বগুড়ার ইতিহাসশিবগঞ্জ উপজেলা

ইতিহাসের পাতায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো মহাস্থানগড়!

বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বছরেরও বেশি পুরনো এক নগরী ‘মহাস্থানগড়’৷ বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে প্রাচীন এই প্রত্নস্থানটির অবস্থান৷


আসুন জেনে নেওয়া যাক মহাস্থানগড়ের বিভিন্ন স্থাপনা এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে

প্রাচীন দুর্গ নগরী
চারপাশে প্রাচীর ঘেরা প্রাচীন এক দুর্গ নগরী মহাস্থানগড়৷ বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে নগরীর ভেতরে ও বাইরে নানান স্থাপনার সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা৷

প্রাচীন রাজধানী শহর
এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত বাংলাদেশের সবচাইতে প্রাচীন রাজধানী শহর মহাস্থানগড়৷ কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থানটি পরাক্রমশালী মৌর্য, গুপ্ত এবং পাল শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল৷ পরবর্তীতে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী হয় এটি৷

মহাস্থানগড়ের প্রবেশদ্বার
বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে মহাস্থানগড়ের কয়েকটি প্রবেশদ্বার আবিষ্কার হয়েছে৷ এগুলো হলো উত্তরপাশে ‘কাঁটা দুয়ার’, পূর্ব পাশে ‘দোরাব শাহ তোরণ’, দক্ষিণে বুড়ির ফটক এবং পশ্চিমে ‘তাম্র দরজা’৷

শাহ সুলতান বলখীর মাজার
মহাস্থানগড়ের ঠিক আগেই রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বলখী মহীসওয়ারের মাজার৷ কথিত আছে এ অঞ্চলের জনগণকে রাজা পরশুরামের অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে আফগানিস্তানের বলখ প্রদেশ থেকে মাছের পিঠে চড়ে এখানে এসেছিলেন তিনি৷ ১২০৫-১২২০ খ্রিস্টাব্দে পরশুরামের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয়৷ যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন৷

মহাস্থানগড় জাদুঘর
নানান প্রত্ননিদর্শন সমৃদ্ধ মহাস্থানগড় জাদুঘর ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত৷ মহাস্থানগড়ে বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে এ জাদুঘরে৷ রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে জাদুঘরটি৷

গোবিন্দ ভিটা
মহাস্থানগড় জাদুঘরের সামনে করতোয়া নদীর বাঁকে অবস্থিত গোবিন্দ ভিটা৷ এটি মূলত একটি প্রাচীন মন্দির৷ খ্রিস্টীয় ১২শ-১৩শ শতকে রচিত সংস্কৃতি গ্রন্থ ‘করতোয়া মহাত্ম’-তে এ মন্দিরটির কথা উল্লেখ আছে৷ এখানে সর্বপ্রথম ১৯২৮-২৯ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে প্রত্নতাত্তিক খননের ফলে খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের নানান নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে৷

জিয়ৎ কুণ্ড
মহাস্থানগড়ের ভেতরে বড় কূপের নাম জিয়ৎ কুণ্ড৷ কথিত আছে, এই কূপের পানি পান করে রাজা পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত৷

পরশুরামের প্রাসাদ
জিয়ৎ কুণ্ডর পাশেই একটি প্রাসাদের ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা৷ ঐতিহাসিকদের মতে এটি হিন্দু নৃপতি পশুরামের প্রাসাদ৷

বেহুলার বাসরঘর
এর আরেক নাম গোকুল মেধ৷ মহাস্থানগড় থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গোকুল গ্রামে অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটি৷ ঐতিহাসিকদের মতে, এটি আনুমানিক সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত৷ ইট নির্মিত এ স্তূপটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং তিনকোণ বিশিষ্ট৷ খননের ফলে এ স্থাপনাটিতে ১৭২টি কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে৷

ভাসু বিহার
মহাস্থানগড় থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ভাসু বিহারের অবস্থান৷ ১৯৭৩-৭৪ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে জায়গাটিতে দুটি মাঝারি আকৃতির বিহার এবং একটি মন্দিরের স্থাপত্তিক কাঠামো আবিষ্কৃত হয়৷ আরও মেলে আট শতাধিক প্রাচীন নিদর্শন৷

বিহার ধাপ
ভাসু বিহার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিহার ধাপ৷ স্থানীয়ভাবে এটি তোতারাম পণ্ডিতের ধাপ নামেও পরিচিত৷ বিভিন্ন সময়ে খনন করে এখানে একটি বৌদ্ধ বিহার, একটি বৌদ্ধ বিহারের অংশবিশেষ, দুটি বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষসহ নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান মেলে৷

সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী
২০১৫ সাল থেকে সার্ক কালচারাল সেন্টার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কোনো একটি দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলকে সার্কের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে আসছে৷ সার্কভুক্ত দেশগুলোর ইংরেজি নামের আদ্যক্ষরের ভিত্তিতে দেশগুলোর স্থান বেছে নেওয়া হয়৷ এ জন্য আফগানিস্তানের বামিয়ানের পর ২০১৬ সালে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ছিল মহাস্থানগড়৷

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button