনে টিকিট ছাড়া প্রবেশ নিষেধ ছিল। এখন ঐ নিয়ম আর মানা হয় না। প্লাটফরমের আশপাশে অবাঞ্ছিতদের ত্যাগ করা মলমুত্র স্টেশনের পরিবেশ কলুষিত করে রাখে।
স্থানীয় এলাকাবাসীসহ যাত্রীসাধারনের অনুরোধ সান্তাহার রেল ষ্টেশনে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করলে এ ষ্টেশনটি তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে।