বগুড়ার ইতিহাস

বগুড়া সদর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বর্গত সুরেশ চন্দ্র দাসগুপ্ত মহাশয়-এর জীবনী


স্বর্গত সুরেশ চন্দ্র দাসগুপ্ত মহাশয় ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতাঃ হোমিওপ্যাথি ডাঃ অনন্তকুমার দাসগুপ্ত (যিনি ভারতের “কাশি” নামক স্থান হতে সপরিবারে বগুড়া’য় আগমন করে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন)।


শিক্ষাজীবনঃ সুরেশ চন্দ্র দাসগুপ্ত ছেলেবেলা হতেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জিলা স্কুল হতে কৃতিত্বের সহিত এন্ট্রান্স পাশ করেন। অতঃপর তিনি উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের জন্য কলকাতা গমন করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইনশাস্ত্রে বি.এল (গ্রাজুয়েশন) ডিগ্রী অর্জন করেন।


কর্মজীবনঃআইনশাস্ত্রে বি.এল (গ্রাজুয়েশন) ডিগ্রী অর্জন করে, তিনি বগুড়া’য় ফিরে আসেন এবং ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া বারে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। স্বল্প সময়ে তিনি আইনজীবী হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন।


রাজনৈতিক জীবনঃতৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী’র প্রতিবাদে নেতৃত্বদানকারী নেতা মহাত্মা গান্ধী’র আহবানে সাড়া দিয়ে, আইনপেশা পরিত্যাগ করে রাজনৈতিক আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের কবল থেকে দেশ ও জাতীর মুক্তির মহান ব্রত গ্রহণ করে,সর্বাত্মক সংগ্রামে শরিক হন।


তিনি ১৯১৯-১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বগুড়া সহ বর্তমান সারা বাংলাদেশে তার বক্তৃতার মাধ্যমে আলোড়ন সৃস্টি করেন এবং বগুড়া জেলায় গন আন্দোলন গড়ে তুলতে সমর্থ হন। তিনি ব্রিটিশ আইন অমান্য করে ১৯২০ এবং ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। কিন্তু মুক্তির মহান ব্রত কখনও পরিত্যাগ করেননি। তৎকালীন সময়ে অসহযোগ আন্দোলন এবং খেলাফত আন্দোলন একসংগে পরিচালিত হত। তৎকালীন সময়ে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের অবিসংবাদী নেতা ছিলেন। তাহাঁর সহযোগী হিসেবে যতীন্দ্রমোহন রায়। তিনিও উক্ত আন্দোলন বেগবান করতে সহায়তা করেন।


অবিসংবাদী নেতা হিসেবে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তায় তিনি ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত উক্ত পদে দায়িত্ব পালন করেন।


সুরেশ চন্দ্র দাসগুপ্ত ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় ব্যাবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন।


সম্পাদনাঃ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে কংগ্রেস দলের মুখপত্র “সাপ্তাহিক দেশের কথা” পত্রিকা যুগ্মভাবে সম্পাদনা করিতেন। উক্ত পত্রিকাটি তৎকালীন সময়ে বগুড়া শহরের বড়গোলা থেকে প্রকাশিত হত। পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে তিনি সুনাম অর্জন করেন। ডান-বাম পন্থী দ্বন্দ্বসংঘাতে “সাপ্তাহিক দেশের কথা” বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর তিনি নিজেস্ব সম্পাদনায় “সাপ্তাহিক করতোয়া” নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন। সাপ্তাহিক করতোয়া” বড়গোলা’র ব্যাংকিং এন্ড ট্রেডিং মেশিন প্রেস থেকে প্রকাশিত হত। এই পত্রিকার সহিত কবি রোস্তম আলী কর্ণপুরী সহ বগুড়ার অনেক উদিয়মান তরুন লেখক সম্পৃক্ত ছিলেন।


সুরেশ চন্দ্র দাসগুপ্ত মহাশয় ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়ায় ইহলোক ত্যাগ করেন।


লেখকঃ গোলাম জাকারিয়া কনক

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button