বগুড়ার ইতিহাস
বগুড়া জেলার কৃতিমান সাহিত্যিক মরহুমা রোমেনা আফাজ
বগুড়া জেলার কৃতিমান সাহিত্যিক মরহুমা রোমেনা আফাজ ২৭ ডিসেম্বর ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলা শহরে জন্মগ্রহন করেন। তাহার পিতা মরহুম কাজেম উদ্দিন আহম্মদ পুলিশ পরিদর্শক এবং মাতা আছিয়া খাতুন সাহিত্য অনুরাগী ছিলেন। তিনি তাহাঁর মাতা-পিতার দুই কন্যা এবং তিন পুত্র সন্তানের মধ্য জৈষ্ঠ্য ছিলেন।
শিক্ষাজীবনঃরোমেনা আফাজ শেরপুরে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে শেরপুর থেকে কৃতিত্বের সহিত ম্যাট্রীকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে সরকারি আজিজুল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।
বৈবাহিক জীবনঃমরহুমা রোমেনা আফাজ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ১৩ বছর বয়সে বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর উপজেলাধীন ফুলকোট গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান ডা: আফাজ উল্লাহ সরকার সাহেবের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মরহুম ডাঃ আফাজ উল্লাহ সরকার সাহেব বগুড়া ডেমাজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং বগুড়ার বিশিষ্ট সমাজসেবক ছিলেন।
বৈবাহিক জীবনে তিনি সাত পুত্র (অধ্যাপক মতিউর রহমান, জনাব মোখলেছুর রহমান-কানাডা প্রবাসী, জনাব মাহবুবুর রহমান-আমেরিকা প্রবাসী, জনাব মাজেদুর রহমান তাজু, জনাব মাহফুজ-উর রহমান দুলু-কানাডা প্রবাসী, মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান নিলু, জনাব মোন্তেজুর রহমান আঞ্জু এবং দুই কন্যা মরহুমা হেলেনা বেগম হেনা, জনাবা সেলিনা বেগম সপ্না) সন্তানের জননী ছিলেন।
সাহিত্য রচনাঃমরহুমা রোমেনা আফাজ মাত্র নয় বছর বয়স থেকেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। ” বাংলার চাষি” নামক প্রথম ছড়া লেখার মাধ্যমে তিনি সাহিত্য অংগনে প্রবেশ করেন। ছড়াটি কলকাতার “মোহাম্মাদী” পত্রিকায় প্রকাশ পায়। তারপর তিনি লিখেন ছোটগল্প, কবিতা, কিশোর উপন্যাস, গোয়েন্দা সিরিজ এবং রহস্য সিরিজ। তার সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ২৫০। তার মধ্য ৬ খানা উপন্যাস চলচ্চিএে রুপায়িত হয়েছে। সেগুলো হলো কাগজের নৌকা (১৯৬৫), মোমের আলো, মায়ার সংসার, মধুমিতা, মাটির মানুষ, দস্যু বনহুর।
সাহিত্যক্ষেত্রে তাহার অবদানঃ
উপন্যাসঃদেশের মেয়ে (১৯৬২), সোনালী সন্ধ্যা (১৯৬৪),হারানো মানিক (১৯৬৮), কাগজের নৌকা (১৯৬৫), কুন্তিবাঈ (১৯৬৬), জানি তুমি আসবে (১৯৬৬),শেষ মিলন (১৯৬৬), প্রিয়ার কণ্ঠস্বর (১৯৬৭),আলেয়ার আলো (১৯৬৭), সাগর সৈকত (১৯৬৭),অভিশপ্ত (১৯৬৮), লেখকের স্বপ্ন (১৯৬৮), নিয়তির চক্র (১৯৬৮), আলোক রশ্মি (১৯৬৯), ভোরের সূর্য (১৯৬৯), রুপালি পর্দা (১৯৭০), নীল আকাশ (১৯৭১), উত্তাল তরঙ্গ (১৯৭৬),মায়ার সংসার, কুমারী বধু, ঘূর্ণি হাওয়া, অভিশপ্ত জীবন, হূসনা, পরশমনি, বাসর রাতের স্বপ্ন, মাটির মানুষ, অনির্বাণ, পদ্ম কন্যা, স্বপ্ন সাধনা, মা ও মাটি, পারুল, প্রায়শ্চিত, মা ও মেয়ে, স্মৃতিরেখা, স্বয়ংবরা, আত্মহূতি, বিবর্তিত বসুন্ধরা, দুলালী, পাহাড়ী মেয়ে, লাইট পোষ্ট, বিদগ্ধা জননী, দুটি চোখ, ঝরা পাতা, খেয়াঘাট, ধূসর পৃথিবী, বড় ভাবি, বাশসী, ভুলের শেষে, পরিণতি, অভিসারিকা, সূর্যাস্তু, মধুর পরিচয়, হীরক খণ্ড, ফাঁসির মঞ্চে, বিষাক্ত তীর, প্রতিচ্ছবি, মধু, মিলন, বধূ।
কিশোর উপন্যাসঃমান্দি গড়ের বাড়ি, দস্যুরানী সিরিজ (১২টি), দস্যু বনহুর সিরিজ (১৩২ টি)।
সন্মাননাঃ১. ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ (রাজশাহী) কর্তৃক আয়োজিত আব্দুর রাজ্জাক স্মৃতি সাহিত্য পুরষ্কার (স্বর্ণপদক) লাভ করেন।২. ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের জরীপে বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখিকা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।৩. ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে যুব নাগরিক কমিটি, বগুড়া কর্তৃক গুনীশ্রেষ্ঠ পদক।৪. ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী,বগুড়া কর্তৃক গুণীজন সংবর্ধনা লাভ করেন।৫. ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ১৯৯২ বগুড়া লেখকচক্র থেকে এস.এম রাহী সাহিত্য পুরস্কার।৬. ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে শেরপুর সাহিত্যচক্র, বগুড়া কর্তৃক সাহিত্য পুরস্কার।৭. ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে জেলা প্রশাসন,বগুড়া কর্তৃক বগুড়া গ্রন্থমেলা গুণীজন সংবর্ধনা।৮. ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী,বগুড়া কর্তৃক সাহিত্য সম্রাজ্ঞী স্বর্ণমুকুট ।৯. ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া থিয়েটার থেকে বিশিষ্ট লেখিকা হিসেবে সংবর্ধনা১০. ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া ইয়ুথ কেয়ার কর্তৃক সংবর্ধনা।১১. ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া পরিবার পরিকল্পনা এসোসিয়েশন থেকে কার্যনির্বাহী প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে সংবর্ধনা।১২. ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে গোয়েন্দা সাহিত্য অনন্যা (ঢাকা) শীর্ষদশ পুরস্কার।১৩. ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে সবুজসংঘ বগুড়া গুণীজন সংবর্ধনা।১৪. ২০০০ খ্রিস্টাব্দে শহীদ দেওয়ান স্মৃতি সাহিত্য পদক।১৫. ২০০০ খ্রিস্টাব্দে রোটারি ক্লাব বগুড়া,বগুড়া কর্তৃক শুভেচ্ছা পদক।১৬. ২০০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সাহিত্যিকী (রাজশাহী) কর্তৃক রোমাঞ্চ সাহিত্য সম্রাজ্ঞী সুললন স্বাধীনতা পদক।১৭. ২০০১ খ্রিস্টাব্দে পাক্ষিক আলোক কর্তৃক একরাশ শুভেচ্ছা।১৮. ২০০১ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া পৌরসভা (ঐতিহ্যের ১২৫ বছর) কর্তৃক সাহিত্য পদক।১৯. ২০০১ খ্রিস্টাব্দে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র, ঢাকা কর্তৃক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও কথা সাহিত্য পদক।২০. ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ রাইটার্স ফোরাম একুশে পদক লাভ করেন।২১. ২০১০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক “স্বাধীনতা পদক” লাভ করেন।
তিনি ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলা শহরের জলেশ্বরীতলায় নিজ বাসভবনে পরলোক গমন করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাহাঁর অবদান স্মরনীয় করে রাখার জন্য বগুড়া পৌরসভা জলেশ্বরীতলায় নিজ বাসভবনে সংলগ্ন প্রধান সড়কটি “রোমেনা আফাজ” সড়ক নামে নামকরণ করেন।
তথ্য সংগ্রহেঃ গোলাম জাকারিয়া কনক