স্মৃতির মণিকোঠায় এখনও রয়ে গেছে বগুড়া কারুপল্লী
আদিম মানুষের আজব গুহা ছিল আমাদের কাছে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার এক অন্য নাম
১৯৯৪ সালের দিকে আমাদের প্রাণের বগুড়া শহরে গড়ে উঠলো “কারুপল্লী”। আমার মনে হয়না, ওই সময় এমন কোন মানুষ ছিল না যারা, একবার হলেও কারুপল্লী ঘুরতে যায়নি।
বগুড়া শহরের নওয়াব পরিবারের একজন সদস্য ৮০’র দশকের শুরুতে নওয়াব প্যালেসের একাংশকে সৃষ্টিশীল শিল্পকর্ম স্থাপনের জন্য লিজ দেন বগুড়ার কৃতিশিল্পী আমিনুল করিম দুলালকে। শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা (বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠ স্কোয়ার) থেকে সামান্য পূর্ব দিকে হাঁটা পথের দূরত্বে নওয়াববাড়ি সড়কের ধারেই স্থাপিত হয় শিল্পীর স্বপ্নের শিল্পকর্মের স্থাপনা। নাম দেয়া হয় কারুপল্লী। শিল্পী তার প্রতিটি কাজ এতটাই দৃষ্টিনন্দন করে তুলে ধরেন যা কয়েক মাসের মধ্যে দেশের প্রতিটি স্থানের লোকের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। বগুড়ায় কেউ বেড়াতে এলেই কারুপল্লী দেখা রুটিনের মধ্যে থাকে।
আদিম মানুষের আজব গুহা ছিল আমাদের কাছে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার এক অন্য নাম। প্রবেশপথ গুহার মতো। অন্ধকার সুড়ঙ্গে ঢুকে হালকা বাতির (ডিম লাইটের মতো) মধ্যে একে একে চারটি কক্ষে প্রবেশ করতে হয়। এসব কক্ষে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সীমিত আলোয় শিল্পকর্ম স্থাপিত হয়। ক্লাসিক্যাল আবহ সঙ্গীতের মধ্যে স্টেরিও সাউন্ডে ধারা বর্ণনায় আদিম মানুষ থেকে কৃষিসভ্যতা হয়ে বর্তমান সভ্যতার ধারা প্রদর্শিত হয়। আজবগুহার প্রবেশ পথে ওপরে আদিম মানুষের হাতে বড় পাথরের বিশাল ভাস্কর্য যাতে লেখা ছিল দাও ফিরে সেই অরণ্য ।
বিশাল হাতি, জিরাফ, ঘোড়া, হা করা বাঘ, বক পাখি, শাপলা পুকুর,চিড়িয়াখানা পুকুর ভরে মাছ। এ যেন এক জীবন্ত চিড়িয়াখানা। শিল্পী আমিনুল ইসলাম এর কারুশিল্পের ছোঁয়ায় এটা ছিল এক অন্য রকম ভিন্ন স্বাদের ভুবন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই সব দিন এখন শুধু স্মৃতি মাত্র।