ধুনট উপজেলা
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বহুল আলোচিত বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর
বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের প্রকৃত নামঃ ফেরদৌস জাহাঙ্গীর। ফেরদৌস জাহাঙ্গীর ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলায় বনানীগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে বেড়ে উঠেন ঢাকার ইব্রাহিমপুরে ১৩১/১ নং আদর্শপল্লীর বাসায় তাহাঁর মায়ের সঙ্গে।
শিক্ষাজীবনঃ ছাত্র হিসেবে জাহাঙ্গীর ছিলেন তুখোড় মেধাবী।১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাঁচটি লেটার সহ স্টার মার্ক নিয়ে পাশ করেন। অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে স্কুল পেরোনোর পর ভর্তি হয়েছিলেন তেজগাঁও কলেজে। পড়াশোনা’র পাশাপাশি নাচ,গান,কবিতা আবৃত্তি, নাটক সর্বক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর ছিলেন অদ্বিতীয়।
জাহাঙ্গীরের গর্ভধারিণী মা গর্ব করে বলতেন “জাহাঙ্গীর বাংলার দ্বিতীয় নজরুল”।
সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পদার্পণঃতেজগাঁও কলেজে অধ্যয়নরত কালে কাফরুল এলাকার লিটন ও মাসুম নামের দুই যুবকের সাথে বিরোধ বাঁধে জাহাঙ্গীরের। বিরোধের এক পর্যায়ে তাদের ছুরিকাঘাত করে বসেন জাহাঙ্গীর। এ ঘটনার জের ধরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জীবনে এই একবারই গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। একুশ দিন হাজত বাস করে ছাড়া পান। কিন্তু এই একুশ দিনের হাজতবাসে বদলে গেছে অনেক কিছুই। একুশ দিনে তার ভেতরকার তুখোড় মেধাবী ছেলেটি বনে গেছে এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। একুশ দিনে ফেরদৌস জাহাঙ্গীর হয়ে উঠেছে কালা জাহাঙ্গীর।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে থেকে অন্ধকার জগতে পথচলা শুরু হয় এক নতুন গ্যাংস্টারের, কালা জাহাঙ্গীর। খুব অল্প সময়ের মধ্য দিয়ে দুর্ধর্ষ সব কিলিং মিশনে অংশ নিয়ে ও তার মেধার জোরে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষে উঠে আসেন তিনি। নৃশংস সব গ্যাংস্টারদের নিয়ে গড়ে তুলেন নিজের দল ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’। এরপর আন্ডারওয়ার্ল্ডে রদবদল হলে যোগ দেন ফাইভ স্টার গ্রুপে, এখানে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে আরেক কুখ্যাত গ্যাংস্টার পিচ্চি হান্নানের সাথে। এসময় রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন কালা জাহাঙ্গীর। দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করেন অপরাধ জগতের সব শাখায়।
১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ঢাকার চাঁদাবাজির অধিকাংশই তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। দেশের সবচেয়ে বেশী অবৈধ অস্ত্রের মজুদও ছিল তার কাছেই। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে কিসলু হত্যার মধ্য দিয়ে পেশাদার খুনে হাতেখড়ি হয় কালা জাহাঙ্গীরের। এরপর একে একে তার হাতে খুন হতে থাকে ওয়ার্ড কমিশনার, আইনজীবী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং নামকরা ব্যবসায়ীও। সেসময়ে ঢাকা শহরে অধিকাংশ চাঞ্চল্যকর খুনগুলোর হোতা ছিলেন জাহাঙ্গীর।
পিচ্চি হান্নানের আর কালা জাহাঙ্গীর একসাথে সরাসরি অংশ নেন কমিশনার শাহাদাত, এডভোকেট হাবিব মণ্ডল ও আদালত পাড়ায় মুরগী মিলনের কিলিং মিশনে। তবে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা ঘটনাটি ছিল কমিশনার সাইদুর রহমান নিউটন হত্যা।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন আট নং ওয়ার্ডের কমিশনার নিউটন নিজেই ছিলেন প্রবল ক্ষমতাধর এক নেতা। নিউটনের নির্বাচিত মিরপুর এলাকা নিয়ে তার সাথে বিরোধ চলে আসছিলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সাথে। এর চূড়ান্ত রূপই দেখা যায় ১০ই মে। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে নিউটন হত্যার মধ্য দিয়ে।
বাংলাদেশ সরকার ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর যে তালিকা প্রকাশ করে তাতে, কালা জাহাঙ্গীরের নাম ছিল সবার শীর্ষে। এরপর র্যাব গঠন এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের টালমাটাল অবস্থায় ধীরে ধীরে আত্মগোপনে চলে যান জাহাঙ্গীর। তার অন্তর্ধান সম্পর্কে রটতে থাকে একের পর এক গুজব।
দুঃখিত তাহাঁর সম্পর্কে আর কিছু জানতে পারি নাই…….