উপজেলাকাহালু উপজেলা

দুঃখ-দুর্দশার শেষ কোথায় কাহালুর দধি সাগর আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের

সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয়েছিলো ১৮০ টি ঘর। ২ বছর আগে ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানকার প্রায় ১০ টি ঘর। এখানে ছিলো প্রায় ১৮ টি বাথরুম। বর্তমানে এই বাথরুমের একটিও ব্যবহারের যোগ্য নয়।

বগুড়া লাইভঃ  বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা দধি সাগর আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা খুবই কষ্টে রয়েছেন। সরোজমিনে না দেখলে বোঝার উপায় নেই এই আবাসনে বসবাসরত হতদরিদ্র মানুষ গুলোর করুণ পরিণতির দৃশ্য। অভাব-অনটন আর দুঃখ কষ্ট যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। দীর্ঘ কয়েক বছর আগে দধি সাগর পুকুরটির চারিধারে ভূমিহীনদের জন্য সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয়েছিলো ১৮০ টি ঘর।

২ বছর আগে ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানকার প্রায় ১০ টি ঘর। এখানে ছিলো প্রায় ১৮ টি বাথরুম। বর্তমানে এই বাথরুমের একটিও ব্যবহারের যোগ্য নয়। টিন দিয়ে নির্মাণ করা আবাসন প্রকল্পের এখানে যত গুলো ঘর আছে প্রায় সব গুলোরই এখন জীর্ণদশা। এই আবাসনের মানুষের জন্য দধি সাগরের পাড় নিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তাটি বর্তমানে পুকুর গর্ভে বিলীন। পুকুরে নির্মাণ করা সব কটি ঘাটই ভেঙ্গে যাচ্ছে সংস্কারাভাবে। দধি সাগরের পাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন ঘর গুলোরে কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। গাইড ওয়াল নির্মাণাভাবে খুকই ঝুঁকিপূর্ণ এই ঘর গুলো। এখানকার মানুষের বসবাসেরই শুধু কষ্ট নয় জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রেও তারা রয়েছেন মহা দুঃখ-কষ্টে। এখানকার কেউ ভিক্ষুক আবার কেউ দিন মজুর ও শ্রমিক। এখানে বসবাসরত সরারই রয়েছে অভাব-অনটন।

সেখানকার হাসিনা বেগুম (৬০) তিনি জানান, আমি বয়সের ভাড়ে ঠিকমত চলাফেরা করতে পারিনা। দু-সন্তান থাকলেও তাদের অভাব-অনটনের কারনে আমাকে কিছু দিতে পারেনা। এই বৃদ্ধ বয়সে আমি এখন কি করে চলি। চেয়ে চিন্তে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছি। এখানে বসবাস করছেন আবু বক্কর ও তার স্ত্রী মরিয়ম। তার এক ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। সন্তান তাদের কোনোই খোজ-খবর নেয়না। তার উপর মাথার উপর চেপে বসেছে স্বামী পরিত্যাক্তা কন্যা। তার কন্যারও সন্তান রয়েছে দুটি। কন্যা ও এই বৃদ্ধ দম্পতি মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও সংসার চলেনা ঠিকমত।

নয়ন চন্দ্র (৭০) স্ত্রীকে নিয়ে এখানে বসবাস করছেন। তাদের এক কন্যার বিয়ে হয়েছে। একমাত্র ছেলে বিয়ে করে শশুড় বাড়িতে রয়েছেন। এই বৃদ্ধ দম্পতিকে দেখাশুনার মত কেউ নেই। বয়সের ভাড়ে তাদের শরীর চলেনা ঠিকমত। ভিক্ষা করতে বের হলে তাদের পেটে দু-মুঠো ভাত উঠে। পথে ঘাটে বের না হলে তাদের থাকতে হয় অনাহারে।

মজিবর (৭০) ও তার স্ত্রী মাজেদা স্বামী পরিত্যাক্তা এক কন্যাকে নিয়ে এখানে বসবাস করছেন। মজিবর বয়স্কো ভাতা পেলেও তা দিয়ে পরিবারের ৪ সদস্যের আহার জুটেনা। তাই বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ বয়সে তাকে ভিক্ষা করতে হয়। মমতাজ বেগম এখানে বসবাস করেন। তার স্বামী লোকমান রিক্সা চালাতো। ৬ মাস আগে সড়ক দুর্ঘটায় তার ডান পা ভেঙ্গে যায় । স্বামীর চিকিৎসা করতে যা অর্থ ছিলো সবই ফুরিয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার অভাবে লোকমান এখন পঙ্গু। তাদের ঘরে রয়েছে কন্যা সন্তান। সংসার চালাতে মমতাজ মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। তারপরেও স্বামীর পঙ্গুত্ব তাকে পিড়া দিয়ে বেড়াচ্ছে।

এখানে আরো আছেন হাছেন আলী (৭৫) ও স্ত্রী আবিসহ বেশ কয়েকজন। তারা ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান। এখানে যে, সকল শিশুরা রয়েছে তারা পিতা-মাতার অভাব-অনটনের কারনে শিক্ষা-দিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ছে। অনেকে শিশুকালেই ঝুকিপূর্ণ কাজে প্রক্ষশ করছে। এব্যাপারে উপজেলা সমবায় অফিসার মির্জা জাকিরের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে বিভাগীয় সমবায় অধিদপ্তরের পরিচালক পর্যন্ত অবগত রয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আরাফাত রহমান জানান, প্রায় ২ মাস আগে আবাসন প্রকল্পের বসবাসের অযোগ্য ঘর গুলোর ছবিসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি। নির্বাচনের কারনে বিষয়টি ঝুলে রয়েছে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button