বগুড়া সদর উপজেলা

বগুড়ার করতোয়া ও বাঙ্গালী নদী এখন মৌসুমি শস্যক্ষেত্র



অবৈধভাবে যেখানে সেখানে বালি উত্তোলন, নির্বিচারে দখল আর দূষণে মরতে বসেছে বগুড়ার বাঙ্গালী ও করতোয়া নদী। পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে তলদেশ। শুষ্ক মৌসুমে নদীর দীর্ঘ বুকজুড়ে হচ্ছে চাষাবাদ।


কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করতোয়া ও বাঙ্গালী নদীতে দীর্ঘদিন ধরেই বোরো ধান চাষ করছেন কৃষকরা। জেলায় দুই নদীর কমপক্ষে ৬০ কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে ধান চাষের ব্লক।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলার মধ্যে করতোয়া নদীর মোট দৈর্ঘ্য ১০৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার পড়েছে শহরের ভেতরে। গ্রাম এলাকা হওয়ায় দূষণ-দখল কম হলেও বালি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে অস্বাভাবিক পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এই নদী। পলি পড়ার কারণে নদীর বুকে ধান চাষ বাড়ছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করতোয়া নদীটি বগুড়া শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোনায় বাঙ্গালী নদীতে মিশেছে। শহরের মধ্যে ১০ কিলোমিটারের প্রায় সম্পূর্ণটাই দখল ও দূষণে মৃতপ্রায়। আর শহর ও শরহতলির বাইরের অংশে প্রায় ৩০ কিলোমিটারজুড়ে ধান চাষ করছেন স্থানীয় চাষীরা।
অন্যদিকে নীলফামারী জেলার তিস্তা নদী থেকে সৃষ্টি হয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালীর ওপর দিয়ে বগুড়ায় প্রবেশ করেছে বাঙ্গালী নদী। বগুড়ার সোনাতলা, ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ঘাটে ঘোড়াসাগর নদীর সঙ্গে মিশেছে এটি।


১৮৩ কিলোমিটারের বাঙ্গালী নদীর উজানে অপরিকল্পিত বাঁধ, বালি উত্তোলন ও বর্ষাকালে ভাঙনের ফলে তলদেশে পলি জমেছে। শুষ্ক মৌসুমের আগেই পানিশূন্য হয়ে পড়ায় তলদেশ পরিণত হয়েছে শস্যক্ষেত্রে। বগুড়ার সীমানায় প্রায় ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার নদীর বুক এখন সবুজে ভরে গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়া শহরের দক্ষিণ মালতীনগর ও বনানী এলাকার করতোয়া নদীর উভয় পাশে চাষীরা কয়েকশ বিঘায় ধান চাষ করেছেন।


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শিবগঞ্জ, মহাস্থান, বাঘোপাড়া, শহরের মাটিডালি, শাখারিয়া, ফুলবাড়ী, বেজোড়া, শাজাহানপুর, শেরপুর উপজেলার খানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় করতোয়া নদীর বুকে ধান চাষ শুরু হয়েছে। আর বাঙ্গালী নদীর সারিয়াকান্দি উপজেলার সারিয়াকান্দি ব্রিজ এলাকা, আড়িয়ার ঘাট, নামাজখালী, হরিখালী, সজনপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় রয়েছে বোরো ধান।
বগুড়ার মাটিডালি এলাকার বাসিন্দা আবু তালেব জানান, নদীপাড়ের কৃষকরাই শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে চাষাবাদ করেন। মাটিডালি এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘায় এবার ধান চাষ হয়েছে। মাটিডালির উজানে ও ভাটিতে নদীতে ১০০-১৫০ বিঘায় বোরো চাষ হচ্ছে।


করতোয়া ও বাঙ্গালী নদীতে ধান চাষের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদও।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button