নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবাঘা হাটে চার ঘণ্টায় সোয়া কোটি টাকার মাছ বিক্রি
উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের এ হাটের নাম রণবাঘা। নন্দীগ্রাম উপজেলার একটি মাত্র এই আড়তে প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় সোয়া কোটি টাকার মাছ।
মাত্র চার ঘণ্টার বাজার। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের এ হাটের নাম রণবাঘা। নন্দীগ্রাম উপজেলার একটি মাত্র এই আড়তে প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় সোয়া কোটি টাকার মাছ। নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মাছের বাজার। সেখানে বড় দুটি টিনের চালের নিচে প্রতিদিন সারিবদ্ধভাবে মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। সূর্য ওঠার আগেই লম্বা লাইন ধরে আসেন মাছ ভর্তি ট্রাক-লরি, ভটভটি। দূরদুরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন পাল্লার ওপর। পছন্দের মাছ কিনতে শুরু হয় ব্যাপারীরা দাম হাঁক। প্রতি পাল্লা মাছ বিক্রি করতে কিছুক্ষণ চলে দর কষাকষি। সর্বোচ্চ দরদাতার হাতে তুলে দেয়া হয় সেই মাছ। এভাবেই প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত আড়ৎ জুড়ে এভাবেই চলে বেচাকেনা।
প্রতিদিনই রাস্তায় মাছভর্তি সারিবদ্ধ যানবাহন। মাঝখানে ফাঁকা রেখে আড়তের চারপাশে গড়ে তোলা হয়েছে অর্ধশতাধিক ঘর। পুরো অংশে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে ইট। আড়ৎ চলাকালে ভেতরে পা ফেলার জায়গা থাকে না। এসব আড়ৎ ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন খাবারের দোকান। এই আড়তে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ আসে। এ মাছ আবার রংপুর, ঢাকা, বগুড়া, সিলেট, জামালপুর জেলারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা এই বাজারে মাছ কিনতে আসেন। এজন্য দূরের জেলার ছোট-বড় পাইকাররা আগের দিন রাতেই হাজির হন রণবাঘা মৎস্য আড়তে। তারা মাছ কিনে বাস-ট্রাক, পিকআপ বা ভ্যানে করে নিয়ে যান নিজ নিজ গন্তব্যে। রণবাঘা মাছ আড়তের ব্যবসায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম জানান, ৩৩ বছর ধরে এই মাছের আড়ৎ চলছে। এখানে প্রায় ২০ জন আড়ৎদার রয়েছেন। প্রতিদিন শতাধিক ব্যাপারী এখানে মাছ কিনতে আসেন। এখানে প্রায় দুই শতাধিক কর্মচারী ও শ্রমিক কাজ করেন। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়ভাবে চাষ করা দেশি-বিদেশি মাগুর, শিং, কৈ, পাঙ্গাস, কাতল, করপু, সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, বিদেশি পুঁটিসহ প্রায় ৩০ জাতের মাছ এই বাজারে পাওয়া যায়। এসব মাছ বগুড়ার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি হয়ে থাকে। মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম উপজেলায় ৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি মালিকানা পুকুর আছে। এসব পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ হয়ে থাকে।
অন্যদিকে ওই আড়তের সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই শতাধিক পরিবার তাদের সংসারের খরচ চালিয়ে আসছে চার ঘণ্টার বাজারে কাজ করে। স্থানীয় মাছচাষি মান্না আতোয়ার জানান, তার নিজস্ব একটি পুকুর আছে। তিনি সেই পুকুরে নিয়মিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে থাকেন। মূলত তিনি শখের বসে মাছ চাষ শুরু করলেও লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে তিনি বাণিজ্যিক চিন্তায় চাষ করছেন। বর্তমানে তার পুকুরে পাঙ্গাস, বিদেশি মাগুর এবং তেলাপিয়া মাছ আছে। মাস খানেক পরেই তিনি মাছগুলো বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।
কথা হয় আড়ৎদার এলাহী বস, রিগেন, মোকাব্বেলের সঙ্গে, তারা জানান, প্রতিদিন এই মাছের আড়তে লাখ লাখ টাকার মাছ আড়তে বেচাকেনা হলেও এ বাজারের উন্নয়ন হয়নি। একটু বৃষ্টি হলেই শেড দিয়ে পানি পড়ে। নেই পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। তারা আরো বলেন, বড় বড় মাছের জন্য এ আড়তের খ্যাতি দেশজুড়ে। বাজার ইজারাদার ভিপি সাহীন জানান, রণবাঘা বাজার অনেক পুরাতন। এখানে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে যে সব মাছ ব্যবসায়ীরা আসেন তাদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা আছে। সেই সঙ্গে এই বাজারের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন করার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
সুত্রঃ দৈনিক মানবজমিন