বগুড়ার ইতিহাস
বিখ্যাত বগুড়ার দই এর ইতিহাস

বগুড়ার দই নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে কমবেশি তোলপাড় হয়েছে কোন না কোন সময়। বিদেশ-বিভূঁইয়ে বগুড়ার দইয়ের স্বাদ কে নেয়নি! বৃটেনের রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকেও গিয়েছে বগুড়ার দই সেই ষাটের দশকের প্রথম ভাগে। পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বগুড়ায় এসে দইয়ের স্বাদ পেয়ে বৃটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠান এই দই। তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলী এ দইয়ের স্বাদ পেয়ে বগুড়া শহরে তাদের নওয়াব প্যালেসের এক কোনায় দই বানানোর জায়গা করে দেন পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে। বগুড়ার দই বনেদী সুখ্যাতি পেয়েছে অনেক আগেই। সারা দেশে বগুড়ার পরিচিতি ধরে রেখেছে এ দই; বিশেষ করে সরার দই। যদিও এখন মাটির নানা ধরনের পাত্রে এ দই বসানো হয় তারপরও সরার দইয়ের কদর আছেই এবং থাকবে।
বগুড়ার দইয়ের ইতিহাস বহু আগের। তবে এ দইকে সুখ্যাতি এনে দিয়েছে গৌর গোপাল চন্দ্র ঘোষ। বগুড়ার দইয়ের খ্যাতির কথা উঠলেই গৌর গোপালের নাম আসে। দেশ বিভাগের সময় ১৯৪৭ সালে গৌর গোপাল ভারত থেকে বগুড়া আসেন পরিবার নিয়ে। বগুড়া থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বর্তমানে শেরপুর উপজেলা সদরে তার আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নেন। দই বানানোর পদ্ধতি তার জানা ছিল। শুরু করেন দইয়ের ব্যবসা। শেরপুর থেকে দই বানিয়ে হেঁটে ভাড়ে করে আনতেন বগুড়া শহরের বনানী এলাকায়। দইয়ের সঙ্গে তিনি বানাতেন সরভাজা। এ সরভাজা এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় যে, ওই সময়ের জমিদারদের বাড়িতে সরভাজা সরবরাহের অর্ডার পেতে থাকেন গৌর গোপাল। সাধারণের মধ্যেও এ সরভাজার চাহিদা যায় বেড়ে। এ সরভাজাই গৌর গোপালকে এনে দেয় খ্যাতি। একটা সময় সরভাজাই সরার দই হয়ে খ্যাতির তুঙ্গে ওঠে। যে দইয়ের খ্যাতি বগুড়াকে পরিচিত করে দেশ ছেড়ে বিদেশেও। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দইয়ের এ সুখ্যাতিতে বগুড়ার মোহাম্মদ আলীর নওয়াব পরিবার গৌর গোপালকে ডেকে তাদের প্যালেসের জায়গা করে দেন। ষাটের দশকের শেষ ভাগ পর্যন্ত সেই গৌর গোপালের উত্তরসূরিদের ঘর ছিল। বগুড়ার এ মাটির দই এক সময় বৃটেন, আমেরিকা, ভারত ও পাকিস্তান যেত বলে জানা যায়। তারই ধারায় বগুড়ার দই জনপ্রিয়তা পেয়েছে ভারতে। পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে শেরপুরেই গড়ে তোলা হয় দইয়ের কারখানা। বগুড়ার দই বলতে আসলে শেরপুরকেই বোঝায়। তবে দেশীয় বাজারের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করতে পারলে এর মাধ্যমে প্রতিদিন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।