বাংলার রাজধানীখ্যাত পুন্ড্রনগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ‘‘কটকটি” ও তার ইতিহাস
শুধু ঐতিহ্য নয় স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপায় দেশ বিখ্যাত মহাস্থানের কটকটি
মোঃ ফাহিম আহম্মেদ রিয়াদ (বগুড়া লাইভ): বগুড়ায় এলেই অন্য জেলার মানুষের কাছে প্রধান আকর্ষণ প্রাচীন বাংলার রাজধানীখ্যাত পুন্ড্রনগরী তথা মহাস্থানগড় দেখা। মহাস্থানের ইতিহাস ও ঐতিহ্য যেমন পরিচিত, তেমনি যারা এখানে ঘুরতে আসেন তাদের হাতে ইতিহাসের কোনো ঝুলি না উঠলেও ওঠে কটকটির একটি প্যাকেট।
মহাস্থানগড় ও জাদুঘর দেখতে যারা আসেন তাদের প্রায় সবাই হযরত শাহ সুলতান মাহীসওয়ার বলখী (রহ.)-এর মাজার পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে তারা অবশ্যই কটকটি কেনেন। কারণ এখানকার ঐতিহ্যের সঙ্গে কটকটি নিবিড় ভাবে জড়িয়ে গেছে।
কটকটি দেখতে চারকোনা বিস্কুট আকৃতির শুকনো মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার। এটিই এখন মহাস্থানের ঐতিহ্যের একটি অংশ। খাবারের তালিকায় উপাদেয় একটি নাম এখন মহাস্থানের কটকটি। মহাস্থানের কটকটি বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে এখন প্রিয় খাবার, কিন্তু মহাস্থান ও এর আশপাশের মানুষের কাছে তা অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপায়। স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহের উপায়ও এই কটকটি।
স্থানীয় বিক্রেতারা জানান, “সপ্তাহের অন্যন্য দিনের তুলনায় শুক্রবার কটকটি বেশী বিক্রি হয়। প্রতিদিন এখানে গড়ে প্রায় পৌনে ২ লাখ টাকার কটকটি বিক্রি হয়।”
এ জন্য মহাস্থানেই স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছে অনেক কটকটি তৈরির কারখানা। হযরত শাহ সুলতান মাহীসওয়ার বলখী (রহ.)-এর মহাস্থানে আগমনের পর এখানে প্রাচীন সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে। এরপর তিনি যখন এখানে ধর্ম প্রচার করে মারা যান, তারপর এলাকার মানুষ তার মাজারে নিয়মিত জিয়ারত করতে যান। সেই সময় থেকেই মহাস্থানের কটকটির প্রচলন শুরু হয়।
কটকটি নামটি কেনো জানতে চাইলে স্থানীয় প্রবীন ব্যবসায়ী লাল মিয়া বলেন, “কটকটি আমার বাপ-দাদার আমল থেকে আবিষ্কার হইছে। সে সময় চালের আটা পানিতে মেখে খামির তৈরি করার পর তা বর্গাকারে কেটে কড়া রোদে শুকানো হতো। ভালোভাবে শুকিয়ে যাওয়া দ্রব্যকে স্থানীয়ভাবে কটকটা শুকনা বলা হয়। যেহেতু ছোট ছোট বর্গাকার খামিরও কটকটা হয়ে যেত, তাই এর নাম দেওয়া হয় কটকটি।”
কটকটি কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, “আমি এখানে মাজার জিয়ারত করতে আসসি। কটকটি কিনতেছি বাসায় ছেলে মেয়ে আছে তাদের জন্য। কটকটি পেলে তারা খুশি হবে।”
মহাস্থানের প্রসিদ্ধ কয়েকটি কটকটি বিক্রয়কেন্দ্র ‘লালমিয়ার কটকটি’, ‘হামু মামা কটকটি ঘর’, ‘চায়না কটকটি’, ‘জিন্না কটকটি ভান্ডার’ সহ আরও অন্যান্য বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। মহাস্থানে কটকটি তৈরির জন্য স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল কারখানা। এসব কারখানায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০ মণ কটকটি তৈরি হয়। আর মহাস্থানের বাসস্ট্যান্ড, মাজার গেট, গড়, ঈদগাহ মাঠ, জাদুঘর ও ডাক-বাংলোর আশপাশের প্রায় ৫০টি ছোট-বড় দোকানে সেসব কারখানার কটকটি বিক্রি হয়। গ্রামীণ এলাকায় এখনো অনেক ক্ষুদ্রশিল্প আছে যার ওপর নির্ভরশীল শত শত পরিবার। এমনই এক শিল্প মহাস্থানের কটকটি। পর্যটকেরা মহাস্থানগড় পরিদর্শনে এসে দেশ খ্যাত মহাস্থানের কটকটি না নিয়ে গেলে তাদের এবং পরিবারের মনে অতৃপ্তি থেকেইে যায়।